lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪
Last Updated 2024-05-23T07:03:49Z
শিক্ষা ও সাহিত্য

বাস-ট্রেনে বেড়েছে ভোগান্তি, মেট্রোরেলে প্রশান্তি - BD Prokash

Advertisement


মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। ২৯ ডিসেম্বর থেকেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই মেট্রোরেল সফলতার সাথে যাত্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পর পর স্টেশন গুলোতে বিরতি দিয়ে যাত্রী উঠানামা করানো হয়।বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী সাফল্য হচ্ছে মেট্রোরেল চালু করা। এই মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে কিছুটা হলেও ঢাকা শহরে স্বস্তি ফিরেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ঢাকায় আসা-যাওয়া করে শত শত বাস। মহাখালী বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল গুলোতে সবসময় যাত্রীদের আনাগোনা থাকে চোখে পড়ার মতো। কেউ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসছে, কেউবা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যখন ঢাকায় বাস গুলো প্রবেশ করে তখন এবং ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যখন বাসগুলো রওনা দেয় তখনই যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বাসগুলো অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘক্ষণ যানজটে পড়ে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা ও অনেক সময় চলে যায় কিন্তু যানজট লেগেই থাকে। অনেকে তীব্র যানজটের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে।বাসগুলো দীর্ঘলাইনে পড়ে থাকায় যাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।যানজটের ভোগান্তি ছাড়াও যাত্রীরা নানাক্ষেত্রে  ভোগান্তির শিকার হয়।ভাড়া নিয়ে প্রায়ই দেখা যায় হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা লেগে যায়। চালক  এক স্থান  থেকে অন্য স্থানে যেতে  দীর্ঘ সময় বিলম্ব করে থাকে । যাত্রীদের সময়ের মূল্য না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মত গাড়ি চালায়।গরমের দিনে বাসে চলাচল বেশি কষ্টদায়ক হয়।চালক ও হেলপাররা যাত্রীদের সুবিধা চিন্তা না  করে  প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত যাত্রী তুলে। এতে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঢাকা শহরে অসংখ্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে থাকে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশে  বর্তমানে ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। 



এগুলো প্রায়ই নানা দুর্ঘটনার শিকার হয়। প্রতি বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ( বিআরটিএ)।



সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এ ব্যাপারে নেওয়া হয় না। এ ভোগান্তিগুলো সরকার কাঁধে নেয় না,জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দেয়। এছাড়াও নারীরা অনেক সময় চালক-হেলপার দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।



 গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সংকলিত করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ২০১৯ ও ২০২১ সালে গণপরিবহনে নারী নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছিল। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০১৯ সালে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৫২ টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৬ টি ধর্ষণ, ১২ টি দলবদ্ধ ধর্ষণ, ৯ টি ধর্ষণচেষ্টা ও ১৫ টি যৌন হয়রানি। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে গণপরিবহনে ৬৮ টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২৩ টি ধর্ষণ, ১১ টি দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ৩৪ টি যৌন হয়রানি। 



প্রথম আলোয় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে বাসে ৫ টি দলবদ্ধ ধর্ষণ ও একটি ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এক নারী যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়।পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে  নারীদের জন্য  নিরাপত্তা আজও মজবুত হয়নি।



এছাড়া ট্রেনে ও যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন ট্রেনে যাত্রীরা  চলাচল করে থাকে। প্রায়ই দেখা যায়,  প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করে থাকে। ট্রেনে ঝুলে থাকে অনেকে, অনেকে আবার ছাঁদের উপর বসে থাকে। ট্রেনের সামনের দিকেও অনেকে ঝুলে থাকে। প্রতিনিয়ত এই যে যাত্রীদের মধ্যে  অসচেতনতা,অবহেলা  দেখা যাচ্ছে  তার জন্য দায়ী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনেই যাত্রীদের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা নেই। 



ট্রেনেও চলাচলের ক্ষেত্রে নারীদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।প্রথম আলোয় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা তুরাগ কমিউনিটি ট্রেনের একটি বগিতে নিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।



ঢাকা শহরে জনগণের চলাফেরায় ভোগান্তি থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য ও জনগণের সময়ের মূল্য নিশ্চিতের জন্য  সরকার যে মেট্রোরেল চালু করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। মেট্রোরেলে নারীদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা।এ মেট্রোরেলের জন্য  মানুষ খুব অল্প সময়েই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যায়। যেখানে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে পূর্বে আনুমানিক ২ থেকে আড়াই ঘন্টা লেগে যেত, কিন্ত বর্তমানে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। প্রতিদিনই  মেট্রোরেলে মানুষের ভীড় বাড়ছে। ইতিমধ্যে টেলিভিশন, পত্র -পত্রিকায় আলোচনার জায়গা করে নিয়েছে মেট্রোরেল। মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের জনপ্রিয়তা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 


বাদশাহ আব্দুল্লাহ 

সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট