lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩
Last Updated 2023-08-18T11:14:58Z
দেশজুড়ে

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টটিভদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানা হিঁচড়া - অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনরা

Advertisement

জুয়েল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টারঃ

দিনভর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দখলে থাকে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সকাল থেকেই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও গেটের সামনে অবাধ বিচরণ করতে থাকেন তারা। কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই যখন-তখন ঢুকে পডেন চিকিৎসকের কক্ষে। রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তারা প্রেসক্রিপশন নিয়ে শুরু করেন টানাহিঁচড়া। এতে অতিষ্ঠ রোগী ও তাদের স্বজনরা। সিস্টাররাও তাদের কাছে নির্দ্বিধায় রোগীর ফাইল দিয়ে দেন ।

সরেজমিনে হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা ডাক্তারের কক্ষগুলোর সামনে জটলা করে আছেন। রোগী বের হলেই হুমড়ি খেয়ে এসব রিপ্রেজেন্টেটিভরা রোগীর প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিচ্ছেন ছবি তোলার জন্য। ডাক্তারদের রুমেও দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধের স্যাম্পল, দামী-দামী কলম , সুগন্ধি, টিস্যু সহ নানান পদের উপঢৌকন । 

তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন আসাদুল ইসলাম (৫৫)। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্রই তাকে ঘিরে ধরলেন পাঁচ থেকে ছয় জন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ (এমআর)। তার হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন প্রেসক্রিপশন। চিকিৎসক তাকে কী কী ওষুধ লিখে দিলেন সেগুলো দেখতে থাকেন, ছবিও তুলে নেন কেউ কেউ। প্রায় দু-তিন মিনিট ধরে তাদের এই কাজ চলে। ওদিকে বৃদ্ধ আসাদুল কাহিল।

আসাদুল ইসলাম (৫৫) এর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, 'আরে বাবা মোক যেমন করি ঘিরি ধরিল তাতে মুই প্রথমে মনে করছিনু পুলিশের লোক। ভয় পেয়া কনু, কি হইছে বাহে? মুই কি দোষ করনু? তখন ওমরা (মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ) ‌মোক কিছু না কয়া মোর হাতোত থাকি ডাক্তারের কাগজ কারি নিয়া ফটো তুলিল।

হাসপাতালে ১৩ মাসের সন্তানকে ভর্তি করিয়েছিলেন বুড়িরহাটের বুদারু মিয়া । তিনি বলেন, ‘ ২ দিন আমার বাচ্চা এখানে ভর্তি ছিল । প্রথম দিন সকালে হুট করে দুই রিপ্রেজেন্টেটিভ ঢুকে প্রেসক্রিপশন চাইল। সেটা দিয়ে কী করবে জানতে চাইলে তারা বলেন, একটু দেখবেন। আমি দেয়ার আগেই তারা টেবিলে রাখা প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি তুলতে থাকেন। 

অনেক আশা করে হাড় ক্ষয় সমস্যা নিয়ে একটু কম খরচে চিকিৎসা করাতে থানাপাড়া থেকে হাসপাতালে এসেছিল আম্বিয়া। কিন্তু ফার্মেসিতে গিয়ে দেখেন, প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসক অনেক বেশি দামি সব ওষুধ লিখেছেন। হতাশ হয়ে শেষে শুধু একপাতা সরকারি গ্যাসের ট্যাবলেট নিয়েই বাড়ি ফেরেন তিনি ।

ওষুধ কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধি সঙ্গে কথা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কোম্পানি ভেদে তাদের প্রতিদিন ৫০-১০০ জন রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলার টার্গেট দেওয়া হয়। এই টার্গের পূরণ করতে না পারলে কোম্পানি থেকে চাপ আসে। এ জন্য ইচ্ছা অনিচ্ছাতেও রোগীদের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে হয়। 

এতে রোগীরা বিরক্ত হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে  তিনি জানান, এ বিষয়ে তাদের করার কিছুই নেই। কারণ, ডাক্তাররা কোম্পানির ওষুধ লিখছেন কিনা, সেটা দেখার জন্য কোম্পানি তাদের নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়া ডাক্তারদের নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের গিফট, ভ্রমন ভাতাসহ নির্দিষ্ট পরিমাণে সম্মানী দেওয়ার মতো সুবিধা দেয়া হয় । এ জন্য ডাক্তাররা নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকেন বলে জানান এই বিক্রয় প্রতিনিধি।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, 'হাসপাতালে যেসব রোগী আসেন তাদের মধ্যে অনেক গুরুতর অসুস্থ রোগী থাকে। টেনশন থাকে। এমন পরিস্থিতিতে তারা কেন এমনভাবে বিব্রত করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। প্রতিদিনই হাসপাতালে তারা ভিড় জমায়। কেন যে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না, বুঝি না? 

এ বিষয়ে কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বললে তারা বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাহিঁচড়ার বিষয়ে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহীন সুলতানা বলেন, সরকারি হাসপাতাল চত্বরে এমন আচরণ তারা করতে পারে না। আমি আজকে সকালেই তাদেরকে নিষেধ করেছি ।