lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
Last Updated 2024-02-23T03:48:07Z
জাতীয়

স্মৃতির আড়ালে ফজল-এ-খোদা

Advertisement


 

হৃদয় হোসাইন, বেড়া(পাবনা) প্রতিবেদকঃ 

ফজল-এ-খোদা ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মুহাম্মদ খোদা বক্স এবং মা মোসাম্মাত জয়নবুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি প্রথম সন্তান ছিলেন। মাত্র দশ বছর বয়সে বাবাকে হারান। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি। ১৯৬১ সালে পাবনার বনগ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসেন। ২০২১ সালের জুলাই মাসের ৪ তারিখ ৮০ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। 


 তিন সন্তানের জনক ফজল-এ-খোদা ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি,গীতিকার,ছড়াকার ও পত্রিকা সম্পাদক। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় সেরা ২০ গানের মধ্যে ফজল-এ-খোদার লেখা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম গানটি’ ১২তম স্থান পেয়েছিল।তিনি বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক ছিলেন। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২৩ সালে একুশে পদক প্রদান করে। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি সালাম সালাম হাজার সালাম গান বাজিয়ে পালন করা হয় মাতৃভাষা দিবস।

যার লেখা গান মাতৃভাষা আর ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান বাড়িয়ে দিলো। অথচ কালজয়ী এই গানের লেখক এর স্মরণে কোনো আয়োজন থাকে না জন্মস্থান সহ দেশের কোথাও। এমন কি জন্ম ও মৃত্যু দিবসেও থাকে না কোন প্রাতিষ্ঠানিক বিশেষ স্মরণ সভা। বিশেষ দিনে পাবনা বেড়া বাসীও তাকে মনে করে স্মরণ করে না। তাই তো বলা হয়েছে স্বার্থের এই দুনিয়ায় কে মনে রাখে কাকে। 


কর্মজীবনে ফজল-এ-খোদা তৎকালীন পাকিস্তান বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে ১৯৬৩ সাল থেকে কর্মজীবন শুরু করেন। পরের বছর তিনি পাকিস্তান টেলিভিশনেও তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭১-এ অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তাঁর লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ গানটি তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে। ২৫ মার্চের ক্রাকডাউনের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী টেলিভিশন থেকে গানটি জব্দ করে। ফজল-এ-খোদা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ২ নম্বর সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ফজল-এ-খোদা সে সময় রেডিও পাকিস্তানে কাজ করতেন। যুদ্ধে যাওয়ার পর কাজে অনুপস্থিত থাকার কারণ দেখিয়ে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল।

ফজল-এ-খোদার লেখা এবং মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের সুরারোপ করা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি ২০০৬ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০ গানের তালিকায় ১২তম স্থান পায়।এছাড়াও লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’, ‘বউ কথা কও পাখির ডাকে ঘুম ভাঙরে’, ‘খোকনমণি রাগ করে না’ ইত্যাদি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ১৯৭৫ সালের ৩ অক্টোবর ফজল-এ-খোদা’কে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ‘বঙ্গবন্ধু বেতার কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করার অভিযোগ আনা হয়। কিছুদিন পর তিনি এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেও বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে চাকুরি জীবনে নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার যখন, তখন তিনি বেতারে কাজ করেন। বাংলাদেশ বেতার হয়ে গেল রেডিও বাংলাদেশ। সরকারি কর্মচারী হয়েও ফজল-এ-খোদা লিখলেন এক কাব্যিক প্রতিবাদ ‘এমন তো কথা ছিল না...’। বশীর আহমেদের সুর আর মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদার সেই গানটি ছিল ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহঙ্গ/ সহসা পাখনা লুটোবে/ এমন তো কথা ছিল না’। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে রচিত এবং প্রচারিত এই গানটি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ও গাওয়া প্রথম গান। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তার হত্যায় ব্যথিত হয়ে ফজল-এ-খোদা নিজের দুঃখ-কষ্ট-ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই গানের মাধ্যমে।

ফজল-এ-খোদা ছড়াকার, সংগঠক ছিলেন। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। শিশুদের কাছে তিনি মিতাভাই হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সত্তর দশকে তিনি শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রকাশিত 'বেতার বাংলা'র সম্পাদক ছিলেন তিনি।

তার লেখা ১০টি ছড়াগ্রন্থ, ৫টির কবিতার গ্রন্থসহ তার মোট ৩৩টি বই প্রকাশিত হয়।