lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩
Last Updated 2023-07-02T11:29:11Z
জেলার সংবাদ

ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গী'র লাহিড়ী সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ

Advertisement

মোঃ মজিবর রহমান শেখ

 ঠাকুরগাঁওয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভূয়া মালিক সেজে সাব-রেজিস্ট্রারের যোগসাজসে প্রায় শতাধিক সংখ্যা লঘু পরিবারের ৭৬ একরের অধিক জমি রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বড়গাছী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, বাগমারা উপজেলার বাড়ীগ্রামের সরকার মো. মিজান এবং মোহনপুর উপজেলার খাঁড়ইল গ্রামের মামুন অর রশিদের নামে রেজিষ্ট্রি দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এ ঘটনার সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে লাহিড়ীহাট সাব-রেজিস্টার মোঃ শফি আকরামুজ্জামান সহ আমজানখোর ইউনিয়ন পরিষদের অনেকেই। এ ঘটনার পর থেকে জমির প্রকৃত মালিকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরোজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কোর্টপাড়া সীমান্ত। আর এ কোর্টপাড়া সীমান্তের, কোর্টপাড়া, গোয়ালপাড়া, আমতলা গ্রামের মৃত গনিরাম গনেশ, হেমানু পাল এবং ডোলরাম গণেশের ওয়ারিশগণ দীর্ঘদিন ধরে মালিকানা জমি ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি একটি সংঘবদ্ধ চক্র জমির মালিক সেজে এনআইডি ও ভূয়া কাগজ তৈরী করে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে ৭৬ একরের অধিক সম্পত্তি হস্তান্তর করেছেন। তথ্য অনুসন্ধানে আরও জানা যায় এই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা স্থানীয় প্রভাবশালী এক ইউপি সদস্যের দুই ছেলে, কেউ আবার সরকার দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত, আবার পঞ্চগড় জেলার জাকের পাটির এক নেতাও জড়িত আছেন এ ঘটনার সাথে। অপর দিকে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে গিয়ে জমি রেজিষ্ট্রির কাজে সহযোগিতাকারি মহড়ার (মুহুরী) কোন সেরেস্তার দেখা মেলেনি, এমন কি বাড়িতে গিয়েও তাদের সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনার পর থেকে সকলে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন তারা। আর জমির মালিকগণ জমি রক্ষায় গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দফতরে স্মারক লিপি প্রদান করেছেন। স্মারক লিপিতে উল্লেখ করেছেন সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা হলেন পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মসজিদ পাড়া মহল্লার তোফাজ্জল হক প্রধান তোফায়েল (৬৫), ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ঠকবস্তি পশ্চিম হরিনমারি গ্রামের শামসুল মেম্বারের ছেলে বকুল ইসলাম (৪৫) ও নাসিরুল ইসলাম (৪০), একই গ্রামের রহিম উদ্দীনের ছেলে শরিফ উদ্দীন শরিফ (৩৯), রত্নাই বাঁশবাড়ি গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে খোরশেদ আলম (৩৯), একই গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দীনের ছেলে মকবুল হোসেন (৬০), তারাঞ্জুবাড়ি গ্রামের পাগলার ছেলে কফিজুল ইসলাম বাবু (৪৫), রত্নাই মারাধর গ্রামের মৃত দিনওলির ছেলে নজরুল ইসলাম (৫২), কোটপাড়া গ্রামের মৃত বুধু মহনের ছেলে ভবানী পাল ওরফে হেন্ডেলু (৫০), আমজানখোর গ্রামের মৃত কারুরাম সিংহের ছেলে ভারত চন্দ্র সিংহ (৪০), রত্নাই মারাধর গ্রামের মৃত শশধর পালের ছেলে যতিন পাল (৫০), মাখন পালের ছেলে অরুন পাল (৪৫)সহ ১৮ জনের চেয়ে বেশি । বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের ভূক্তভোগী যতেন পাল বলেন, আমরা রেকডিয় সূত্রে জমির মালিক আমার ভোটার আইডি নকল করে কে বা কাহারা আমার জমি বিক্রি করে দিয়েছে। আমি এব্যাপারে কিছুই জানি না। পরে দলিল তুলে দেখি সত্যি সত্যিই দলিল হয়েছে। আরেক ভূক্তভোগী শ্রী কানু রাম পাল বলেন আমার মালিকানা জমি কে বা কাহারা বিক্রি করে দিয়েছে তা জানি না। আমরা আতঙ্কে আছি। কি করবো, কোন পথ খুজে পাচ্ছি না। সরকারের কাছে দাবী যারা এই কাজ গুলো করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবী জানাচ্ছি। একই কথা বলেন ধীরেন পাল সহ আরও অনেকে।

আমজানখোর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের ভূক্তভোগী কিশন পাল বলেন, চলতি মাসের ১২ জুন মঙ্গলবার পঞ্চড়ে রেজিষ্ট্রি শেষে আটোয়ারী হয়ে লাহিড়ী আসার পথে ৫০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়ে য়ায়। কিন্তু সেই টাকার মালিক এব্যাপারে কোন প্রকার অভিযোগ করেননি। বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে ধুমরোজালের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন অবৈধ টাকা বিধায় তারা কোন অভিযোগ করেননি। 

কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে ক্রয়কৃত জমির মালিকদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে একটি সূত্র বলছে তারা কখনো এলাকায় আসনেনি। তারা একটি কোম্পানির মালিক। হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃীষ্ট্রন ঐক্য পরিষদ আমজানখোর ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী জীতেন পাল বলেন, আমাদের এলাকায় কিছু ভূমিদস্যূ সংঘঠিত হয়ে হিন্দুদের রেকডিয় সম্পত্তি খতিয়ান সংগ্রহ করে এবং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এবং চেয়ারম্যানের ওয়ারিশন সার্টিফিকেট তৈরী করে ৭৪ একর জমি বিক্রয় করে দিয়েছে। রেকডিয় মালিক আমরা কেউ জানি না। আর সাব-রেজিষ্ট্রারের যোগসাজসে জমি গুলো রেজিষ্ট্রি হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের রামবাবুর ১০তলা ভবনে এবং পরবর্তীতে আরো ৯৮ একর জমি লাহিড়ীতে রেজিষ্ট্রী না হয়ে, পঞ্চগড়ে রেজিষ্ট্রি হয়েছে।  আমজানখোর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের মহেষ পাল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন নিজেদের অপকর্মঢাকতে বালিয়াডাঙ্গী থানায় সীল হারানোর নাটক করে সাধারণ ডায়েরী করেছে। আমজানখোর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আকালু জাল দলিলের কথা স্বীকার করে বলেন, আমারও কোন নাই, কারো কোন নাই, পরিষদেরও কোন নাই। যারা কাম করেছে, মনে করে জাল দলিল দিয়ে টাকা নিয়েছে, আমি তো বলতে পারি না। ঐ জিনিসটা কি আমি বলতে পারি ? ঐ দুই জন লোক টাকা পায়নি। ওরা এখন প্লান করে বেড়াছে। আর এটা মোবাইলে বলা ঠিক হবে না। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী সাব- রেজিষ্ট্রি অফিসের সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ শফি আকরামুজ্জামান অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এমপি সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন স্যার কত টাকা দিয়েছেন। বাইরে গিয়ে রেজিষ্ট্রির বিষয়ে বলেন, দরখাস্ত করছেন সে জন্য সেখানে যাওয়া   হয়েছে। আর ঠাকুরগাঁওয়ে এমপি সাহেবের জমি রেজিষ্ট্রির জন্য যাওয়া হয়েছিল।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফাতেহা তুজ জোহরা বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার  এব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি।