Advertisement
মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
ভুয়া নিয়োগে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ সহকারী শিক্ষক প্রায় ৪ বছর ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ঐ ৬ শিক্ষকসহ তৎকালীন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক।
সম্প্রতি গত ২৫ জুন মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন ঠাকুরগাঁও দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয় সহকারী পরিচালক আজমির শরিফ মারজী। অভিযুক্তরা হলেন, তৎকালীন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বর্তমানে নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএম শাহজাহান সিদ্দিক, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী সলিম উদ্দিন। আর ভুয়া নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা কৌশলা রাণী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কাশিডাংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ভারতী রানী রায়, গাইবান্ধা সদরের চাপাদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. নাহিদ পারভীন, মাধবপুর যোতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লতা বালা, কালীতলা কান্দরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লিলি রানী রায় ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সেনিহারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষিকা সুইটি রানী রায়।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএম শাহজাহান সিদ্দিক , ঠাকুরগাঁও সদর ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মো. সলিম উদ্দিন পরস্পর যোগসাজশে তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে ঐ ৬ শিক্ষককে অবৈধভাবে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে তাদের জাতীয়করণ এবং অবৈধ নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তারা।
দুদকের অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, নিয়োগপ্রাপ্তরা২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি চাকরিতে যোগদানের তারিখ দেখিয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন তাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতায় এ ৪ বছর তাদের কোনো স্বাক্ষর নেই। এভাবে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা অফিস সহকারী সলিম উদ্দিন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পরস্পরের সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা ও উৎসব ভাতা বাবদ ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৯২০ টাকা টাকা বকেয়া বিল রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে; যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর ধনীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষিকার ২০১৩ সালে নিয়োগের বিষয়টি আমরা কেউ জানতাম না। পরে ২০১৭ সালে তাদের চাকরি জাতীয়করণ হলে তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন। এর মধ্যে ঐ দুই শিক্ষিকা তাদের যোগদানের তারিখ পিছিয়ে দিতে আমাকে অনুরোধ করেন। আমি তা করতে অস্বীকার করলে পরে তৎকালীন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সরকার স্কুলে উপস্থিত হয়ে তাদের যোগদানপত্র নিতে বাধ্য করান।’ জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক কৌশলা রাণী বলেন, ‘ ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদের নিয়োগ দিয়েছেন। তাই আমরা স্কুলে ক্লাস নিতাম। এখানে আমাদের কোনো দোষ নেই।’এ বিষয়ে অভিযুক্ত অপর শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।
ঠাকুরগাঁও দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয় সহকারী পরিচালক আজমির শরিফ মারজী বলেন, ‘প্রতারণার মাধ্যমে ছয় শিক্ষক সম্পূর্ণ ভুয়া নিয়োগে বিদ্যালয়গুলোতে যোগদান করেন। এ ঘটনায় জড়িত তৎকালীন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও একই অফিসের অফিস সহকারী। তবে এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর মৃত্যু হলে তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।