Advertisement
খাঁন আহম্মেদ হৃদয় পাশা,টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা আর বঙ্গবন্ধু এক নয়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পিতা। সংসদ বাতিল হয়েছে, আজকে উপজেলা ও পৌরসভা বাতিল হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে বাতিল করবেন? তাঁর নাম পিতা; রাষ্ট্রপিতা, রাষ্ট্রপিতাকে বাতিল করতে গেলে সন্তানের কিন্তু জন্ম–পরিচয় থাকবে না। এই জন্যে একটু ভেবেচিন্তে যাবেন।
আজ সোমবার টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার তালতলা চত্বরে উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশের অবস্থা মোটেই ভালো না। আমি অধ্যাপক ইউনূসকে খুবই পছন্দ করি। তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যখন বিপদ হয়েছিল, আমি বারবার তাঁর কাছে গিয়েছি, তাঁকে সাহস দিয়েছি।
শেখ হাসিনাকেও বলেছি, ‘এ রকম একটা মানুষের লেজ কাটতে যেয়ে আপনি ভালো কাজ করছেন না। তাঁকে আপনি সহযোগিতা করেন, সারা পৃথিবীতে তাঁকে ঘোরার ব্যবস্থা করে দেন, এতে আপনার লাভ হবে। কিন্তু না, উনি তাঁর লেজ কাটতে কাটতে এখন শেখ হাসিনার লেজই কাটা হয়ে গেছে। আমার কি করার আছে?’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘সেদিন (১৫ আগস্ট) আমার গাড়ি ভেঙেছে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রেখেছিল। আমাকে কেউ কেউ বলছে, জামায়াত-শিবিরের লোকেরা গাড়ি ভেঙেছে। আমি বলেছি, ওদেরকে আমি চিনি, অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে।
‘ইসলামি আন্দোলন আমাকে ছায়ার মতো রাখে, আমার তো মনে হয় না জামায়াত-শিবিরের লোকেরা আমার গাড়ি ভেঙেছে। কেউ কেউ বলেছে, আপনি তো তারেক রহমানের সমালোচনা করেন, বিএনপির লোকেরা আপনার গাড়ি ভেঙেছে। আমি তাদের বলেছি, বিএনপির লোকেরা আমাকে গুরু মানে, ওস্তাদ মনে করে। আমি কী করে ভাবব তারা আমার গাড়ি ভেঙেছে।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের উদ্দেশে বঙ্গবীর বলেন, ‘যারা আন্দোলন করেছে, তারা পৃথিবীতে একটি ইতিহাস তৈরি করেছে। কিন্তু তারা যদি এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, আজকে হাসিনার দশা যা হয়েছে, তাদের দশাও এর চাইতে কিন্তু ভালো হবে না। আমি ছাত্র বন্ধুদের যে সরলতা-সততা দেখেছি, গত ৩০ বছরে এই চোরের শাসনে তা দেখা যায় নাই। প্রতিদিন গাড়ি খুললেই টাকার বস্তা পাওয়া যায়, সব মন্ত্রীরা চোর, চুরি করার জন্য মানুষ তাদের নেতা বানায়নি।
এ সময় তিনি যোগ করেন, ‘সব সময় কেলিয়ে কেলিয়ে বলতেন—আমি মানুষের ভাতের অধিকার কায়েম করেছি, ভোটের অধিকার কায়েম করেছি। সব মানুষের ভোট চুরি করে, আর তারা ভোটের অধিকার কায়েম করেছিল। তিনবার মানুষ একটা ভোটও দিতে পারে নাই।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ভাগনে জয়, বাবা তুমি যা বলো, এখানে যে মানুষগুলো আছে তাদের কষ্ট হয়। তোমার মায়ের পায়ের জুতা হয়ে যারা ছিল, তাদের এখন জীবন বাঁচে না। তুমি সকালে একরকম আর বিকেলে আরেক রকম কথা বলে মানুষগুলোর কষ্ট আর বাড়াইয়ো না। আদব-কায়দা শেখো, বড় হও। আমেরিকায় বসে কথা বললেই তাকে বড় বলা হয় না।
বিএনপির সমালোচনা করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা জয়ী হয়েছে বলে বিএনপি ক্ষমতায় বসে গেছেন, এ রকম ভাববেন না। জনগণ যদি সমর্থন না করে আজকে শেখ হাসিনার যে দশা হয়েছে, আপনাদেরও সেই একই দশা হবে।
‘দেশটা আওয়ামী লীগের না, বিএনপির না, জামায়াতের না, ১৪ দলের না, এটি ১৮ কোটি মানুষের দেশ। সেই ১৮ কোটি মানুষকে সম্মান করতে শেখেন। মানুষকে যারা সম্মান করে না, তাদের রাজনীতি করার অধিকার নাই।’
জনসভায় আরও বক্তব্য দেন, উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীব, উপদেষ্টা জসিম উদ্দিন, জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক হিটলু, শাওন আক্তার মলি, ভূঞাপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সখীপুর উপজেলা কমিটির সহসভাপতি সানোয়ার হোসেন মাস্টার, দুলাল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আশিক জাহাঙ্গীর, আলমগীর সিদ্দিকী, আশিস কুমার, দেলোয়ার হোসেন, আবু জাহিদ রিপন, আসলাম শিকদার নোভেল, জেলা ছাত্র আন্দোলন নেতা এনায়েত করিম, যুব আন্দোলন নেতা শহিদুল ইসলাম শাফি প্রমুখ।