lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
Last Updated 2024-02-04T13:13:15Z
জাতীয়

উত্তরাঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে ৬৫ প্রজাতির দেশী মাছ - BD Prokash

Advertisement


✏ মোঃ মজিবর রহমান শেখ:


উত্তরাঞ্চলের দুই শতাধিক নদী ও সহস্রাধিক বিল শুকিয়ে আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক উৎসের দেশী প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। গত প্রায় ৩০-৩৫ বছরের ব্যবধানে দেশীয় ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্য থেকে প্রায় ৬৫ প্রজাতির মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে তার ধোয়ানি পড়ছে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ে। ফলে খাল-বিল, জলাশয়ের স্বচ্ছ পানি মুহূর্তে বিষাক্ত হয়ে পড়ে। সেই বিষাক্ত পানির কারণে দেশী মাছ নিশ্চিহ্নহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, অবাধে ডিমওয়ালা মাছ শিকার শুষ্ক মওসুমে নদী খাল বিল শুকিয়ে যাওয়া দেশী প্রজাতির বিভিন্ন মাছ বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের বড়াল, আত্রাই, কাকেশ্বরী, সুতিখালি, ইছামতি, করতোয়া, গোহালা, চিকনাই, ধরলা, দুধকুমার, তিস্তা, ঘাঘট, ছোটযমুনা, নীলকুমার, বাঙ্গালী, বড়াই, মানস, কুমলাই, সোনাভরা, হলহলিয়া, জিঞ্জিরাম, বুড়িতিস্তা, যমুনেশ্বরী, মহানন্দা, টাঙ্গান, কুমারী, রত্নাই, পুনর্ভবা, ত্রিমোহনী, তালমা, ঢেপা, বুরুম, কুলফি, বালাম, ভেরসা, ঘোড়ামারা, পিছলাসহ দুই শতাধিক নদী-শাখা নদী-উপনদী ছাড়াও চলনবিল, ঘুঘুদহ বিল, গাজনার বিল, শিকর বিল, হাড়গিলার বিল, দীঘলাছড়ার বিল, বোছাগাড়ীর বিল, ইউসুফ খার বিল, নাওখোয়া বিল, ঢুবাছরি বিল, কুশ্বার বিল, মেরমেরিয়ার বিল, মাইলডাঙ্গা বিল, মাটিয়ালেরছড়া বিল, চাছিয়ার বিল, হবিছড়ি বিল, পেদিখাওয়া বিল, কয়রার বিল, বিল কুমারী, জামিরতলা, বিল কসবা, গোবরচাপড়া, ধামাচাপা, সাতবিলা ও কাঁকড়ার বিলসহ ১৮০০ বিল এক সময় মাছের ভাণ্ডার ছিল। নদী ও বিলের মাছ এক সময় এ অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এসব নদী, বিল, খাড়ি দিন দিন ভরাট হয়ে কমে গেছে মাছের উৎপাদন।



এক সময়ের অতি পরিচিত দেশী প্রজাতির মাছ বিশেষ করে কৈ, মাগুর, চাপিলা, শিং, পাবদা, টাকি, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, রিটা, গুজো আইড়, পাঙ্গাশ, বোয়াল, খৈলসার মতো সুস্বাদু দেশী মাছগুলো এখন আর তেমন দেখা যায় না বললেই চলে। ফলি, বামাশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা, কাজুলি, গাং মাগুর, চেলা, বাতাসি, রানী, পুতুল, টেংরা পাবদা, পুঁটি, সরপুঁটি, চেলা, মলা, কালবাইশ, শোল, মহাশোল, আইড়, গোঙসা, রায়াক, ভেদা, বাতাসি, বাজারি, বেলেসহ ৬৫ প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো মাছ বংশসহ নিশ্চিহ্নহ্ন হয়ে যাচ্ছে।



রাজশাহী ও রংপুর মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ খাঁড়ি রয়েছে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার। পুকুর ৭৪ হাজার ৯৫৪ হেক্টর, নদী, শাখা নদী ও উপনদী রয়েছে ২৯০টি। খাল ১১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর, বিল ৩৩ হাজার ৬৪৯ হেক্টর এবং প্লাবন ভূমি রয়েছে ৬ লাখ ৯ হাজার ৯৮২ হেক্টর। মানুষের সৃষ্টি পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় জলাশয়গুলোতে পড়েছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব।



এক সময়ের মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল আর বিল নেই। অনেক আগেই বিলের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে গেছে। শুকনো মওসুমের আগেই শুকিয়ে গেছে চলনবিলের নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়। বিলে পানি না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে মাছ উৎপাদন। ছোট-বড় ৩৯টি বিল নিয়ে চলনবিল। এসব বিলের মাঝে ১৬টি নদী, ২২টি খালসহ অসংখ্য পুকুর রয়েছে। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ ও রাজশাহী জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত চলনবিলে ৭৭ হাজার ৭৩৩ হেক্টর আয়তনের প্লাবন ভূমিতে পানি নেই বললেই চলে। ফলে মাছ উৎপাদনে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।



আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন) ২০০০ সালে ৫৪ প্রজাতির মাছ বিপন্ন ঘোষণা করেছে। আইইউসিএন বিপন্ন প্রজাতির মাছগুলোকে সঙ্কটাপন্ন, বিপন্ন, চরম বিপন্ন ও বিলুপ্ত এই চার ভাগে ভাগ করেছে। সঙ্কটাপন্ন মাছের মধ্যে আছে ফলি, বামোশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা, কাজুলি, গাং মাগুর, কুচিয়া, নামাচান্দা, মেনি, চ্যাং ও তারাবাইম। বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিহ্নত করা হয়েছে চিতল, টিলা, খোকশা, অ্যালং, কাশ খাইরা, কালাবাটা, ভাঙন, বাটা, কালিবাউশ, গনিয়া, ঢেলা, পাবদা, ভোল, দারকিনি, রানি, পুতুল, গুইজ্যা আইড়, টেংরা, কানিপাবদা, মধুপাবদা, শিলং, চেকা, একঠোঁট্রা, কুমিরের খিল, বিশতারা, নেফতানি, নাপিত কৈ, গজাল ও শাল বাইন। অন্য দিকে চরম বিপন্ন প্রজাতির মাছের তালিকায় রয়েছে ভাঙন, বাটা, নান্দিনা, ঘোড়া মুইখ্যা, সরপুঁটি, মহাশোল, রিটা, ঘাইড়া, বাছা, পাঙ্গাশ, বাঘাইড়, চেনুয়া ও টিলাশোল মাছের নাম। মৎস্য বিশেজ্ঞরা জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ও প্লাবন ভূমি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সরকারি উদ্যোগে নদী, বিল, পুকুর, জলাশয় ও প্লাবন ভূমি খননের মাধ্যমে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো হলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায় দেশীয় প্রজাতির সব মাছ বিলুপ্তির তালিকায় ঠাঁই নেবে।