Advertisement
মুহাম্মদ মুছা মিয়া, মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধিঃ নরসিংদীর মাধবদীতে মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহবুবুল হাসান সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছে। নিহত মাহবুবুল হাসান(৪০) ভগীরথপুর গ্রামের আমিন উদ্দিনের ছেলে। জানা যায় গতকাল ২৮ মে রাত আনুমানিক পৌনে ১২ টায় ভগীরথপুর চেয়ারম্যান মার্কেটে অবস্থিত পার্টি অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে সঙ্ঘবদ্ধ সন্তাসী দল অতর্কিত হামলা চালায়। প্রথমে ককটেল ও গুলি করে পরে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় খুনিরা। এসময় পাপ্পু ও ফরহাদ নামে আরো দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হামলার পর স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে ডাক্তার মাহবুবুল হাসানকে মৃত ঘোষনা করে। এঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতংকে আছে স্থানীয়রা। উল্লেখযোগ্য যে বেশ কয়েক বছর যাবত মেহেরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে৷ ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের ফলে কিছুদিন পর পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত। প্রাথমিকভাবে দ্বন্দ্বের ফলেই নারকীয় এই হত্যাকান্ডটি ঘটতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। গত ৮ মে নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্বের দ্বন্দ্ব আবারো মাথাচারা দিয়ে উঠে। দলীয় কোন্দলের কারণে মাহবুবুল হাসান নির্বাচন করে কাপ পিরিচ মার্কার প্রার্থী মোঃ আনোয়ার হোসেনের পক্ষে। অন্য গ্রুপগুলো নির্বাচন করে আনারস মার্কার প্রার্থী আব্দুল বাকিরের পক্ষে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেহেরপাড়ার বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনের দিনও দুই পক্ষের সংঘাত হয়। দেশীয় অস্ত্রসহ রড, লাঠি উদ্ধার করে পুলিশ। নির্বাচনের দুইদিন পর ১০ মে আবারও আনারস ও কাপ-পিরিচ মার্কার সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন দুই পক্ষের প্রায় ৭ জন আহত হয় এবং প্রায় ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস ভাংচুর করা হয়। এতকিছুর পরও প্রশাসনের কার্যত কোনো পদক্ষেপ চোখে পরেনি স্থানীয়দের।
মাধবদী থানাধীন আমদিয়া ইউনিয়নেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এক মাসও পেরুইনি আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মেম্বার রুবেলকে দিনে দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
হত্যার সময় মাহবুবুল হাসানের সাথে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী রবিনসহ স্বজনরা জানান অফিসের কাজ শেষ করে বাড়িতে আসার সময় কয়েকজন মাহবুবুল হাসান ভাইয়ের সাথে কথা বলতে চাইল। এসময় আমাদের পিছনে আসতে বলে। কিছুদূর আসার পর তারা ভাইকে গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
মাহবুব চেয়ারম্যানের ছোট ভাই হাফিজুল হাসান ও হাফেজ মো. অলিউল্লাহ বলেন, ‘ভাইয়ের জনপ্রিয়তার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার প্রতিপক্ষের লোকেরা ভয় পেয়েছে, কারণ তিনি বেঁচে থাকলে আগামী নির্বাচনে তারা বিজয়ী হতে পারবে না। তারা বহুবার ভাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। তারা ভাইয়ের জন্য মাদক কারবারি, চাঁদাবাজি করতে পারে না। এজন্য তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভাই হত্যার বিচার চাচ্ছি। এই হত্যার বিচার না হলে ভালো মানুষরা জনগণের সেবা করতে আসবে না।’
সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মাহবুবুল হাসানকে হত্যার বিষয়ে মাধবদী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুজ্জামান বলেন রাত পৌনে ১২টায় বাড়ি যাওয়ার পথে তার উপর দূর্বৃত্তকারীরা হামলা করে। ককটেল ফুটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে। গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়লে একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরে মৃত্যু হয়। ১২ টা সময় আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই ও পরিবেশ যেন স্বভাবিক থাকে সেই ব্যবস্থা নেই। নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু পক্ষের দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহে পুলিশ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করেছে। তদন্তের স্বার্থে আটককৃতদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
নিহত চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসানের জানাজা দুপুর ২:৩০ টায় খালপার শাহী ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় জানাজার নামাজের পূর্বে বক্তব্য রাখেন নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লেঃ কর্ণেল (অব:) মোঃ নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতিক, পলাশ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন, নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইশরাক হোসেন মনির ভূইয়া, নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন, পাঁচদোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান, নুরালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকারিয়া কমিশনার, মহিষাশুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি কাউছার আহমেদ, ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও মাহবুবুল হাসানের চাচাতো ভাই আরিফ বিন মেহেরউদ্দিন প্রমূখ।