Advertisement
রাজশাহী প্রতিনিধি :-
রাজশাহী -১ গোদাগাড়ী তানোরের সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ছত্রছায়ায় মাদক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে আওয়ামী লীগের আমলে। মাদকের গডফাদারদের প্রভাব বিস্তার করতে বিভিন্ন সভা সমাবেশে শুরু হয় মাদক কারবারিদের আনাগোনা। সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর ভাগিনা পরিচয়ে কেউ কেউ চালিয়েছেন মাদকের সিন্ডিকেট। মাদক কারবার করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন এই সিন্ডিকেটের অনেকেই।
এমনই একটি পরিবার আজও মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে গোদাগাড়ীতে। আওয়ামী সরকারের পতনের পরও প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখা গেছে তাদের। একই পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের চারজনই মাদক কারবারে জড়িত। এরা হলেন, মনিরুল ইসলাম মনির, আব্দুর রহিম টিপু, মেহেদী হাসান ও সোহেল রানা। মাদক কারবার ঢাকতে কোটি টাকা খরচ করে তাদের একজন হয়েছেন গোদাগাড়ী পৌরসভার কাউন্সিলর । যার নাম মনিরুল ইসলাম মনির। কয়েকবছর আগেও তিনি ছিলেন নৌকার মাঝি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম মাদকের ব্যবসা করে কয়েকশো কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চার ভায়ের জন্য রাজশাহী মহানগরীতে করেছেন রাজকীয় বাড়ি। মনিরুলসহ চার ভাইয়ের ব্যাপারেই মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে।সবার বিরুদ্ধেই রয়েছে মাদকের মামলা। সর্বশেষ ৪ কেজি ৩০০ গ্রাম হেরোইন পাচারের অপরাধে চলতি বছরের ৭ মে গোদাগাড়ী থানায় টিপুর বিরুদ্ধে মামলা হয়। থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মনিরুল ইসলাম ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল পৌনে ৪ কেজি হেরোইনসহ চারঘাট থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি গ্রেফতার হয় পুঠিয়া থানায়।
একাধিক মাদক মামলা থেকে বাঁচতে ২০২১ সালের পৌর নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন মনিরুল । জানা যায়, এমপি ওমর ফারুকের আশির্বাদেই তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
পুলিশ জানায়, আবদুর রহিম টিপু রাজশাহীর অন্যতম শীর্ষ মাদক কারবারি। ২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহীর শীর্ষ ১৫ মাদক কারবারির নামের তালিকা পাঠানো হয় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। ওই তালিকায় নাম ছিল টিপুর। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও আছে ৩ টি । এর মধ্যে ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানায় ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই পবা থানায় ও ৭ মে গোদাগাড়ী থানায় টিপুর বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়। এসব মামলার পরই আব্দুর রহিম টিপু পলাতক আছেন।
টিপুর বড় ভাই মনিরুল হক মনি এখন গোদাগাড়ী পৌরসভার কাউন্সিলর। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল রাজশাহীর চারঘাট থানা-পুলিশ পৌনে ৪ কেজি হেরোইন ও একটি মাইক্রোবাসসহ মনিকে গ্রেপ্তার করেছিল। মামলাটি এখনো আদালতে চলমান। কিছুদিন আগেও র্যাব-৫-এর রাজশাহীর একটি দল গোদাগাড়ী পদ্মার চর এলাকার ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের দিয়াড় মানিকচক থেকে এ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
এদের মধ্যে দিয়াড় মানিকচক রাবনপাড়া গ্রামের মো. সোলায়মান (২০) ও রুহুল আমিন (৪০)। তাঁদের কাছ থেকে ৩ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। মূলত এ দুজনের মাধ্যমে টিপু ভারত থেকে হেরোইন সংগ্রহ করতেন। তারপর পদ্মা নদী পার করে এসব হেরোইন গোদাগাড়ীর বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হতো।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ঐ দুজন জানিয়েছিলেন, আবদুর রহিম টিপু চাহিদা মতো হেরোইনগুলো ভারত থেকে সংগ্রহ করতো। আমরা তার হয়ে এই মাদকগুলো সংরক্ষণ করছিলাম। একই মামলায় টিপুকে পলাতক আসামি করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয় এবং অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
পত্রিকার প্রকাশিক সংবাদ অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের সময় মাদক কারবারি আবদুর রহিম টিপু তাঁর নামে কেনা একটি নতুন মাইক্রোবাস স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে দিয়েছিলেন। কালো রঙের গাড়িটি নিয়েই ওমর ফারুক চৌধুরী নির্বাচনে গণসংযোগ করেন। সেই থেকে গাড়িটি তার কাছেই আছে। ২০২২ সালে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক উঠলে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, টিপুর কাছ থেকে গাড়িটি কিনে নিয়েছিলেন তাঁর ছেলে।কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদক কারবার থেকে বাঁচতে গাড়িটি সাংসদকে উপহার দিয়েছিলেন তিনি।