Advertisement
বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
বরিশালের বাকেরগঞ্জে নামের মিল থাকায় যৌতুক মামলায় পুলিশের ভুলের শিকার হন সিরাজুল ইসলাম (২৮) নামে এক মসজিদের ইমাম। তিন দিন কারাভোগের পর রোববার তিনি বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী
সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার তিনি জানান সে ঢাকায় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মেনহাজ হাওলাদারের ছেলে। ঈদুল আজহা উদযাপন করতে সিরাজুল বাড়িতে আসলে শুক্রবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করে বাকেরগঞ্জ থানায় এস আই কিবরিয়া।
মামলার প্রকৃত আসামি একই গ্রামের আরেক সিরাজুল ইসলাম- (৫৬) এটা আদালতে নিশ্চিত করার পর রোববার বিকাল ৫টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। ঈদের ছুটিতে আদালত বন্ধ থাকায় তাকে তিন দিন বিনাদোষে কারাভোগ করতে হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, তার পিতা ও প্রকৃত আসামি সিরাজুল ইসলামের পিতার নাম ও বংশ একই। তাদের ঠিকানাও একই গ্রাম। রোববার বেলা দেড়টার দিকে তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে বাকেরগঞ্জ থানার এসআই মো. কিবরিয়া। তিনি আরো জানান বাড়ি ও থানায় বসে একাধিকবার বুঝাতে চেস্টা করেছি প্রকৃত আসামি আমি নই, এএসআই কিবরিয়া ও ওসি সাহেবকে একাধিকবার বুঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই তারা আমার কথা বিশ্বাস না করে কোন যাচাই-বাছাই না করেই আমাকে জেল হাজতে পাঠায়। পরে জানতে পারেন সোনিয়া নামক এক গৃহবধূর যৌতুক মামলার আসামি তিনি। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার বিকালে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
সিরাজুল বলেন, গ্রেফতারের পর গ্রামের স্বজনরা মামলার কাগজপত্র তুলেন। এতে দেখা যায় আসামি সিরাজুল ইসলাম ছাড়া অন্য আসামিরা অচেনা। পরে গ্রামের মুরব্বিদের সহযোগিতায় খোঁজখবর নিয়ে আসল আসামি সিরাজুল ইসলামের সন্ধান পান। এই সিরাজের ছেলে হাসানের স্ত্রী সোনিয়া ২০১৯ সালে মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলার অপর দুই আসামি হলেন হাসান ও তার মামা ফারুক। এসব কাগজপত্র আদালতে দাখিলের পর নিরীহ সিরাজকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের চৌকিদার আব্দুর রাজ্জাক জানান, আসল আসামি সিরাজুল ইসলাম এলাকার জামাই। গ্রামে তার পরিচিতি নেই।
তিনি আরো বলেন, তিন বছর যাবত বাকেরগঞ্জ থানা থেকে তার কাছে যৌতুক মামলার ওয়ারেন্ট আসামি সিরাজের সন্ধান চাওয়া হচ্ছিল। তিনি আসামির পিতার নাম ও বংশের মিল অনুযায়ী ঢাকায় মসজিদের ইমাম সিরাজ ছাড়া অন্য কোনো সিরাজের সন্ধান এলাকাতে পাননি। শুক্রবার তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে আসল সিরাজের সন্ধানে নামেন।
মামলার অপর আসামি ফারুকের সন্ধান পাওয়ার পর তিনি স্বীকার করেন, তার ভগিনীপতি সিরাজুল ইসলামের ছেলে হাসানের স্ত্রী সোনিয়া ওই মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার অন্য আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। একমাত্র সিরাজুল ইসলাম জামিন নেননি।
মাওলানা সিরাজকে গ্রেফতার করা এসআই গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি প্রকৃত আসামি সিরাজকেই গ্রেফতার করেছেন। আদালত কিসের ভিত্তিতে তাকে জামিন দিয়েছেন তা তার জানা নেই।
বাকেরগঞ্জ থানার ওসি এসএম মাকসুদুর রহমান বলেন, ওয়ারেন্ট অনুযায়ী সিরাজ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছেন এসআই কিবরিয়া; কিন্তু কোর্টে চালান দেওয়ার পর জানা যায় আরও একজন সিরাজ আছেন। পরে জামিন পেয়ে আমাকে এসে সিরাজ নামে ওই লোকটি বলেছেন যে, ‘স্যার আমি তো সেই লোক না।’ আসলে অন্য সিরাজ আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখেন।