lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৪
Last Updated 2024-01-26T15:33:26Z
কৃষি

সবজি চাষে দোয়ারাবাজারের উসমান গনী'র সফলতা

Advertisement



ছবি: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিজের চাষকৃত সবজি ক্ষেতে  উসমান গনী'র সাথে দর্শনার্থীরা


সোহেল মিয়া,দোয়ারাবাজার(সুনামগঞ্জ):

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী নরসিংপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম শ্রীপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র উসমান গনী। একসময় নিজের ভিটে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। ছিলোনা মাথা গোঁজার ঠাঁই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুবি কষ্টে দিন কাট ছিল। এখন নিজের বাড়িঘর  সবকিছু হয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে  সীমান্তঘেঁষা গ্রাম শ্রীপুরে  ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বন্ধক জমি নিয়ে মাটি খুঁড়ে ফলিয়েছেন সবুজ-সোনালি শস্য। আর সে শস্যের সোনালি আভায় আলোকিত হয়েছে নিজের ঘর।  নিজের আয়ের পাশাপাশি তার জমিতে বছর জোরে কর্মকরে জীবিকা নির্বাহ করে এলাকার  ৮ টি পরিবার। কৃষিকাজ ছেড়ে একাধিকবার উসমান গনী বিদেশে যেতে ইচ্ছে পোষন করলেও তার জমিতে কাজ করা নারীরা তাকে বাঁধা প্রদান করে কান্নাকাটি করে কর্মসংস্থান হারানোর ভয়ে।


বন্ধক ৮০ শতাংশ জমিতে শিম, মরিচ, লালশাক, করলা, লেবু,কালা বেগুন, লাউ আরও অনেক রকমের সবজির চাষাবাদ করেন তিনি। সারা বছরই কোনো না কোনো জাতের সবজি চাষ করেন এই জমিতে। প্রতি বছর ২-৩ লাখ টাকা লাভ হয়।


 মা-বাবা,ভাই-বোন,এক স্ত্রী ও এক সন্তানসহ ১০ সদস্যের পরিবারের ভরনপোষণ নির্ভর করে উসমান গনী'র চাষ করা সবজির আয়ে।


উসমান গনীর জমিতে কাজ করা রহিমা খাতুন বলেন,প্রতিদিন ৭-৮ জন মানুষ আমরা উসমানের জমিতে কাজ করি। এটাই আমাদের একমাত্র কর্ম,আমাদের আর কোন কর্ম নেই। আমরা চাই উসমান গনী যাতে বিদেশে যেতে না হয়,সরকার যেনো তাকে ফসল ফলাতে সহযোগিতা করে।


উসমান গনী নয়া দিগন্তকে বলেন, নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। একটি ছোট ঘরে অনেক কষ্টে বসবাস করেছি মা-বাবা,ভাই-বোনদের নিয়ে। এখন নিজের বাড়ি হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শান্তিতে বাস করছি। পাশাপাশি এলাকার ৮ টি পরিবারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে আমাকে ঘিরে।


তিনি জানান,  সীমান্তের নিকটে ৮০ শতংশ জমিতে ২০০৪ সাল থেকে কৃষিকাজ করেন তিনি। সবজি চাষের পাশাপাশি ধান ও চাষ করেব তিনি । এতে গত বছরে যে পরিমাণে ধান পেয়েছেন, তাতে পরিবারের সদস্যের সারা বছরের খাবার রেখে আরও ধান বিক্রি করতে পেরেছেন।


তবে কৃষিকাজে সরকারি দফতরের পরামর্শ ও সহযোগিতা না পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন উসমান গনী। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। সারা বছরই বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করি। অনেক সময় নতুন জাতের সবজি চাষ করতে গিয়ে লোকসানে পড়তে হয়েছে। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শ পেলে এই লোকসানের শিকার হতাম না। 


উসমান গনী আরও জানান,তার বাপ-দাদার পেশা ছিল কৃষিকাজ। তাই লোকসান হলেও এই পেশায় যুক্ত হয়ে আছেন। কিন্তু কোনো সময়ে সরকারি কোনো লোককে দেখিনি আমাদের কাছে আসতে। কৃষি অফিসের কাজ কী? কে কৃষি অফিসার,কে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা,আমরা জানি না, চিনিও না। কোনদিন নাম ও শুনিনি।


সরেজমিনে দেখা যায়, উসমান গনী ৮০ শতাংশ  জমিতে সবজি চাষ করেন। অল্প জমি হলেও বছরে ৪-৫ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেন তিনি। এ ছাড়াও প্রতিবছর ধান চাষ করেন। এই দুই পদ্ধতির চাষাবাদে ভালোই চলছে তার সংসার।


সবজি ক্ষেত দেখতে আসা দর্শনার্থী ফয়জুল ইসলাম বকুল ও কয়ছর মোহাম্মদ পারভেজ জানান,এলাকার অনেক মানুষ পরামর্শ ও সহযোগিতার অভাবে কৃষিজমি পতিত রেখে দিয়েছেন। প্রথম সবজি চাষ করেই তারা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। তাই পরে আর চাষাবাদ আগ্রহ বাড়েনি।সবজি চাষে সরকারি পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে কোনো জমি অনাবাদি থাকবে না। এলাকার মানুষ সব জমি চাষাবাদ করবে বলেও জানান তারা।


দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন জানান, সরকারি অনুদান চাহিদার চেয়ে ক্ষম আসে।দোয়ারাবাজার উপজেেলায় ঘনবসতি হওয়ায় সবাইকে একসাথে  দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। 


কৃষকদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,জনবল সংকট থাকায় সকল কৃষকদের কাছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।তবু আমাদের দুজন কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা কৃষকরা নিজের আগ্রহে কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখলে সহজ হবে।