Advertisement
হৃদয় হোসাইন বেড়া (পাবনা)
অবহেলা আর অযত্নে নষ্ট হতে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক' বীর বাঙালী ভাস্কর্য'।পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর ইউনিয়ন এর শহীদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ভাস্কর্যটির অবস্থান। এটি শহীদ নগর ডাব বাগান মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য হিসাবে পরিচিত।রবিবার ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,আগাছা লতা পাতায় ভাস্কর্যটির বেহাল অবস্থা।কিন্তু এই স্মৃতি চিহ্নটুকু ধরে রাখার যেন উদ্যোগ নেই প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের।চোখের সামনে অবহেলায় পড়ে রয়েছে ভাস্কর্যটি। এই স্মৃতি ভাস্কর্যটির সামনে গেলে বোঝা যায় অনেক দিন ধরে রংয়ের ছোঁয়া লাগেনি এর গায়ে।অনেকদিন ধরে কার্যকরী তদারকি ও সংস্কার না করায় ভাস্কর্যটির দেওয়াল ভেঙ্গে পড়েছে।নোংরা পরিবেশ আর ময়লার কারণেই কারো চোখ পড়ছে না মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্নের দিকে।স্থানীয়দের থেকে জানা যায় ১৯ এপ্রিল ঐতিহাসিক শহীদনগর দিবস পালন করা হয়।দিনটি পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একদিকে যেমন বীরত্বের অপরদিকে বেদনাদায়ক।১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ ঢাকার ধ্বংস পর পাকবাহিনীর সড়ক পথ গতিরোধের জন্য সর্ব প্রথম এ অঞ্চলের বেঙ্গল রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট হুদার নেতৃত্বে নগরবাড়ি ঘাটে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়।২৭মার্চ ওপর থেকে ও ফেরি থেকে মটারের গোলাবর্ষণের মুখে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা ১০ কিলোমিটার পিছিয়ে উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ পথ ডাববাগান (বর্তমান শহীদ নগর) নামক স্থানে এসে অবস্থান নেয় এবং সেখানে পাকবাহিনীর জন্য ত্রিমুখী ফাঁদ তৈরী করে।পরদিন ২৮ মার্চ বগুড়ার আতিয়ার ক্যাম্প থেকে ১৩০ জন ইপিআর বাহিনীর জওয়ান পালিয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।
কিন্তু গুপ্তচরের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সকল সংবাদ কৌশলে জেনে যায় পাকসেনারা। তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী অবস্থান নেয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের তৎপরতার কোন খবর না পেয়ে অপেক্ষা করতে থাকে কখন তারা উত্তরাঞ্চলে ঢুকবে।১৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা অন্যান্য দিনের মতো দুপুরে গোসল ও খাওয়ার কাজ সারছিলেন। এরই মধ্যে দুপুর ২টার দিকে অবজারভেশন টাওয়ার থেকে হঠাৎ চিৎকার। পাকসেনার গাড়িবহর নিয়ে আসছে, তোমরা পজিশান নাও। শুরু হলো আকস্মিক আক্রমণ, এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছপা না হয়ে চরম সহসীকতার সাথে রুখে দাঁড়ালেন।ইপিআর সদস্যরা রকেট ল্যাঞ্চারের মাধ্যমে অচল করে দিল পাকসেনাদের ৪/৫ টি ট্রাক।এরই মধ্যে পাকসেনারা ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধাদের। হতবিহ্বল মুক্তিযোদ্ধারা পিছপা না হয়ে চালিয়ে যায় যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ডাববাগান (বর্তমান শহীদনগর) যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করে শহীদ হয় তৎকালিন ইপিআর হাবিলদার এমদাদ আলী (পাবনা), সিপাহী গোলাম মর্তূজ (সিলেট), সিপাহী রফিকুল ইসলাম (রাজশাহী), সিপাহী আবুল কালাম (রাজশাহী), সিপাহী ইদ্রিস আলী (রাজশাহী), সিপাহী নেফারুল ইসলাম (রাজশাহী), সিপাহী আমির হোসেন (কুষ্টিয়া), সিপাহী সাইদুর রহমান (কুষ্টিয়া), সিপাহী আব্দুর রাজ্জাক (যশোর), সিপাহী রমজান আলীসহ (যশোর) ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা।অন্যদিকে স্বাধীনতার বীর যোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে হতাহত হয় ৩০/৪০ জন পাক সেনা।ডাব বাগানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার অপরাধে পাক সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে সমাসনাড়ি গ্রামের ডা.আফাজ উদ্দিন ও ব্যবসায়ী সমাজ সেবক জগৎ শেঠসহ আরো সাত গ্রামবাসীকে।সেসব মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ডাব বাগান (বর্তমান শহীদনগর) নগরবাড়ি-বগুড়া মহাসড়কের সাথে ৬ একর জায়গার ওপর ২০০১ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল স্মৃতি আগামী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় করে রাখতে নির্মাণ করে “বীর বাঙ্গালী” নামে একটি ভাস্কর্য।দিনটিকে ঘিরে গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি বছরই পালন করে আসছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠান।স্থানীয়রা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন হঠাৎ ভাস্কর্যটির প্রতি কেনো এমন অযত্ন অবহেলা এমন প্রশ্ন অনেকেরই।কার্যকরী তদারকের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কার করার দাবী সবার।এবিষয় সাঁথিয়া নির্বাহী অফিসার মো: মাসুদ হোসেন বলেন,ইতিমধ্যে এইটা সহ আমাদের আরো অনেক গুলো ভাস্কর্য নিয়ে ঢাকায় কথা বলেছি।অতি দ্রুত একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। আর স্থানীয়ভাবে ভাস্কর্যটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করা হবে।