lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
Last Updated 2024-02-26T06:28:38Z
আইন ও অপরাধ

ঠাকুরগাঁওয়ে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে - BD Prokash

Advertisement


মোঃ মজিবর রহমান শেখ:


ঠাকুরগাঁও শহরে একটি চীজ (পনির) কারখানার বর্জ্য ও দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। বর্জ্যের দুর্গন্ধে পথচারী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাসে দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে অসুস্থ হয়ে শিশু সহ ৪ জন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানা ও স্থানীয় চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের শাহাপাড়া নামক ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় রশিদা খাতুন নামে এক নারী উদ্যোক্তা মমতাজ ফুড প্রোডাক্ট নামে দীর্ঘদিন ধরে একটি চীজ কারখানা স্থাপন করে ব্যবসা করে আসছেন। সেই কারখানার বর্জ্য ও ময়লা পানি পাশের একটি পুকুরে ফেলা হয়। ঐ পুকুরের পানি হতে দুর্গন্ধ ছড়ায় সারাক্ষণ। পুকুরের পানির গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। নাকে কাপড় দেওয়া ছাড়া স্কুল কলেজে যাতায়াত করতে পারে না এমন অভিযোগ ঐ এলাকার শিক্ষার্থীদের। দুর্গন্ধে নাড়িভুড়ি পেট থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা সন্তান পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এ বিষয়ে একাধিকবার কারখানার মালিককে অবগত করলেও মালিক যেন তাদের অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে ঐ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার সকল প্রকার বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি দিয়ে পুকুরটি ভর্তি হয়ে যাওয়ায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাশের জমিগুলোতে দুর্গন্ধযুক্ত ঐ ময়লা পানি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে গোটা এলাকায় দুর্গন্ধে থাকার মতো অবস্থা নেই। এমনকি সারাদিন কেউ কোন কিছু খেতে পারে নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। অনেকেই গন্ধ সহ্য করতে না পেরে অতিরিক্ত বমি করার ফলে অসুস্থ্য হয়ে ঐ এলাকার আনোয়ারের স্ত্রী তানজিনা (৪২), সোহেল রানার স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার (২০), মমিন ইসলামের স্ত্রী শহিদা বেগম (৫০) ও রুবেল ইসলামের মেয়ে ৯ বছরের শিশু রাইছা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডায়রিয়া সেলে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রচণ্ড দুর্গন্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা শান্তিতে বাসায় থাকতে পারছেন না।



অসুস্থ্য শহিদা বেগমের স্বামী মমিন ইসলাম বলেন, এমনিতেই পুকুরে থাকা কারখানার বর্জ্য ও পচাঁ পানির গন্ধে আমরা এ এলাকায় খুব কষ্টে বসবাস করি তার উপর আবার গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেশিন দিয়ে আমাদের বাড়ির সামনে ঐ পচাঁ পানি ফেলার কারনে আমরা কেউ বাড়িতেই থাকতে পারছিনা, সারাদিন কিছু খেতেও পারছি না। ঐ কারখানার বিষাক্ত তরল গ্যাসের গন্ধে আমার পরিবারের সবাই অতিরিক্ত বমি করার ফলে অনেক অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আমার বউ শহিদা খুব বেশি অসুস্থ্য হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি।



দুর্গন্ধে অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা বৃষ্টি আক্তার বলেন, মমতাজ ফুড প্রোডাক্ট নামে কারখানাটির পাশেই আমার বাড়ি। দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা ঐ কারখানার বর্জ্য পানির গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। গত বৃহস্পতিবারে ঐ পচা পানি আমাদের বাড়ির সামনে ফেলে। এতে দুর্গন্ধে সারাদিন কিছু খেতে পারি নি অন্যদিকে দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে বমি করতে করতে অসুস্থ্য হয়ে আমাকে বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। এছাড়াও একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসা করুক তাতে আমাদের কোন আপত্তি নাই কিন্তু আবাসিক এলাকায় এ ধরনের দুর্গন্ধে আমাদের বসবাস করাটাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মমতাজ ফুড প্রোডাক্ট এর কারখানা থেকে নির্গত তরল বিষাক্ত বর্জ্য পরিবেশের ক্ষতি করতেছে। মাটিসহ বাতাস প্রচুর পরিমাণে দূষিত হচ্ছে। আমাদের ছেলে মেয়েরা এই পথেই শহরে পড়াশোনা করতে যায়। প্রতিনিয়ত এই দুর্গন্ধের কারণে তারা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। আমরা রবিবারে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করবো। এলাকাবাসী হয়ে আমাদের দাবি এ বিষয়টির দিকে যেন প্রশাসন সু-দৃষ্টি দেয়। ঐ কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের গ্যাসের দুর্গন্ধের কবল থেকে আমরা যেন রক্ষা পেয়ে শান্তিমতো বসবাস করতে পারি।



দূর্গন্ধের কথা স্বীকার করে মমতাজ ফুড প্রোডাক্ট এর মালিক রশিদা খাতুন মুঠোফোনে জানান, আমার কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পানি পুকুরে জমা হয়। পুকুরটি ভরাট হলে ঐ পানিটি পাশের চাষের জমিতে বের করে দেওয়া হয়। ফলে ঐ এলাকায় দুর্গন্ধ হয়। তবে দু-তিনদিনের মধ্যে দুর্গন্ধ কমে যাবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খুবই খারাপ অবস্থা। দুর্গন্ধে ঐ এলাকায় থাকা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। কারখানার মালিককে আমি বর্জ্যগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য বলে এসেছি। অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও সদর স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক আখতার ফারুক মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি শুনে আমি এলাকাবাসীকে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগের বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার (ওসি) এ বি এম ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।