lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
Last Updated 2023-09-18T06:12:25Z
জেলার সংবাদ

স্বামী-স্ত্রী দুজনই করেন ব্যবসা, খোঁজখবর নেন ইউএনও

Advertisement

সালাম মুর্শেদী, (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ 

কোনদিন ৫'শ, কোনদিন ৬'শ টাকা আয় করেন। দুই সন্তান ছেলে নিয়ে ছোট তাদের সংসার। প্রতিদিন যা আয় করেন তা দিয়েই কোন রকমে সংসার চলে। বাজারের ভিতরে ছোট একটা চা'য়ের দোকান আছে তাদের। প্রায় কয়েক বছর ধরে দোকান করেন তারা। দিনের বেশির ভাগ সময় আগুনের চুলার কাছে থাকতে হতো। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন স্বামী-স্ত্রী দুজনই। সারাদিন এমন পরিশ্রম শেষে রাতে শান্তিতে ঘুমানোর জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও ঠিকঠাক ছিলনা তাদের। থাকতেন বড় ভাইয়ের আশ্রিত একটা ছোট কুটিরে। সেখানেই একটি ছোট ঘরে কোনঠাসা হয়ে দুই সন্তানসহ বসবাস আলিম উদ্দিন ও ঝর্ণা বেগম নামে এক দম্পতির। তারা উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের ডুংডুংগী গ্রামের বাসিন্দা। আলিম উদ্দিন ওই এলাকার মৃত: সলিম উদ্দিনের ছেলে। গরীব ভূমিহীন অবস্থায় বড় ভাইয়ের আশ্রিত একটা ছোট কুটিরে থাকতেন ঠিকই কিন্তু তারা এখন স্বয়ংসম্পূর্ন ও স্বাবলম্বী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে তারা আজ বেশ খুশি৷ নিজের কোন জমিজমা না থাকায় বড় ভাই পজিরুল সরকারের নামে দুই শতক জমি লিখে দিয়েছেন। সেখানেই আটোয়ারী উপজেলা প্রশাসন আলিম উদ্দিনকে একটি ঘর তৈরি করে দিয়েছন৷ অসহায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তিনি এখন সেখানে খুঁজে পেয়েছেন শান্তির নীড়। সারাদিন চা'য়ের দোকানে আগুনের লেলিহান শিখায় ঝলসে রাতে ফ্যানের ঠান্ডা হওয়ায় শান্তিতে ঘুমাতে পারেন তারা।

তাদের ডুংডুংগী বাজারে একটি ছোট চা'য়ের দোকান রয়েছে। সারাদিন স্বামী-স্ত্রী দোকানদারি করেন। বাজারের লোকজন, স্কুলের শিক্ষার্থীসহ অনেকেই তাদের দোকানে খাওয়ার জন্য ভীর জমায়। সারাদিন যা দোকানদারি করেন তা থেকে টিকে মাত্র ৫/৬'শ টাকা। তা দিয়েই চার জনের সংসার কোন রকমে চলে যায়। এখানকার আয় দিয়েই বড় সন্তানকে এসএসসি পাস করিয়ে কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। ওই সামান্য আয় দিয়ে দুই সন্তানের পড়াশোনা আর সাংসারিক খরচ করে দিনশেষে অবশিষ্ট আর কিছুই থাকেনা। তবুও তারা খুশি। কারণ নিজের মতো করে রাতে ফ্যানের ঠান্ডা হওয়ার নিচে ঘুমাতে পারেন৷ অন্যের ঘরে থাকতে হয়না৷  

আলিম উদ্দিন বলেন, আগে আমার পরিবার নিয়ে বড় ভাইয়ের আশ্রিত একটা ছোট ঘরে বসবাস করতাম। শুনেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মতো অসহায় গরীব ভূমিহীনদেরকে বিনামূল্যে ঘর দিচ্ছেন। তাই আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ তৌহিদুল ইসলামের কাছে ভোটার আইডি কার্ডের কপি জমা দেই৷ তিনি ইউএনও'কে আমার কাগজটি হস্তান্তর করেন। এরপর হঠাৎ একদিন ইউএনও সাহেব আমাকে ফোন দেন এবং আমার বাড়িতে চলে আসেন৷ আমার বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। পরে কিছুদিনের মধ্যেই আমার নামে একটি ঘরে বরাদ্দ আসে৷ আমার বড় ভাই পজিরুল ইসলাম দুই শতক জমি সরকারের কাছে লিখে দেন৷ সরকার সেই জমিতে ঘর তুলে আমার নামে দলিল করে দেয়। এখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেখানে শান্তিতে বসবাস করছি৷ তারপরও ইউএনও সাহেব আমাকে মাঝে মধ্যে ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি কখনো আবার আমাদেরকে দেখতেও আসেন। আর কোন ধরনের সমস্যায় পরলে ইউএনও'র অফিসে চলে যাই। তিনার দরজা আমাদের মতো অসহায় গরীবের জন্য সবসময়ই খোলা থাকে। তিনি আরো বলেন, আমার সারাদিনে যা আয় করি তা দিনেই শেষ হয়ে যায়। অবশিষ্ট কিছু থাকেনা। আমার বড় ছেলেকে কলেজে যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন টাকা দিতে পারিনা। সাইকেল কিনে দেওয়ারও সামর্থ নেই আমার। তাই ছেলেটার কলেজে যাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। পূর্বের নাজুক অবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রী'র উপহার ঘর পেয়ে এখন স্বাবলম্বী হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুশফিকুল আলম হালিম ও সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানান তিনি। 

তার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম বলেন, আমরা এর আগে আমার ভাসুরের আশ্রিত ঘরে থাকাতাম। প্রাধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একটা ঘর উপহার দিয়েছেন। সেখানেই স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে আছি। আমরা ছোট চা'য়ের দোকান করে সংসার চালাই। সন্তানদের পড়াশোনা করাই। ইউএনও আমাদের খোঁজখবর রাখেন। বিনামূল্যে সরকারি ঘর পেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী'র জন্য মঙ্গল কামনা করেন৷