Advertisement
সাঁথিয়া পাবনা প্রতিনিধি:
কোরবানির ঈদকে ঘিরে কামার পল্লিতে বেড়েছে ব্যস্ততা। ঢুং-টাং শব্দতে ঈদকে স্বাগত জানাচ্ছে কামাররা।তবুও দুশ্চিন্তার কপালে ভাজ পড়েছে তাদের, কামারপল্লীতে চোখ রাঙাচ্ছে চীনা সরঞ্জাম।
সাঁথিয়ার আফড়া গ্রামের রাজদ্বীপ কামার তপন কুমার ৪০ বছর ধরে এ পেশায় সম্পৃক্ত। এ আয়েই চলে তার চার সদস্যের সংসার। ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে তার। কিন্তু উপকরণের দাম নিয়ে চিন্তিত তিনি, ঈদকে সামনে রেখে উপকরণের চাহিদা বাড়লেও দুশ্চিন্তায় এ উপজেলার প্রতিটি কামার।
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দম ফেলানোর ফুরসত নেই তাদের। ঈদে মাংস কাটাকুটিতে চাই ধারালো দা, বটি, ছুড়ি। এসব উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত কামার পল্লি। কয়লার চুলোয় দগদগে আগুনে লোহায় ওস্তাদ -সাগরেতের ছন্দময় পেটাপেটিতে মুখোরিত কামারপাড়া। ধারালো সব সরঞ্জাম ধার দিতে গ্রামে গ্রামে ছুটছে অনেকে।
বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়লে বাড়েনি তাদের পণ্যের দাম জানান আমির মোল্লা। তিনি বলেন আগে পাথর কয়লা ৪০ কেজি এক বস্তার দাম ছিলো ৬০০ টাকা, কিন্তু এখন বেড়ে তা ২ হাজার ৬০০ হয়েছে। আগে ৬০ টাকায় র্যাত পাওয়া গেলেও এখন তা ৩৫০ টাকা। লোহা ছিলো ৫০ টাকা কেজি এখন কিনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা দিয়ে। এ ব্যবসায় যে আয় এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি । অনেকে এ পেশা থেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।
কাশিনাথপুরের মোদক পাল, আশোক দাস, বনীমাল ঘোষ, আতাইকুলার রাজদণ্ড রায়, আশাসিশ চন্দ্র দাস, মাধব কুন্ডু, চিনাখড়ার আরশেদ, আলহাজ্ব প্রমানিক জানান কোরবানিতে হাজারো গরু, ছাগল, মহিষ ভেড়া কোরবানি হয়। এসব গরু পশু জবাই থেকে শুর করে কাটাকুটিতে ছুড়ি চা-পাতিসহ ধাতব সব জিনিসের প্রয়োজন হয়।
এসব চাহিদা পূরণে প্রায় একমাস আগে থেকেই কাজ শুরু হয় পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে দম ফুরানোর ফুসরত থাকেনা কামারদের কাঁচা -পাকা লোহা দিয়ে তৈরি হয় এসব ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা-ছুড়ি বেশি দামে বিক্রি হয়।
কামাররা জানান, দা-আকৃতি মানভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি হয়। ছুড়ি ৭০০ থেকে ১০০০ হাজার, হাড় কাটার চা-পাতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বটি ৪০০ টাকা এবং ধার করার জন্য ৯০ টাকা নেওয়া হচ্ছে । তব এক্ষেত্রে সবার কাছে সমান দামে বিক্রি করা হয়না, ক্রেতা-বিক্রেতার দরদাম করে কম বেশি করার সুযোগ আছে।
তবে এতদিন দেশি সরঞ্জাম ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে বাজারে চোখ রাঙাচ্ছে চীনা সরঞ্জাম। চীনা সরঞ্জাম তুলনামূলক দাম কম হওয়ার সাধারণ সেই দিকেই ছুটছে। এতে করে অনেক কামার এ পেশা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, শুধু কামার নয় সমাজে পিছিয়ে পড়া সকল কর্মক্ষম লোকদের সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা। প্রচীন এ পেশা টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর আমরা। কোন কামার বয়স্ক হলে বয়স্ক ভাতা পাবে, নারী বিধবা হলে বিধবা ভাতা পাবে। তাছাড়াও তারা যদি কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে চায়, তাহলে তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে।