Advertisement
✏ জহিরুল ইসলাম যশোর সংবাদদাতা
ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় গদখালীর পানিসারা। নতুন বছরের শুরু থেকেই মৌসুমের ফুল ওঠা শুরু হয়। সারাবছরই ফুলের রমরমা ব্যবসা থাকলেও এ সময়টাতে শীতার্ত আবহাওয়া থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে গদখালীর পানিসারায়।
যশোর সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের পানিসারায় গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ ফুল উৎপাদন কেন্দ্র। ১৯৮২ সালে পানিসারা গ্রামের শের আলী সরদারের হাত ধরে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে প্রথম বারের মতো ফুলের চাষ শুরু হয় গদখালীর মাটিতে। প্রতিদিন খুব ভোরে এখানে জমে উঠে বাংলাদেশের বৃহত্তম ফুলের বাজার। ঢাকাসহ নানা জায়গার ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাক বা পিকআপ ভর্তি করে ফুল নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বছর শেষ করে জানুয়ারির প্রথম দিকে নতুন ফুলে ভরে ওঠে এখানকার সব ফুলের বাগান।
প্রতিদিনই এই গদখালীর পানিসারা ফুলের রাজ্য দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন অসংখ্য নারী-পুরুষ।দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদচারণায় এ সময়টাতে মুখর হয়ে ওঠে ফুলের রাজধানী গদখালীর পানিসারা। ফুলের সঙ্গে ভ্রমণপিপাসুদের বিনোদন আরও বাড়িয়ে দিতে সম্প্রতি ফুলের রাজধানী গদখালীর ফুলের রাজ্যে গড়ে উঠেছে মিনি পার্ক, যা থেকে ফুলের এই রাজধানীতে ভ্রমণ করতে আসা মানুষের মাঝে আগের থেকে বেশি বিনোদন ও ফুলের ক্রয়-বিক্রয় হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন জানান, এখন ফুলের ভরা মৌসুম। প্রতিবছরের এই সময়টাতে যেমন ফুল উৎপাদন বেশি হয়, তেমনি ফুলপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের পাদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ফুলের রাজ্য পানিসারা। সামনে ১৪ ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস, ১লা ফাল্গুন ও ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো উৎসব আছে, এ কারণে চাষিরাও অনেক ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অনেক দুর দুরান্ত থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসছেন পানিসারায়, কেউ আসেন পরিবার নিয়ে, কেউ বা আসেন বন্ধু রা একসাথে, আর প্রেমিক প্রেমিকারা আসেন স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে, আর আসবেই না কেনো এমন সুন্দর, নয়ন জুড়ানো দৃশ্য দেখতে কার না মন চায় খুলনা থেকে আগত সানজিদা আক্তার বলেন, এতদিন শুধু পানিসারার গল্প শুনেছি আজ এখানে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে ভবিষ্যতেও আবারও আসার ইচ্ছে আছে। সাতক্ষীরা থেকে ঘুরতে আসা ফরহাদ হোসেন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, অনেক দিন থেকে এখানে আসার ইচ্ছে কিন্তু সময় হয় না, আজ এখানে এসে অনেক আনন্দ পেয়েছি, আপনারাও আসুন অনেক সুন্দর জায়গা আপনাদেরও ভালো লাগবে। সম্প্রতি সুদূর রাজবাড়ী থেকে তিনজন যুবক সাইকেল চালিয়ে গদখালীতে আসেন ঘুরতে আসেন, তারা বলেন আমরা শুধু ফেসবুকে দেখি পানিসারার অপরুপ চিত্র, তাই লোভ সামলাতে না পেরে তিন বন্ধু সাইকেল চালিয়ে চলে এসেছি।
তবে দেশের মাটিতে সম্ভাবনাময় এই ফুল সেক্টরকে আরও গতিশীল করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সাবেক সভাপতি, যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম।
তিনি বলেন, ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। সম্ভাবনাময় এই ফুল সেক্টরকে আরও গতিশীল করতে আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর কিছু দিন পরেই বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবস সামনে নিয়ে চলছে এখানকার ফুলচাষিদের কর্মব্যস্ততা। প্রায় চার যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে গদখালীর ফুলের সুবাস। গোলাপ, গাদা, রজনীগন্ধা, চন্দ্র মল্লিকা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, টিউলিপসহ বাহারি ফুলের নজরকাড়া সৌন্দর্যে মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিচ্ছে গদখালীর ফুলের রাজ্য পানিসারায়।
ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দ আর একটু বাড়িয়ে দিতে আগামী ৩১ জানুয়ারি গদখালীর পানিসারায় শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় বার্ষিকী ফুল উৎসব ২০২৪, যা চলবে ৩রা ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।