lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪
Last Updated 2024-08-23T15:23:59Z
অনিয়ম - দুর্নীতি

যমুনা নদী থেকে এক যুগধরে শত কোটি কোটি বালু বানিজ্যে দুই ভাই সুইট সুজা- BD Prokash

Advertisement

 

আশরাফুল ইসলাম গাইবান্ধা:


রাত দিন একাকার। বাল্কহেড বসানো জোড়ায় জোগায় যমুনার বুক চিরে অনর্গল বেরিয়ে আসছে মোটা বালির দানা। রাতারাতি পহাড় হয়ে যাচ্ছে। দিনের আলো ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ট্রাক্টর ও ট্রলির আগমন ঘটে। সাড়া রাতে উত্তোলনকৃত বালির  স্তুপ আবার নাই হয়ে যায়। পর্বের ঠিক করা গ্রাহকদের বাড়িবাড়ি পৌছে যায় অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালি। এভাবে আবার শুরু হয় বালি উত্তোলন। গত এক যুগধরে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভারতখালি এলাকার এক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইট এবং তার ভাই সুজাউদদৌলা সুজা।



সাঘাটা থানার সাবেক ও বর্তমান ওসিদের কিংবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেক নজরেই টিকে আছে এই দুই ভাই। জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া শত কোটি টাকার মালিক দুই ভিলেনের সাথে পকেটের মান উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখিত সাঘাটা উপজেলার দুই শীর্ষ কর্মকর্তার। এমন অভিযোগ জোড়ালো ভাবে উঠেছে স্থানীয় ভাবে। সুইট-সুজা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বালি বিক্রির অবৈধ টাকার জোড়ে  তারা নিজস্ব গুন্ডা বাহিনীর গড়ে তুলেছেন যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। তাদের অত্যাচারে পুরো উপজেলাবাসী অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। ভায়ে কেউ তাদের এসব অপকর্ম নিয়ে কথা বলতে পারে না।কথা বললেই তাদের নিজ আদালতে তুলে নেয়া হয়। সেখানে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাঘাটা-ফুলছড়ির সাবেক সাংসদ মাহমুদ হাসান রিপন তার ক্ষমতার প্রধান উৎস। তার সেল্টারেই দুই ভাই তাদের এলাকায় নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন।



তাদের দুই ভাইয়ের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি সাঘাটা থানার ওসি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানলেও সুবিধাভোগের কারণে এক যুগেও তাদের কিছুই হয়নি। বর্তমানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দেশ থেকে দলটির নেতাকর্মীরা প্রায় বিলুপ্ত হলেও সাঘাটার ওই দুই নেতার দাপট বিন্দুমাত্র কমেনি। তারা যমুনায় প্রতিদিন অবৈধভাবে প্রায় ১০ লাখ টাকার বালি উত্তোলন করে প্রকাশে বিক্রি করছেন। নদীর কিনারায় বালি উত্তোলন এবং লোড-আনলোড করার ফলে বহু ফসলি জমি ভেঙ্গে নদী গর্বে চলে গেছে। ক্ষতির শিকার এলাকাবাসী এসব মুখবুজ সহ্য করে যাচ্ছে। প্রশাসনকে বলে এক যুগেও কোন সমাধান পায়নি স্থানীয়রা। উল্টো যারা বালি উত্তোলনে বাঁধা দিয়েছেন তাদেরকেই নির্যাতন, হয়রানি করেছে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন।



স্থানীয়রা দাবী করেন ভোট চুরি করে পর পর সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত হয়েছেন সুইট। দীর্ঘদিন তিনি চেয়ারম্যান থাকায় পেশাশক্তি খাঠিয়ে হয়ে উঠেন ক্ষমতাশালী। কোন সাধারণ মানুষকে যেমন তোয়াক্কা করেন না। তেমনি তোয়াক্কা করেন নাই পুলিশ ও প্রশাসনকে। তাদের ভয়াবহ ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। বিস্তারিত তথ্য তুলে এনে ভিন্ন পর্বে তুলে ধরা হবে দুই ভায়ের রামরাজত্বের বর্ণনা।



