Advertisement
বরগুনা প্রতিনিধি:
নয় বছর ১ মাস ১২ দিনে সৈয়দ মোঃ মাসুমের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার গেজেট নং ৪২৩। অভিযোগ রয়েছে তিনি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটার তার মেয়ে ইসরাত মৌরিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী দিয়েছেন। গত ১১ বছরে সরকারী কোষাগার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমন অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
সৈয়দ মোঃ মাসুম নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে বলেন, আমি ১৯৭৪ সালে আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছি। পরে ছয় বছর লেখাপড়া করিনি। ১৯৮০ সালে চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার দুটি জন্ম তারিখ। এসএসসি সনদ অনুসানে আমার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সাল হলেও আমার প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯৫৬ সাল। তবে আপনী কেন আগে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তুভুক্ত না হয়ে ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়ে ভাতাপ্রাপ্ত হয়েছেন এমন প্রশ্নের তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। আপনী এসএসসি পাশের সনদ অনুসারে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী শেষে অবসরে গেলেন আবার ১৯৫৬ সালের জন্ম তারিখ অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা হলেন আপনার কোনটা সঠিক এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার দুই জন্ম তারিখই সঠিক। একজন ব্যক্তির দুইটি জন্ম তারিখ হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর দেয়নি।
জানাগেছে, আমতলী পৌর শহরের খাদ্যগুদাম এলাকার সৈয়দ লুৎফর রহমানের ছেলে সৈয়দ মাসুম। তিনি ১৯৮০ সালে চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এসএসসি পাশের সনদ অনুসারে তার জন্ম ১৯৬২ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারী। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল নয় বছর ১ মাস ১২ দিন। তখন তিনি প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র। বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন সৈয়ম মোঃ মাসুমের বাবা সৈয়দ লুৎফর রহমানের গ্রামের বাড়ী ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার তালমা গ্রামে । তিনি ছিলেন ওই এলাকার চিহিৃত রাজাকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আমতলী আসেন। পরে আমতলী পৌরসভার খাদ্যগুদাম এলাকায় বসবাস এবং মুদিমনোহরি ব্যবসা শুরু করেন। তার ছেলে সৈয়দ মাসুম ১৯৮০ সালে চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে সবুজবাগ মুক্তিযোদ্ধা বে-সরকারী প্রাইমারী স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী নেন। ২০১৩ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। অভিযোগ রয়েছে তিনি (মাসুম) ওই সময় ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমামের দেয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি করে নিজে মুক্তিযোদ্ধা হন এবং অনেকের কাছে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। জাল জালিয়াতি করে তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় গেজেটভুক্ত হন। তার গেজেট নং-৪২৩। ওই গেজেট অনুসারে তিনি ২০১৩ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্ত হন। গত ১১ বছর তিনি অবৈধভাবে সরকারী কোষাগার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম আরো অভিযোগ করেন মাসুম এসএসসি পরীক্ষা পাশের সনদ গোপন করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। ওই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে তার মেয়ে ইসরাত মৌরি মুক্তিযোদ্ধা কোটার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী নিয়েছেন। মৌরি আমতলী সবুজবাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত।
সোমবার অনুসন্ধানে জানাগেছে, সৈয়দ মোঃ মাসুম ১৯৮০ সালে আমতলী উপজেলার চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তার এসএসসি পরীক্ষা পাশের রোল নং-৩৯৫, নিবন্ধন নং-১৮৮১২ ও শিক্ষাবর্ষ ১৯৭৭-৭৮। তার জন্ম তারিখ-১৯৬২-০২-০১৫। ২০১৯ সালে সবুজবাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসরে যান। তিনি গত দুই বছর পুর্বে আমতলীর ভিটেমাটি বিক্রি করে ফরিদপুর জেলার সৈয়দপুর উপজেলার তালমা গ্রামে চলে যান। ওইখানেই তিনি বসবাস করছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সৈয়দ লুৎফর রহমান আমতলী শহরে আসেন। পরে শহরের খাদ্যগুদাম এলাকায় বসবাস এবং মুদিমনোহরি ব্যবসা শুরু করেন। তখন তার ছেলে সৈয়দ মাসুম প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন শিশু। লেখাপড়া শেষে তিনি সবুজবাগ বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী নেন। ২০১৩ সালে জানতে পারি তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে তিনি তার মেয়ে মৌরিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী দিয়েছেন।
চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সৈয়দ লুৎফর রহমানের ছেলে সৈয়দ মোঃ মাসুম ১৯৮০ সালে এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারী।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।