lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩
Last Updated 2023-04-26T12:31:50Z
অপরাধ

ঠাকুরগাঁওয়ে স্বপ্ন জগৎ চৌধুরী পার্কের আড়ালে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ

Advertisement

মোঃ মজিবর রহমান শেখ

সাধারণ মানুষ ও শিশুদের বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর জন্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আকচা ইউনিয়নের ঠাকুরগাঁও-রুহিয়া সড়কের পাশে নির্মাণ করা হয় স্বপ্ন জগৎ (চৌধুরী পার্ক) নামে একটি পার্ক। তবে পার্কটি ভ্রমনপিয়াসিদের কাছে কদর পাওয়ার পাশাপাশি অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আখড়াতেও পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্যে প্রেমিক-প্রেমিকার অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পার্কে একটি কক্ষে অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকায় হাতেনাতে যুবক-যুবতী সহ ৫ জনকে আটক করছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঐ পার্ক থেকে যুবক-যুবতী ও তাদের সহযোগিতা করার অভিযোগে আরো ৩ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো-  দিনাজপুর সদর উপজেলার শহিদুল ইসলামের ছেলে সোহান (২৭) । আর বাকি ৪ জন হলো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার। এদের মধ্যে ছিলো ১ যুবতী। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাকি ৪ জনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ রয়েছে যুবক-যুবতীদের একান্ত মুহূর্তে কাটানোর জন্য পার্কে একটি নিদিষ্ট কক্ষও রয়েছে। জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ মানুষ ও শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য কয়েক বছর আগে পার্কটি নির্মাণ করেন ঐ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার চৌধুরী। কিন্তু এরই মধ্যে এ পার্কে তরুণ-তরুণী ও প্রেমিক-প্রেমিকার অবৈধ মেলামেশার সুযোগ করে দিতেন তারা। বিষয়টি সবার জানা থাকলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীদের। পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বপ্ন জগৎ পার্কে অভিযান চালায় পুলিশের একটি টিম। এ সময় পার্কের ভেতর একটি কক্ষে অবৈধ কার্যক্রমে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ঐ যুবতী ও সোহান নামে যুবককে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদেরকে সহযোগিতা করার অভিযোগে পার্কে কর্মরত সহ আরো ৩ জনকে আটক করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় ৫ জনকে আটক করা হলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো: শামসুজ্জামান সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে স্বপ্ন জগৎ পার্কে ছুটে যান। সেখানেও বেশ কিছু ঘটনার আলামত পেলে সকলের উপস্থিতিতে আটককৃত ৫ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে ২ মাসের করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন তিনি। এলাকাবাসী জানান, পার্কে অসামাজিক কাজ সহ অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। পার্কের ভেতরে বেশ কিছু ঘর তৈরি করা হয়েছে , তাতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে। এসব কাজ বন্ধ না করা হলে ভবিষ্যতে এলাকার নতুন প্রজন্ম তথা যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে নিমজ্জিত হবে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কে বসে থাকে তরুণ-তরুণীরা। কেউ কেউ প্রকাশ্যে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। স্কুল চলাকালীন কিংবা বিকেলে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রেমিকার সঙ্গে পার্কে বসে আড্ডা দেয় প্রেমিকরা। অনৈতিক কাজের জন্য পার্কের পুকুর পাড় কিংবা পার্কের ঘর গুলো ব্যবহার করছে তারা।

নিয়ন্ত্রণহীন অসংযত কার্যকলাপে একদিকে যেমন তরুণ-তরুণীদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে এলাকার ভাবমূর্তি। ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। তাছাড়া পার্কে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষরা পড়ছেন বিব্রতকর অবস্থায়। লোকলজ্জার ভয়ে তাদের থাকতে হচ্ছে কোনঠাসা হয়ে। শহরতলীর এমন একটি স্থানে পার্কের সামাজিক পরিবেশ রক্ষা প্রশাসনের নজরদারির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্থানীয়রা।

জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বলেন, স্বপ্ন জগৎ পার্কের অবস্থা খুবই খারাপ। পার্কে বসে ছাতার ভেতর লুকিয়ে খারাপ কাজ করে প্রেমিক যুগল। সবচেয়ে লজ্জার বিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম পরে আপত্তিকর কাজ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ। আব্দুর জব্বার বলেন, পার্ক যেনো প্রেমখানা। এখানে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা আসে। প্রকাশ্যে চলে বেহায়াপনা, দেখার কেউ নেই। আমাদের মানসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।

পার্কে বেড়াতে আসা এক দম্পতি বলেন, একটু অবসর সময় কাটাতে পরিবার নিয়ে পার্কে আসলে বিপাকে পড়তে হয়। যে দিকেই চোখ যায় উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের অসামাজিক কার্যকলা দেখতে হয়। এ বিষয়ে পার্কের মালিক গোলাম সারোয়ার চৌধুরীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়।

তবে পার্কটিতে এমন ঘটনা এর আগে ঘটলেও জরিমানার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনা পার্কের মালিক গোলাম সারোয়ার চৌধুরী কিছুই জানেন না দাবি করলে তাকে সর্তক করা হয়। সর্তক না হলে পার্কটি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো: শামসুজ্জামান।