lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪
Last Updated 2024-10-06T11:32:13Z
রাজনীতি

হাসিনার মাথা ও তার সরকারের মাথা ভারতের দিকে সিজদা করে, নতজানু করে রাখতেন: রুহুল কবির রিজভী

Advertisement



ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এবং আমরা বিএনপি পরিবার এর প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দ্রæত সংস্কার কাজ শেষ করে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। এখনো দেশে লুটপাটের সরকারের দোসররা বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত। তারা নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছে। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার কোন কারনে ব্যর্থ হলে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে।’ তিনি রবিবার (৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজারের সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত কিশোরী স্বর্ণা দাসের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে জুড়ী উপজেলার খাগটেকা বাজারে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ কর্তৃক আয়োজিত এক বিশাল সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন।

অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গত ১৬-১৭ বছর ধরে হাসিনার মাথা ও তার সরকারের মাথা ভারতের দিকে এমনভাবে সিজদা করে রাখতেন, নতজানু করে রাখতেন, সেই মাথা দেশের অখন্ড, স্বাধীনতা এবং জোরালো সার্বভৌমত্বের পক্ষে মাথা উচু করার যে গর্বিত সাহস সেটা রাখেননি। কারন শেখ হাসিনা ছিলেন জনবিচ্ছিন্ন, তিনি ছিলেন ