Advertisement
মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় দুলাল ওরফে সেলিম নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি রমেশ চন্দ্র সেন ও শামীম ওসমান সহ ৪৯ জনের নাম উল্লেখ্য করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজনের নাম রয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) নিহতের ভাই মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদ্দাম হোসেনের আদালতে এই মামলা করেন। মোস্তফা কামালের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ধামোর গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত আব্দুল হাকিম এবং মাতার নাম মোছা নবিজান খাতুন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী জাকির হোসেন। মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলো- ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার, রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথী সেন, সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ বাবু, সহ-দপ্তর সম্পাদক গনেশ চন্দ্র সেন, সদরের বেগুনবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বনি আমীন, আখানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রোমান বাদশা, রুহিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু, রাজাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম, রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সেন ও ঢোলারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায়। এছাড়াও ১নম্বর রুহিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মকবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক দুলাল রব্বানী, সাবেক যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ সরকার, সুবর্ণ চন্দ্র সেনকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ আনয়ন করা হয় শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল ৫ টায় যাত্রাবাড়ী থানার শনির আখড়া কাজলা প্রেট্রোল পাম্পের সামনের রাস্তায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১ হতে ৯ নম্বর আসামির নির্দেশে ১০ হতে ৪৯ নম্বর আসামিগণ অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করে। এতে বাদীর ভাই মো. দুলাল ওরফে সেলিম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ঐ মামলায় ঘটনাস্থল হতে ৫০০ কিলোমিটার দূরে ঠাকুরগাঁওয়ে নাম মামলার এজাহারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ঘটনার সময় রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালায়। তাছাড়ও ঐ সময় সারাদেশ ব্যাপী কারফিউ জারি থাকায় ঢাকায় যাওয়া অসম্ভব ব্যাপার।
এ ব্যপারে মামলার বাদী মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার ভাইকে গুলি করে মারা হয়েছে। এঘটনায় আমি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি। আশা করছি মহামান্য আদালত আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দেবেন।’ ঠাকুরগাঁওইয়ের যে ১০ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ্য করা হয়েছে, তাঁরা ঘটনাস্থলে ছিল বা কিভাবে জানলেন যে তাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে কে ছিল আর কে মেরেছে তা আদালত খুঁজে বের করবেন। আমার কাজ মামলা করার আমি করেছি।
এ ব্যপারে আইনজীবী জাকির হোসেন জানান, বাদীর বর্ণনামতে, আদালতে মামলা আনয়ন করা হয় এবং বাদী ২০০ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালতের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হলেই তবেই সংশ্লিষ্ট থানাকে তদন্ত কিংবা মামলা রুজুর নির্দেশ দেন আদালত। কোনো আইনজীবী বা ব্যক্তির এখানে করার কিছু থাকে না। তারপরও কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে এমনটি করলে সেটা নৈতিকতা বিরোধী।