Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাবনা জেলার শস্যভান্ডার খ্যাত সুজানগর উপজেলার গাজনার বিল। ত্রিমোহনী স্লুইসগেট, খলিলপুর স্লুইসগেট ও আত্রাই নদী দিয়ে পানি প্রবেশ এবং পাবনা জেলার সর্বত্র বৃষ্টির বর্ষণে গাজনার বিলের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার হেক্টর ভূমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরপরই পাটের বীজ বোনা হয় এবং আষাঢ় মাসে বন্যার পানির সাথে সাথে পাট কাটা হয়। চার মাসের পরিশ্রমের পর ফসল ঘরে তোলার ঠিক আগে অতিরিক্ত পানির কারণে কৃষকদের শূন্য হাতে ফিরে আসতে হবে। এরূপ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে যেমন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তেমনই কৃষকদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দশা।
এ বছর পাট বুনার পর থেকেই খরা ছিল এবং দুটি সেচ দিতে প্রতি শতাংশে ১০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। এছাড়াও চাষ, সার, নিড়ানি ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তাদের প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে।
ত্রিমোহনী ও খলিলপুর স্লুইসগেট দিয়ে যে হারে পানি আসছে এবং বর্ষার ভারী বৃষ্টির কারণে পাট ধোয়ার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
কৃষক আব্দুল মাজেদ খাঁন বলেন, "আমরা আমাদের পাট জাগ দিয়েছি, কিন্তু পানির উচ্চতা এতটাই বেড়েছে যে আমরা পাট ধুয়ে নিতে পারছি না। আমাদের প্রচুর পরিশ্রম ও অর্থ বিনিয়োগের পরেও আমরা শূন্য হাতে ফিরে আসার পথে।
কৃষক শরিফুল হক বলেন, "আমরা হয়তো বৃষ্টিকে রোধ করতে পারব না, কিন্তু ত্রিমোহনী ও খলিলপুর স্লুইসগেট বন্ধ রাখা সম্ভব। যদি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই স্লুইসগেটগুলো এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখেন, তবে আমরা কিছুটা আশার আলো দেখতে পাবো। অন্যথায়, আগামী বছর পাট চাষের আশা হারিয়ে ফেলব। গতবছরও অতিরিক্ত পানির কারণে অনেক পাট ফেলে যেতে হয়েছে।
এই অবস্থায় সুজানগর উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন গাজনার বিলের কৃষকদের প্রতি সদয় দৃষ্টি দেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। স্থানীয় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে, পাট চাষিরা বড়ো ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এবং এটি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সুজানগরের কৃষকরা তাদের জীবিকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন, কিন্তু প্রকৃতির এমন প্রতিকূলতায় তাদের শ্রম বিফল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের একটাই আবেদন, স্লুইসগেটগুলো যথাসময়ে বন্ধ রেখে কৃষকদের কষ্টার্জিত পাট ধুয়ে আনতে সহায়তা করা হোক। শুধুমাত্র এ ধরনের কার্যকর পদক্ষেপই তাদের জীবন ও জীবিকার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
সুজানগর উপজেলা কৃষি অফিসার রাফিউল ইসলাম বলেন, গাজনার বিলে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধির ফলে ফসল নষ্ট হচ্ছে।কৃষকদের লোকসান কমাতে সরকারি ভর্তুকির আবেদন করা হবে, যেন কৃষক কিছুটা ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারে।