Advertisement
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষকের পরিবর্তে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে। কৃষকের লিখিত অভিযোগ, নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান ও তার একান্ত অর্থ উত্তলকারী সহযোগী নিরাপত্তা প্রহরী জোবায়ের রহমানের মাধ্যমে নামমাত্র কয়েকজন কৃষক আর অবশিষ্ট সিন্ডিকেট চক্রের কাছে প্রতি ৩মেক্ট্রিক টন ধানে ২হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রায় ৫শত মেক্ট্রিক টন (১৫-১৬মিটার) নিম্নমানের ধান গুদামের সংগ্রহ করেছে এবং নিরাপত্তা প্রহরী জোবায়ের রহমানের বাড়ী কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় হওয়ায় সে বিভিন্ন ক্ষমতাধর নেতাসহ উধ্বতর্ন কতৃপক্ষের নাম ভাঙিয়ে-দাপট খাটানোর লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাগেশ্বরী পৌরসভা গোদ্ধারপাড় গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী ও সৈফুর রহমানের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান ও তার একান্ত সহযোগী নিরাপত্তা প্রহরী জোবায়ের রহমানের মাধ্যমে কৃষকের পরিবর্তে নিন্মমানের (১৫-১৬মিটার) ধান সংগ্রহ করা হয়েছে সিন্ডিকেট চক্রের থেকে। ফলে বঞ্চিত মফস্বল অঞ্চলের অসহায় প্রান্তিক কৃষকরা। কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে গত (১৩জুলাই) গুদামে ধান নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ১হাজার টাকার বিনিময়ে সন্ধ্যায় গুদামে ধান জমা হয় এবং গত (১৯জুলাই) গুদামে ধানের চেক নিতে নিরাপত্তা প্রহরী জোবায়ের রহমান প্রতি ৩মেক্ট্রিক টন ধানে ২হাজার টাকা দাবি করে। বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী কৃষকের অভিযোগে গত (১৯জুলাই) দুপুর ১২টায় সংবাদকর্মীরা গুদামে যায় এবং নিরাপত্তা প্রহরী জোবায়ের রহমানের সাথে ঘুষের টাকা নিয়ে কৃষকদের তর্ক হয় এবং জোবায়ের রহমান দাপট খাটিয়ে অফিসে ঢোকেন। আমরা দুই কৃষক কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে দুইবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের পেক্ষিতে গুদামে তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত হন এবং তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিতের আশঙ্কা করছি। চলতি বছর নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামে ৬৮৯জন কৃষকের কাছ থেকে ৩মেক্ট্রিক টন ধান হিসেবে ৫শত মেক্ট্রিক টন নিম্নমানের ধান গুদামে মওজুত হয়েছে।
অপরদিকে নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের সরবরাহকৃত নিম্নমানের ১৮০মেক্ট্রিক টন চাল বগুড়া জেলার কেন্দ্রীয় সান্তাহার খাদ্য বিভাগে (২৫জুলাই) মঙ্গলবার সকালে পৌছায়। পরে কেন্দ্রীয় সান্তাহার খাদ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক হারুনুর রশিদ ট্রাকে থাকা বস্তার চালের চালান খালাস করতে গিয়ে দেখে চাল পচাঁ ও নিম্নমানের এতে আটকে দেয়া হয় খালাস কার্যক্রম। মঙ্গলবার সকাল থেকে চাল ভর্তি ৯টি ট্রাক কেন্দ্রীয় সান্তাহার খাদ্য বিভাগের সামনে দাড়িয়ে থাকে। ঘটনাটি দ্রুত ঝড়িয়ে পড়লে মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত হয়ে সংবাদ প্রচার করে এবং বৃহস্পতিবার নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান সাকেন্দ্রীয় সান্তাহার খাদ্য বিভাগে উপস্থিত হয়ে ৯ট্রাক চাল (২৮জুলাই) শুক্রবার ফিরিয়ে আনেন এবং নাগেশ্বরী পৌরসভার কাছারী পায়রাডাঙ্গা সওজ মেইন রাস্তার ধারে জাহাঙ্গীর আলমের "বিসমিল্লাহ আটো রাইস মিলে" ট্রাকগুলো প্রবেশ করে এবং ট্রাকের পচাঁ চালগুলো ট্রলিযোগে খাদ্য গুদামের নিয়ে আসে। ইতিমধ্যেই নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান নিন্মমানের চাল প্রায় ৩৭মেক্ট্রিক টিসিবিতে দেয়ারও অভিযোগ করে টিসিবি ডিলারগণ।
অভিযোগকারী কৃষক সেকেন্দার আলী ও সৈফুর রহমান বলেন, নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামে ৩মেক্ট্রিক টন ধান জমা প্রদাণের পরে মোবাইলে ম্যাসেজে আসে। বিলের চেক নেয়ার জন্য গুদামে গেলে নিরাপত্তা প্রহরী জোবায়ের রহমান দীর্ঘ ৫দিন হয়রানি শেষে চেক নিতে প্রতি ৩মেক্ট্রিক টনে ২হাজার টাকা দাবি করে। আমরা জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন দপ্তরে দুইবার লিখিত অভিযোগ করেছি। ন্যায় বিচার দাবি করছি।
নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের নিরাপত্তা প্রহরী কর্মচারী জোবায়ের রহমান বলেন, আমার বাড়ী কুড়িগ্রামের চিলমারী। আমারও হাতে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষমতাধর নেতাসহ উধ্বতর্ন কতৃপক্ষ আছে বলে দাপট খাটান। আরও বলেন, এই টাকা কি আমি নিচ্ছি না ওসিলিডি নিয়েছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রান্তিক কৃষক আওরঙ্গজেব বলেন, খাদ্যগুদামের ওসিলিডি সাজেদুর রহমান ধান সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর সাথে প্রতি ৩মেক্ট্রিক টনে ২হাজার চুক্তিভিত্তিতে ধান ক্রয় করে নিয়েছেন। ফলে বঞ্চিত কৃষকরা। খাদ্যগুদামের কর্মকর্তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের ওসিলিডি সাজেদুর রহমান বলেন, খাদ্যগুদাম বিষয়ে সংবাদ প্রচার হওয়ায় আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর নিউজ করেন না।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ, সরবরাহ, অনুবিভাগ) মোঃ মমতাজ উদ্দিন এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মাননীয় সফল প্রধানমন্ত্রী মফস্বল অঞ্চলের অসহায় ও প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান ও আর্থিক উন্নয়নে খাদ্য বিভাগের আওতায় কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ অভিযোগের পেক্ষিতে ধান সংগ্রহ বন্ধ আছে। তদন্ত চলমান। আরও একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।