lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪
Last Updated 2024-05-24T12:09:25Z
সারাদেশ

ঝিকরগাছায় কলেজ ভবনে আওয়ামী লীগের কার্যালয় - BD Prokash

Advertisement


জহিরুল ইসলাম,যশোর প্রতিনিধি


যশোরের সরকারি শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজের একটি দ্বিতল ভবন দখল করে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় করা হয়েছে। অভিযোগ, পাঁচ বছর ধরে তৎকালীন সংসদ সদস্য ডাঃ নাসির উদ্দিন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা এটি দখল করে প্রথমে সংসদ সদস্যের কার্যালয় করেন।



পরে সেটিকে উপজেলা আ.লীগের দলীয় কার্যালয় হিসেবে এখনো পর্যন্ত ব্যবহার করে আসছেন তারা। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, সাবেক এই সংসদ সদস্যের ভায়রা এই ভবন পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নিলেও একটি টাকাও পরিশোধ করেননি।



বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, এ ভবনটির মেইন গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ভেতরে বড় ব্যানারে লেখা ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঝিকরগাছা উপজেলা শাখা, অস্থায়ী কার্যালয়’। পাশাপাশি আরেকটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘কমিউনিটি পুলিশিং বুথ (কার্যালয়) ঝিকরগাছা থানা যশোর’।



এমন কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের একাংশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষা অনুরাগীরা ক্ষুব্ধ। কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবন উদ্ধারে এত দিন কোনো পদক্ষেপ না নিলেও বর্তমানে সরব হয়েছেন।



ঝিকরগাছা সরকারি শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ঝিকরগাছা মিতালী হলরোডের এই দ্বিতল ভবনটি একসময় বিজ্ঞান ভবন ও ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে ২০০১ সালে বিএনপির কিছু নেতা সেটি দখল করে তাদের দলীয় কার্যালয় করেন। পরে সেটি উদ্ধার হলেও পাঁচ বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভায়রা নুরুল আমিন দুদু পাঁচ বছরের জন্য মাসিক পাঁচ হাজার টাকার ভাড়ার চুক্তি করেন কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি কোনো ভাড়া পরিশোধ করেননি।



অধ্যক্ষ জানান, সম্প্রতি নুরুল আমিন দুদু একটি আবেদনে জানিয়েছেন তিনি আর ওই ভবন ব্যবহার করবেন না। তবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কলেজকে ভবন বুঝিয়ে দেননি।



তিনি আরও জানান, সম্প্রতি ভবনটি উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি আইসিটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে।



ভবনটি ব্যবহার সংক্রান্ত একটি চুক্তিনামা এসেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে অন্য কাউকে ঘর হস্তান্তর করতে পারবে না বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ নিয়ম না মেনেই সাবেক সংসদ সদস্য ভবনটি দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।



কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। মিতালী হলরোডে কলেজটির একটি ভবনসহ ক্যাম্পাস রয়েছে। সেটি এক সময় বিজ্ঞান ভবন ও ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতারা এটি তাদের দখলে রাখে।



দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, এ ভবনের নিচতলায় তিনটি রুম রয়েছে। একটি ব্যবহার করেন সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মো. নাসির উদ্দিন, অন্যটি ব্যবহার করেন বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. সেলিম রেজা। অন্য আরেকটি রুমের সামনে কমিউনিটি পুলিশিং এর সাইনবোর্ড থাকলেও সেটি সর্বদা বন্ধ পাওয়া যায়। ভবন ছাড়াও এখানে অনেক বড় খোলা জায়গা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সময়ে সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।



এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, শুনেছি ওই ভবনে কমিউনিটি পুলিশের সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। তবে সেখানে কোনো কার্যক্রম নেই বা আমি সেখানে কোনো দিন বসিনি।



এ বিষয়ে জানতে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুলকে মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তার ফোন রিসিভ হয়নি।



তবে উপজেলা আ.লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, মিতালী হল রোডের ওই ভবনটি সরকারি কলেজের সম্পদ। সেলিম রেজা নামের একজন আ.লীগের কার্যালয় নাম দিয়ে এটি অবৈধভাবে দখল করে আছে। এটা কখনোই আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় না।



এ বিষয়ে জানতে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দিনকে মোবাইলে কল দেওয়া হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।



উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিলে ভবন উদ্ধারের জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।