lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪
Last Updated 2024-05-17T16:28:52Z
আইন ও অপরাধ

খাগড়াছড়িতে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেফতার - BD Prokash

Advertisement


মোঃ মাসুদ রানা, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ 


খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি নির্জন এলাকায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এর স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ গুম। মামলা রুজুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেফতার।



শুক্রবার (১৭ মে)  জেলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দুপুরে দিকে সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মুক্তা ধর, পিপিএম (বার)। 



ভিকটিম মৃত ঈশ্বরী বালা ত্রিপুরা (৫৫) গত ১১/০৫/২৪ তারিখে ঝড় বৃষ্টির কারণে এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় পাশের বাড়িতে সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ ঘটিকার দিকে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। পরবর্তীতে সে আর বাড়িতে না ফেরায় বাদী সম্ভাব্য সকল স্থানে এবং আত্মীয়—স্বজনের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করে ভিকটিমকে না পেয়ে গত ১৩/০৫/২৪ তারিখে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। নিখোঁজ ডায়েরীর সূত্র ধরে তদন্তকালে পুলিশ গত ১৫/০৫/২৪ তারিখে খাগড়াছড়ি সদর থানাধীন ৫নং ভাইবোনছড়া ইউপির ৯ নং ওয়ার্ডের কলাবন পাড়ার সেগুনবাগান থেকে ভিকটিম ঈশ্বরী বালা ত্রিপুরা এর বিবস্ত্র দেহ হাত, পা, গলা বাধাঁ এবং আংশিক পঁচা অবস্থায় উদ্ধারপূর্বক ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। উক্ত চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার বিষয় ভিকটিমের স্বামী দ্রোন চার্য্য ত্রিপুরা ১৫/০৫/২৪ তারিখে বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। 



সাংবাদিক সম্মেলনে খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মুক্তা ধর, পিপিএম (বার) উক্ত চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উম্মোচন ও ঘাতকদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসারদের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করে এবং হত্যা মামলাটি গভীর ও নিবিড় ভাবে তদন্ত করে রহস্য উম্মোচনের জন্য সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।



পুলিশ সুপার জনাব মুক্তা ধর, পিপিএম (বার) সার্বিক দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে উক্ত ক্লুলেস মামলার রহস্য উন্মোচিত হয়। তদন্তেপ্রাপ্ত ঘাতক আসামী বিবেকানন্দ ত্রিপুরা (৩৬), পিতা— শর্পদং ত্রিপুরা, সাং— চন্দ্র কুমার পাড়া, থানা— সদর, জেলা— খাগড়াছড়িকে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি থানাধীন ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতে পলায়নের চেষ্টা করাকালে গ্রেফতার করা হয়।



প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরা বাদীর ছোট ভাইয়ের মেয়ের স্বামী হন। অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরা আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় ছিলেন। ঘটনার দিন ১১/০৫/২৪ তারিখ রাত অনুমানিক ০৮.০০ ঘটিকার দিকে ভিকটিম ঈশ্বরী বালা ত্রিপুরা মোবাইল চার্জ দিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরার সাথে দেখা হয়। 



এ সময় ভিকটিমের গলায় স্বর্ণের চেইন এবং কানে স্বর্ণের দুল দেখতে পেয়ে অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরা উক্ত স্বর্ণের জিনিসগুলো ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করেন। অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরা ভিকটিমের সাথে কথা বলতে বলতে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ভিকটিমের স্বর্ণের জিনিসগুলো ছিনিয়ে নেন। 



ভিকটিম ঈশ্বরী বালা ত্রিপুরা অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরার নিকটাত্মীয় হওয়ায় স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টিতে পারিবারিকভাবে ঝামেলা হবে এই ভেবে অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরা ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। একপর্যায়ে রাত্রে অন্ধকারে অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরা ভিকটিমকে উপর্যুপরি কিল, লাথি, ঘুষি মারতে থাকেন এবং কয়েকবার কাঁধে তুলে আছাড় মারেন। ভিকটিম এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে গেলে অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরা ভিকটিমের শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ভিকটিমের লাশ গুম করার জন্য দুর্গম পাহাড়ি এলাকার কলাবন পাড়ায় নিয়ে গিয়ে ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে হাত, পা ও গলা বেঁধে ঝোপঝাড়ের নিচে ডালপালা দিয়ে ঢেকে রাখেন।



ঘটনার পরের দিন ১২/০৫/২৪ তারিখে অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরা ভিকটিম থেকে ছিনিয়ে নেয়া স্বর্ণালংকার গুলো খাগড়াছড়ি বাজারের একটি স্বর্ণালংকারের দোকানে নিজের স্ত্রীর স্বর্ণালংকার বলে বন্ধক রাখেন যা সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। অভিযুক্তের দেওয়া তথ্য এবং দেখানো মতে খাগড়াছড়ি থানা পুলিশ ১৬/০৫/২৪ তারিখে স্বর্ণালংকারের দোকান থেকে ভিকটিমের পরিহিত একটি স্বর্ণের চেইন ও একজোড়া কানের দুল জব্দতালিকা মূলে জব্দ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরা (৩৬) অত্র মামলার ভিকটিম মৃত ঈশ্বরী বালা ত্রিপুরাকে (৫৫) হত্যার দায় স্বীকার করেছে। 



গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত বিবেকানন্দ ত্রিপুরাকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে পুলিশ রিমান্ডে এনে আরোও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।