বাঁশহাটা গ্রামের তরুণ সোহেল রানা বলেন, সুইচ চেয়ারম্যান এবং তার ভাই সুজা দীর্ঘ বারো বছর ধরে অবৈধভাবে যমুনা থেকে বালি উত্তোলন করে আসছে। নদীর কিনারা থেকে এসব বালি তোলার ফলে  প্রতিবছর বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বহু মানুষের আবাদী জমি নষ্ট হয়েছে। প্রতিদিন বালি বহনকারী ট্রাক্টর ও ট্রলি অত্যাচারে গ্রামের সব সড়ক নষ্ট হয়েছে। গাড়ির চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে গরু-ছাগল মারা গেছে। মানুষ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। তাদের এমন অবৈধ কাজে বাঁধা দিলে উল্টো বিপদে পড়তে হয়েছে। তাদের গুন্ডা বাহিনী বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নানা ভাবে মানুষ কে নির্যাতন করে। ফলে এখন আর কেউ কথা বলার সহস পায় না তাদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় কিনা জানতে চাইলে সোহেল বলেন, পুলিশকে বললে উল্টো অভিযোগকারীদের শাসন করে যায়। উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তাও অর্থের কাছে মাথানত করে থাকে। কাউকে বলে কোন কাজ হয় না। সাংবাদিকরাও এসে ছবি তুলে নিয়ে যায় কিন্তু কোন পত্রিকায় এসব খবর কেউ ছাপায় না।



স্থানীয় বাসিন্দা শরীফ ইসলাম বলেন, সুইট-সুজা যমুনা থেকে বালি উত্তোলন করেই খ্যান্ত হয়নি। তারা চরের জায়গা জমিও দখল করে রেখেছে। একরের পর একর জমি তারা নিজেদের দখল করে ফসল বিক্রি করে নেয়। বন্যার পড়ে কাশফুলের ক্ষেত কোটি টাকায় বিক্রি করে। জমিন মালিকরা প্রতিবাদটুকুও করতে পারে না। গেলো ১৮ আগস্ট সরেজমিন ওই এলাকায় গেলে কিছু মহিলা দল বেঁধে সাংবাদিকের কাছে আসেন কষ্টের কথা বলতে। তারা নাম প্রকাশের ভায়পায়। তাদের ভাষ্য  ̈ হলো, দেশের আইন-কানুন নূন ̈তমও নেই বলে কথা শুরু করেন। তারা বলেন, সুজা-সুইট যেভাবে এলাকার মানুষকে অত্যাচার করে যাচ্ছে পৃথিবীর কোন সভ্য ̈ দেশে এমনটা হয় না। তাদের বিচার দেশের মাটিতে হবে এমন বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। ওই মহিলার দল আরো বলেন, আমার খবরে দেখেছে দেশের কোথাও হাসিনার দলের লোকজন নেই। সবাই পালিয়ে আছে। কিন্তু আমাদের এখানকার আওয়ামী লীগ নেতা সুইট এবং তার ভাই সুজা কীভাবে দাম্ভিকতার সাথে এখনো অন্যায় করে যাচ্ছে। এমনটা ভেবে তারা অনেকটা বিষ্ময় প্রকাশ করেন।



বিষয়টি নিয়ে সুজাউদদৌলা সুজা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের জন্য এসব বালি তোলা হচ্ছে। বালি অন্য জায়গায় বিক্রি হচ্ছে সেটি তিনি অস্বীকার করেন। এলাকার মানুষদের অত্যাচার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভাই বারবার এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যদি অত্যাচার করতো তাহলে তিনি চেয়ারম্যান হতে পারতো না। এসময় তিনি গর্ব করে বলেন আমরা খারাপ হলে আমাদের নামে মামলা থাকতো। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন আমাদের নামে একটি মামলাও নেই।



সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইটের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।



সাঘাটার থানার অফিসার ইনচার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি মাত্র কয়েকদিন আগে এখানে যোগদান করেছি। তখন দেশে অস্তিশীল পরিস্থিতি ছিলো। এখন এসব বিষয়ে অভিযান শুরু হবে আশাকরি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।



এদিকে এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসাহাক আলী সাংবাদিককে বলেন, আমরা এর আগে দুই বার সেখানে অভিযান চালিয়েছি। তাদের বসানো বাল্কহেড পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি। এখন পুলিশকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সেনা সদস ̈দের নিয়ন্ত্রে রয়েছে পুলিশ। তারপর আমরা ওখানে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সাধারণ মানুষ প্রশাসনের বিষয়ে যা বলেছে তা সঠিক নয়।