Advertisement
মাহী আক্তার মীম, (নারায়ণগঞ্জ):
অক্টোবর ছুঁই ছুঁই। একরাশ শুভ্রতা নিয়ে প্রকৃতিতে রাজ করছে শরৎ। নদীর দু’ধারে মনোরম কাশবন আর খাল-বিলে লাল-সাদা শাপলার সমারোহ। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় ঘরে বসে ফেইসবুক স্ক্রল করতে করতে দেখি শাপলা বিলের ভিডিও। শাপলাবিল আজকাল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, তাই এসময়ে শরতের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন এলাকার শাপলা এবং পদ্মবিলগুলো।
আমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের ছেলেবেলার আমোদের এক জায়গার নাম মামা বাড়ি। ‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ’— সেই টানেই হয়তো প্রতি ছুটিতে সবাই পাড়ি জমাতো মামাবাড়িতে। আমার জন্য অবশ্য কবিতাটা হয়ে যায় ‘ঝড়ের দিনে খালার দেশে...!’ আমার গ্রীষ্মের আম কুড়ানোর সুখ, বর্ষার ঝুম বৃষ্টি, শরতের শাপলাবিল অথবা শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা— সবকিছুই খালার বাড়ি ঘিরে।
ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে জন্ম নেওয়া এক খাল আমার খালার বাড়ির ঠিক পাশদিয়ে বহুদূর পর্যন্ত চলে গিয়েছে। খালের ওপাশে বিস্তৃত জমি যেখানে মৌসুম অনুযায়ী ধান, সরিষা কিংবা শাক-সবজির চাষ হতো। বর্ষা-শরতের সময়টাতে জমির কানায় কানায় পানিতে পূর্ণ হয়ে যেতো। খালুর কাছে হৈ হৈ করে বায়না ধরতাম নৌকায় বেড়ানোর; বেড়াতাম। খালু ডুব সাঁতারে শালুক তুলে আনতেন, আমরা ভাই-বোনেরা শাপলা তুলতাম নৌকায় বসে। বিলে জাল পাতা থাকতো, জালে আটকে থাকতো প্রচুর মাছ। সানন্দে মাছ, শাপলা আর শালুক নিয়ে ফিরতাম।
আমাদের গ্রামাঞ্চলের মানুষজন যেমন সহজ-সরল, অতিথি আপ্যায়নে আবার তাদের কোনো তুলনাই হয় না। রইলো তাদের খাবারের বৈচিত্র্য— সে কথা মনে এলে জিভে জল অজান্তেই চলে আসে! আমরা বেড়াতে গেলেই জবাই হতো নিজেদের খোয়ারের দেশি মুরগি। মুরগির ডিম তো ছিলোই। খাল থেকে ধরা পুঁটি, শিং টেংরাসহ নানান পদের মাছ, চিংড়ি দিয়ে শাপলার ডাঁটা তরকারি। ক্ষেতের পুঁইশাক-লালশাক আর গাছের নারকোল-পেয়ারা।
ছেলেবেলায় সব ভাইবোন একসাথে হওয়া মানেই সারাদিন দুষ্টুমি, দৌড়ঝাঁপ আর খেলা। পড়াশোনাকে বিদায় দিয়ে হৈচৈ-এ মেতে থাকতাম সারাদিন। এগাছ থেকে ওগাছ, এবাড়ি থেকে ওবাড়ি কিংবা এপাড়া থেকে ওপাড়া— কিচ্ছু বাদ যায়নি! গোল্লাছুট, বউচি, দাড়িয়াবান্ধা, জুতাচোর... আরো কত রকমের খেলায় জুড়ে ছিল শৈশব।
ইন্টারনেটের রঙিন দুনিয়ায় আমরা হারিয়েছি সেই রঙিন শৈশব, যে শৈশবে ছিল বিশাল নীলাকাশ, নিচে বয়ে যাওয়া নদীতে আকাশের নীল; ছিল শুভ্র কাশবন, রোদের ঝিলিকে রুপোলি রং ছড়ানো ছোট-বড় মাছ, ছিল শাপলা-শালুক। ফেইসবুকের হাজার রঙের ভিড়েও আমরা আমাদের সেই রঙেই আটকে যাই, সেই নীলিমার বিশালতায়, স্নিগ্ধ নরম কাশবনে অথবা সেই শাপলা-শালুক বিলে!