lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
Last Updated 2024-02-28T05:44:47Z
আইন ও অপরাধ

টাকার রফাদফায় আলো জেনারেল হাসপাতাল আবার চালু - BD Prokash

Advertisement


এস এম আদনান উদ্দিন :


ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আলো জেনারেল হাসপাতাল আবারও খুলে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে- কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আগেই রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে রফাদফা করে হাসপাতালটি চালু করে দেয়া হয়েছে। তবে রফাদফার বিষয়টি রোগীর স্বজনরা স্বীকার করলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছেন।



চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার ফজলে রাব্বির গর্ভবতী স্ত্রী অন্তরা খাতুনকে আলো জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই সন্ধ্যায় হাসপাতালের স্বতাধিকারী ডা. মাসুমা আঞ্জুমা ডানা এবং তার স্বামী ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম শামীমের তত্ববধানে সিজার অপারেশন করা হয়। এসময় রোগীর অবস্থা আশঙ্কজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।



স্বজনদের অভিযোগ- চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিচার চেয়ে গত ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন তারা। হাসপাতালের সামনে ওই মানববন্ধনে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক কর্মচারীর নেতৃত্বে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা করেন এবং মারধর করেন। পরে ঈশ্বরদী থানা ও ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। ওইদিনই বিষয়টি নজরে আসলে হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করেন পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠন হওয়া পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি ওই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ পায়। তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণার মাত্র দেড় মাসের মাথায় গত এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালটি খুলে দেয়া হয়েছে। অপারেশন ছাড়া সব কার্যক্রমই চলছে সেখানে। আদালতে মামলা দায়ের মাত্র একমাস পরেই আবার মামলা তুলে নেয়ায় এবং কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আগেই হাসপাতালটি খুলে দেয়ায় জনমনে  বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে।



নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘মাঝে মধ্যেই এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। এবার হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আশপাশের লোকজন স্বস্তি পেয়েছিল কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আবার চালু হয়ে গেছে। হাসপাতালের লোকজন বলছে- অনেক টাকা পয়সা খরচ করে হাসপাতালটি চালু করা হয়েছে। টাকা পয়সা নেয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করছেন রোগীর স্বজনরা।



বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনের মাধ্যমে মামলা দায়ের করার পর কেন মামলা তুলে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মামলার বাদী মৃত রোগীর শ্বাশুড়ি জান্নাতুল ফেরদৌস রুনু। তবে রফাদফার বিষয়টি স্বীকার করেন মৃত রোগীর স্বামী ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন  ব্যক্তিরা চাপ দিচ্ছিল। বিভিন্ন  কারণে  ঝামেলা মনে করে মিমাংসা করেছি। আমার শ্বাশুড়িকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে আর হাসপাতালের ৪০% আমার মেয়ের নামে লিখে দিবে।


এবিষয়ে বক্তব্য নিতে হাসপাতালটিতে গেলেও কোনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অভিযুক্ত ডা. শফিকুল ইসলাম শামীমের কার্যালয়ে গেলে সাংবাদিকদের ধাক্কা দিয়ে তিনি দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়েন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও স্থানীয় সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফের মন্তব্য নেয়াও সম্ভব হয়নি।


তবে টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান। তিনি জানান, ঘটনা তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ  তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য বিভাগের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। আর হাসপাতালটি সাময়িকভাবে যে বন্ধ রাখছিল সেটা খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কিন্তু ওই ডাক্তারদের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। আর বলে দেওয়া হয়েছে তারা কোন কোন কাজ করতে পারবে আর পারবে না। কিছু সমস্যা তো আছেই তা নাহলে তো আর অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হতো না, ওদের গাফিলতি ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী একশন তো আর আমার হাতে থাকে না, ওগুলো স্বাস্থবিভাগ দেখবে। লেনদেনের বিষয়টা মিথ্যা আর অভিযোগকারী মহিলা মামলা তুলে নেয়ার স্ট্যাম্প আমাদের কাছে আছে। মামলা কেন তুলে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বাদী।