lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪
Last Updated 2024-06-27T11:21:25Z
জাতীয়

বরগুনায় ২০০৯ সালের নির্মিত লোহার সেতু গুলোই ভেঙ্গে যাচ্ছে, রহস্য উদঘাটনের দাবী - BD Prokash

Advertisement

 

বরগুনা প্রতিনিধি:


২০০৮-০৯ অর্থ বছরে নির্মিত ২০ সোহার সেতু ভেঙ্গে যাচ্ছে। এর রহস্য উদঘাটনের দাবী এলাকাবাসীর। দ্রুত অনুসন্ধান করে দোষীদের শাস্তি দাবী করছেন তারা।  



জানাগেছে, আমতলী উপজেলার ৬০ টি লোহার সেতু রয়েছে। ওই সেতু গুলোর মধ্যে ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ২০ টি লোহার সেতু নির্মাণ করে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ওই সেতুগুলো নির্মাণে অনিয়ম ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সেতুগুলোতে রেলপাটির বীম বসানোর কথা থাকলেও ঠিকাদারগণ নরমাল বীম বসিয়ে সেতু নির্মাণ করেছেন। ওই সেতুগুলোর ঠিকাদার ছিলেন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধাসহ বেশ কয়েকজন। ওই সময় তারা প্রভাব খাটিয়ে দায়সারা সেতু নির্মাণ করে টাকা তুলে নেয়। অল্প দিনের মধ্যেই ওই সেতু গুলোর লোহার বীম অকেজো হয়ে যায়। ফলে সেতুগুলো অত্যান্ত ঝুকিপুর্ণ  হয়ে পড়ে। গত ১৬ বছরে ওই সেতুগুলো ঝুকিপুর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে নির্মিত সেতুগুলোর ঠিকাদার ও তৎতালিন উপজেলা প্রকৌশলী আতিকুর রহমানের ব্যপক অনিয়মের কারনে সেতুগুলো অল্প দিনেই অকেজো হয়ে যায়। ফলে একের পর এক সেতু ভেঙ্গে যায়। এর মধ্যে হলদিয়া ও আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নেরই সব চেয়ে বেশী। হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া খালে নির্মিত তক্তাবুনিয়া সেতু, মল্লিক বাড়ী সেতু, কাঠালিয়া সেতু, উত্তর টেপুড়া সেতু,  হলদিয়া হাট সেতু, বড় মোল্লা বাড়ী সংলগ্ন সেতু, রাঢ়ীবাড়ী সেতু, সোনাগজা বাঁশবাড়িয়া সেত্।ু  অপর দিকে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর সেতু, উত্তর সোনাখালী সেতু, মুসুল্লী বাড়ী সেতু ও  চাউলা সেতু ভেঙ্গে গেছে। গত ১৬ বছরে এ সেতুগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। 



বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, তক্তাবুনিয়া সেতু, মল্লিক বাড়ী সেতু, কাঠালিয়া সেতু, হলদিয়া হাট সেতু, বড় মোল্লা বাড়ী সংলগ্ন সেতু, রাঢ়ী বাড়ী সেতু, সোনাগজা বাঁশবাড়িয়া সেতু ও আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর সেতু, উত্তর সোনাখালী সেতু, মুসুল্লী সেতুও  চাউলা সেতু প্রায় ভাঙ্গা ও লোহার বীম ভেঙ্গে গেছে। অটো রিকসা উঠলেই সেতু দোলে। 



সোনাখালী খালে নির্মিত উত্তর সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন সেতু, গাজীপুর খালে মুসুল্লী বাড়ী সেতু গত পাঁচ বছর আগে ভেঙ্গে গেছে। উত্তর সোনাখালী সেতুকে মানুষ কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করছে। মুসুল্লী বাড়ীর সেতু মাঝখান দিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় চলাচল একেবারে বিছিন্ন হয়ে গেছে। হলদিয়া ইউনিয়নে কাঠালিয়া সেতু অত্যান্ত ঝুকিপুর্ণ, সেতুর একাংশ দেবে গেছে। মল্লিক বাড়ী সেতু লোহার বীম ভেঙ্গে গেছে। উত্তর টেপুরা সেতুর লোহার বীম একেবারে ভেঙ্গে গেছে। স্থানীয়রা সেতুর পাশে কাঠের সেতু নির্মাণ করে চলাফেরা করছে। একই ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া খালে তক্তাবুনিয়া সেতু গত তিন বছর আগে মাজখান দিয়ে ভেঙ্গে গেছে। ওই সেতু দিয়ে চলাচল বিছিন্ন রয়েছে। পাশে স্থানীয়রা বাঁশের সাকো দিয়ে চলাচল করছেন। এছাড়া ২০ সেতুর অধিকাংশ সেতুই চলাচল অনুপোযোগী। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয়দের দাবী ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে নির্মিত এ সেতুগুলো ভেঙ্গে গাডার সেতু নির্মাণের। 



পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে তৎকালিন আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী যতগুলো  লোহার সেতু নির্মাণ করেছেন তার অধিকাংশই ভেঙ্গে গেছে। ওই সেতুগুলোতে রেলপাটির বিম দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারগত তা দেয়নি। তারা উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে আতাত করে দায়সারা সেতু নির্মাণ করেছেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই তা ভেঙ্গে গেছে।  অনুসন্ধান করে এ সেতুগুলো ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ চিহ্নিতের দাবী জানিয়েছেন তিনি। 



তক্তাবুনিয়া গ্রামের দুদা হাওলাদার বলেন, রাতের বেলায় এ সেতু ভেঙ্গে পরেছে। দিনের বেলায় ভেঙ্গে পরলে প্রাণহানী ঘটনা রটতো। আল্লায় রক্ষা করছে। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা এ সেতু নির্মাণ করেছেন। কি কারনে অল্প দিনে সেতু ভেঙ্গে গেছে তা ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা জানেন। তবে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর অনিয়মের কারনেই এমন ঘটনা ঘটেছে।



মাছুয়া খালী এলাকার রুবেল গাজী বলেন, সেতু নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর বীম ভেঙ্গে গেছে। পাটাতন উঠে গেছে। সেতু দিয়ে ভারী জানবাহন চলতে পারে না। আমরা ভয়ে ভয়ে সেতু পার হচ্ছি। দ্রæত তদন্ত করে সেতু নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবী করছি। 



নলুয়াবাগী গ্রামের খলিলুর রহমান বেপারী বলেন, মোগো দুঃখ কেউ দ্যাখবে না। গত পাঁচ বচ্ছর ধইর‌্যা মোরা কষ্ট হরি কেউ মোগো দিকে চায় না। মোরা একটা গাড়ার সেতু চাই। 



আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আলম মামুন বলেন, মরিচা ধরে লোহার নাট বল্টু খুলে গেছে,বিধায় সেতু ধসে পরছে। তিনি আরো বলেন, আমার ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী চাপিয়ে দিলে আমি কি তা বহন করতে পারবো। তেমনী সেতুর ধারন ক্ষমতার চেয়ে স্টাকচার বেশী হওয়ার ভেঙ্গে পরেছে। 



তৎকালিন আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আতিয়ার রহমান বলেন, সিডিউল অনুসারে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু লবনাক্ততার কারনে সেতুর বীম নষ্ট হয়ে সেতু ধসে পরছে। সেতু রেলপাটির বীম দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিকমতই কাজ হয়েছে। 



বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, সাকোর বিকল্প হিসেবে এই লোহার সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সেতুগুলো দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়নি। কিন্তু সেতুগুলো কেন ভেঙ্গে যাচ্ছে তার রহস্য অনুসন্ধান করিনি। তবে সোহার সেতুগুলো তুলে সাম্ভ্যতা যাচাই করে গাডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 



উল্লেখ গত শরিবার দুপুরে বৌভাত অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে হলদিয়া হাট লোহার সেতু ভেঙ্গে ৯ জন নিহত হয়। এর পর থেকেই আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী, বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের টনক নড়ে এবং লোহার সেতুর এ ভগ্ন অবস্থার খোজ খবর নেন। তার আগে এ সেতুগুলো মেরামততো দুরের কথা খোজ খবরই নিতেন না সংশ্লিষ্ট দপ্তর।