lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪
Last Updated 2024-06-12T11:14:54Z
অনিয়ম - দুর্নীতি

নাম সর্বস্ব এতিমখানার নামে টাকা উত্তোলন করে সমাজসেবা অফিসার ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আত্মসাৎ

Advertisement


বরগুনা প্রতিনিধি:


বরগুনার তালতলী উপজেলার নাম সর্বস্ব এতিমখানার নামে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বিল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সমাজ সেবা অফিসার মোঃ তাহসিনের বিরুদ্ধে। উপজেলা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট মনিটরিং কমিটির রেজুলেশন ছাড়াই এ চেক দেওয়ায় সহযোগিতা করেছেন ওই দপ্তরের অফিস সহকারী হাফিজা আক্তার। অভিযোগ রয়েছে সমাজ সেবা অফিসার ও নাম সর্বস্ব এতিমখানার প্রধানদের যোগসাজশে উত্তোলিত টাকা ভাগবাটোয়ারায় অত্মসাৎ করেন। 



 ইউএনও সিফাত আনোয়ার তুম্পা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন সমাজ সেবা অফিসারের বিরুদ্ধে বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। তিনি উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোঃ তাহসিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্হা নিবেন। 



জানা গেছে , এতিমখানার এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য জনপ্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দের টাকার মধ্যে খাদ্য বাবদ ১ হাজার ৬০০, পোশাক বাবদ ২০০, ওষুধ ও অন্যান্য বাবদ ২০০ টাকা।তালতলী  উপজেলার ১২টি এতিমখানার জন্য ১ম কিস্তিতে ৩১ লাখ ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের জন্য এ উপজেলার এতিমখানার কর্তৃপক্ষ এতিমদের নামের তালিকা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করে। এতিম শিশুদের এ তালিকা উপজেলা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট মনিটরিং কমিটি যাচাই-বাছাই করে রেজুলেশনের মাধ্যমে অনুমোদনের পরে বিল দেওয়ার কথা। উপজেলা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুম্পাকে অবগত না করে বা কোনো ধরনের রেজুলেশন ছাড়াই গত ৩০ মে সমাজসেবা অফিসার মো. তাহসিন উপজেলার ৭টি নাম সর্বস্ব এতিমখানার ২০৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ২৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বরাদ্দের চেক  দিয়েছেন  প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। সমাজসেবা অফিসার মো. তাহসিনের যোগসাজেসে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সহযোগিতায় ওই নাম সর্বস্ব এতিমখানার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 



এদিকে তালতলী ইসলামিয়া শিশু সদনে কোনো এতিম না থাকার কারণে বিল বন্ধ ও শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়। সেই প্রতিষ্ঠানের এতিমদের নামেও বিলের চেক দেয় সমাজসেবা অফিসার।



নাম সর্বস্ব এতিমখানার বিল দিতে সহযোগিতা করেছেন ওই দপ্তরের অফিস সহকারী হাফিজা আক্তার। ইতোমধ্যে হাফিজার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ প্রকাশিত হলে গত বছরের নভেম্বর মাসে এ উপজেলা থেকে তাকে বদলী করা হয়। কিন্তু তিনি গোপনে তদবির করে ফের এ উপজেলায় এসেই অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।



নাম সর্বস্ব এতিমখানা গুলোর মধ্যে তালতলী ইসলামিয়া শিশু সদন এতিমখানার ৪০ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা,আগাপাড়া এন্তেজিয়া এতিমখানার ৩৫ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা,হাজী বেলায়েত আলী ফরাজী এতিমখানায় ২০ জন্য এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা,তালতলী ছোটভাইজোড়া সালেহিয়া শিশু সদনে ৩০ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, মোহাম্মদিয়া দারুচ্ছুন্না শিশু সদনে ৩২ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, খাদিজাতুল কোবরা শিশু সদনে ২৮ জন এতিম শিক্ষার্থীর ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ও আলহাজ আবতাব উদ্দিন কমপ্লেক্স শিশু সদনে  ২২ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে আবতাব উদ্দিন ও মোহাম্মাদিয়া শিশু সদনে হাতেগোনা কয়েকজন  এতিম থাকলেও বাকিগুলোতে কোনো এতিম নেই বলে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়। উত্তোলনের  পুরো টাকাই উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ও ওই সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ভাগবাটোয়ারা  করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।



এ বিষয়ে অফিস  সহকারী হাফিজা আক্তার বলেন, অফিসার  আমাকে নির্দেশ দিয়েছে এতিমখানার বিল তৈরি করার জন্য। আমি তাদের বিল তৈরি করে দিছি। এখানে আমার কোন দোষ নাই। আমি যা করেছি সমাজসেবা অফিসারের নির্দেশেই করেছি।



উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. তাহসিন বলেন, বিল নিয়ে কিছুটা মিস গাইড করা হয়েছে। আমি রেজুলেশনের বিষয় কিছু জানতান না। তার কারণ হলো আমি নতুন। তবে আমার অফিস সহকারী হাফিজা আক্তার বলেছে রেজুলেশন লাগে না। তাই আমি বিল দিয়ে দিছি। হাফিজা আক্তারই এই বিলের সহযোগিতা করেছেন।



তালতলী উপজেলা  নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুপমা বলেন,সমাজ সেবা অফিসার তাহসিন নাম সর্বস্ব এতিমখানার  চেক দেওয়াতে তিনি আর্থিক অনিয়ম ও সরকারি  অর্থ তছরুপ করেছেন। আমি উপজেলা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট মনিটরিং কমিটির সভাপতি। আমাকে কোনো ধরণের অবগত না করেই তিনি এই চেক ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বিধি বর্হিভূত ভাবে সরকারি অর্থ উত্তোলন করে তিনি যোগসাজসের মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করায় তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।



সমাজ সেবা অধিদপ্তরের বরগুনা উপ পরিচালক মো: সহিদুল ইসলাম বলেন,আমি দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা মোঃ তাহসিনের কাছে অসহায়। তার ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দিব। 



নাম সর্বস্ব এতিমখানার খোজ খবর নিয়ে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ড বাতিলের সুপারিশ করা হবে । ভুয়া এতিমের নামে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করায় উপজেলা  সমাজ সেবা অফিসারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্হা নেয়া হবে।