lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
রবিবার, ২ জুন, ২০২৪
Last Updated 2024-06-02T12:28:23Z
সারাদেশ

কিস্তি দিমু না পানের বর গুছামু, বরগুনায় ৩ হাজার ৫০০ পানচাষি ক্ষতিগ্রস্ত - BD Prokash

Advertisement


এইচ এম রাসেল, বরগুনা প্রতিনিধি:


‘আগের দুই বইন্নায় দুইবার মোর পানের বর (বরজ) ভাঙছে, হ্যারপর তিনডা এনজিও দিয়া সাড়ে তিন লাখ টাহা লোন লইয়া আবার পানের বর করছি। এইবারের বইন্নায় কিছু থুইয়া যায় নাই, সব মাডির (মাটি) সাথে মিশাইয়া দিয়া গ্যাছে। এহন এনজিওআলারা জ্বালায় কিস্তির লইগ্গা, হেইয়া দিমু না পানের বর গুছামু। মোর এহন আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নাই।



এমন কথা বলতে বলতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের পানচাষি রবিন (৪০)। ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রবিন  বিধ্বস্ত পানের বরজের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। ১৯ বছর আগে ৫০ শতাংশ জমিতে পানের বরজ দেন তিনি। তাতে মোটামুটি ভালোভাবেই চলছিল দুই মেয়েসহ তাঁর চার সদস্যের পরিবার। কিন্তু ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে দু’বার বিধ্বস্ত হয় পানের বরজ। এর পর নতুনভাবে পানের বরজ গড়তে বেসরকারি সংগঠন হীড বাংলাদেশ থেকে দেড় লাখ এবং সংগ্রাম ও আশা থেকে এক লাখ করে মোট সাড়ে তিন লাখ টাকা ঋণ নেন রবিন। পান বিক্রি করেই সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার টাকা করে এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতেন তিনি।



কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে পুরো বরজ বিধ্বস্ত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। রবিন জানান, এই বরজ পুনরায় ঠিক করতে অন্তত তিন থেকে চার লাখ টাকা প্রয়োজন। তাই একদিকে ঋণের বোঝা মাথায়, অন্যদিকে পানের বরজ ঠিক করা। পাশাপাশি সংসার খরচ জোগাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন দিশেহারা রবিন। 



রবিনের প্রতিবেশী পানচাষি আবদুল ওহাবেরও একই অবস্থা। তাঁর স্ত্রী শাহিনুর জানান, নিজেদের ৪০ শতক এবং অন্যের ২০ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে পানের বরজ দিয়েছেন তারা। এর আয় দিয়ে ভালোভাবেই চলছিল চার সদস্যের পরিবারের ব্যয়। কিন্তু রিমালের আঘাতে পুরো পানের বরজ বিধ্বস্ত হয়ে এখন পথে নেমে গেছেন। তাদেরও রয়েছে বিভিন্ন সংস্থায় ঋণের কিস্তি। 



শাহিনুর বলেন, এ বরজ পুরোপুরি ঠিক করতে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন। এত টাকা কোথায় পাবেন তারা? আবদুল ওহাব বলেন, ‘মোরা কীভাবে বাঁচমু, হেয়া কইতে পারি না, একমাত্র আল্লাহর ওপরে ভরসা।’ রবিন অথবা ওহাবের মতো একই অবস্থা ওই গ্রামের বাদল হাওলাদার, নিজাম উদ্দীনসহ অন্তত ১০০ পানচাষির। সবার পানের বরজ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। 



বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, রিমালের আঘাতে জেলার ছয় উপজেলায় ছোট-বড় ৩ হাজার ৫০০ পানচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৭৩৬ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতি হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া জেলায় এবারের ঘূর্ণিঝড়ে ২৯ হাজার ৬৫০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৪৮ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস হয়েছে। এতে ১৭৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জোবায়দুল আলম বলেন, পানচাষিদের ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো বরাদ্দ অথবা ভর্তুকির ব্যবস্থা নেই। তবে কোনো বরাদ্দ পাওয়া গেলে তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।