Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০২৪ সালের ৮ই মে অনুষ্ঠিত হয় বেড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনের প্রতিক বরাদ্দের পর সকল প্রার্থীর কর্মীগণ প্রচার - প্রচারণা ও ভোট প্রার্থনা শুরু করে। নির্বাচনী কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে ২৬শে এপ্রিল বিকাল ৫:৩০ মিনিটে বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানাধীন রুপপুর ইউনিয়নের বারুনীতলায় হেলিকপ্টার প্রতিকের সমর্থক বেলাল শেখ গং ও ঘোড়া প্রতিকের সমর্থক ইসমাইল হোসেন সাগর গংদের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। উক্ত সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৬-৭ জন আহত হয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত সাপেক্ষে থানা কর্তৃপক্ষ ইসমাইল হোসেন সাগর গং এর পক্ষের আলাউদ্দিন শেখের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু করে এবং বিবাদীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে।
তথাপিও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এ ঘটনা কে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে মারধর, নারী ও শিশু নির্যাতন (ধর্ষণ চেষ্টা) ও অন্ত:সত্তা কে নির্যাতনের মাধ্যমে ব্রুন হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে পৃথক ৩ টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা দায়ের করেন ইসমাইল হোসেন সাগর গং এমনটাই দাবি করেন বেলাল শেখ গং এর সদস্য গণ।
বেলাল শেখ গং এর সদস্যরা জানান, ২৬ শে এপ্রিল (শুক্রবার) বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিটে আমাদের সাথে ওদের মারামারি হয়। এ ঘটনায় তারা আমাদের ১১জনকে নামিক ও ৫/৬ জন কে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করে। তারপর থেকে আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কোন রকম বিশৃঙ্খলা জনীত কর্মকান্ড ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড করি নাই। তথাপিও তারা আমাদের আইনগত ভাবে হেনস্তা, আর্থিকভাবে ক্ষতিসাধন ও মানহানির লক্ষ্যে আদালতে তিনটি মিথ্যা,ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে।
আদালতে দায়েরকৃত পৃথক ৩ টি অভিযোগের মধ্যে রুপপুর বারুনীতলা গ্রামের আকবার আলী শেখের মেয়ে সীমা খাতুন (৩৫) বাদী হয়ে জেলা পাবনার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল জজ আদালতে মো: বেল্লাল শেখ (৩৫) ও স্বাধীন শেখ (২১) এর বিরুদ্ধে ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) সালের নারী নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪)এর খ ধারা সহ দন্ডবিধির ১৪৮/৪৪৮/৩৭৯/৩২৪/৩২৬/৩০৭ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। ২৮শে এপ্রিল ২০২৪ তারিখে দায়েরকৃত অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন ২৬শে এপ্রিল সন্ধা ৬:২০ মিনিটে তার পিতা আকবার আলী শেখের বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ চেষ্টা, অশ্লীল ভিডিও ধারণ ও মারধর করে বেল্লাল শেখ ও স্বাধীন শেখ।
এরপর ৭ই মে ২০২৪ তারিখে রুপপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন শেখের স্ত্রী কুলসুম খাতুন (৬২) বাদী হয়ে জেলা পাবনার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্যাট আমলী আদালত -৬ এ মো: সালাম শেখ (৪৫), ইমন শেখ (২২) ও স্বাধীন শেখ (২২) কে আসামী করে দন্ডবিধির ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৫৪/৫০৬ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন ২৬শে এপ্রিল (শুক্রবার) বিকাল ৫ টা ৫০ মিনিটে তার বসত বাড়ির সামনে তাকে ও তার মেয়েকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে হাঁড় ভাঙা জখম করে।
সর্বশেষ ১২ই মে ২০২৪ তারিখে ইসমাইল হোসেন সাগর গং এর অন্যতম রুপপুর গ্রামের মোতালেব শেখের স্ত্রী রীনা খাতুন (৩৬) বাদী হয়ে জেলা পাবনার বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্যাট আমলী আদালত -৬ এ মো: বাবু সরদার (৩৮),সৌরভ (১৮) ও শাকিল (২৫) কে অভিযুক্ত করে দন্ডবিধির ৩৪৮/৩২৩/৩০৭/৩১৩/৩১৬/৩৪ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ৩০শে এপ্রিল সকাল ৯ টার দিকে অভিযুক্ত গণ বাদীনীর শশুর বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে মারধর ও পরিকল্পিত ভাবে পেটে আঘাত করে সন্তান (পেটে থাকা) হত্যা করে।
অভিযুক্ত /আসামী বেল্লাল শেখ গং দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৬শে এপ্রিল (শুক্রবার) বিকাল ৫:২০ মিনিটে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ (মারামারির) ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনরকম সংঘর্ষ, হামলা, ধর্ষণ চেষ্টা, নারী নির্যাতন, শ্লীলতাহানির মত ঘটনা ঘটেনি। রুপপুর বারুনীতলা এলাকার একাধিক ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৬ শে এপ্রিল (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে মারামারি হওয়ার পর থেকে বেল্লাল শেখ (বেলাল ডাক্তার) গ্রুপের আহত'রা হাসপাতালে ও বাকিরা পুলিশ আতংকে এলাকাছাড়া হওয়ায় পুরো এলাকা প্রায় পুরুষ শুন্য ছিল। তাদেরকে পুনরায় পুনরায় হেনস্তা ও এলাকার প্রভাব বিস্তার করতে ইসমাইল হোসেন সাগর ও মোতালেব গংরা এসকল মামলা করছে যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
কুলসুম খাতুনের দায়েরকৃত অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, তার মেয়ে মাজেদাকে ২৬শে এপ্রিল ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করলে ২৭শে এপ্রিল তারিখে তারা রেফার্ড করে তবে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে কুলসুম বা মাজেদা নামে কারও ভর্তির তথ্যাদি পাওয়া যায় নি।হাসপাতালের দ্বায়িত্বরত ব্যক্তিরা জানান , এই নামে কোন রোগীর ভর্তি সংক্রান্ত কোন তথ্যাদি নেই তবে কোন ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা নিতে পারে।
সীমা খাতুন তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২৬ শে এপ্রিল সন্ধা ৬ টা ২০ মিনিটে বেলাল শেখ ও স্বাধীন শেখ তাকে ধর্ষণ চেষ্টা চালায় কিন্তু পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভর্তির তথ্য অনুযায়ী ঐদিন রাত ৭ টা ২০ মিনিটে তিনি সেখানে ভর্তি হন। সেই অনুযায়ী বেল্লাল শেখের আকবার আলী শেখের বাড়িতে উপস্থিত থাকা প্রায় অসম্ভব।
রিনা খাতুন তার মামলায় উল্লেখ করেন, ৩০ এপ্রিল সকাল ৯ টায় বাবু সরদার, সৌরভ ও শাকিল শশুর বাড়ীতে প্রবেশ করে মারধর, আঘাতের মাধ্যমে পেটের সন্তান হত্যা ও তাকে হত্যা চেষ্টা করে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, ৩০ শে এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকাল ৯ টায় সৌরভ মাসুমদিয়া ভবানী উচ্চ বিদ্যালয়ে ছিল ও সাকিল কাজিরহাট ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় গমন করে।
এদিকে নির্বাচনী ঝামেলা কে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে একের পর এক মামলা করায় এলাকা জুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন সাগর ও মোতালেব গংদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব হয় নি।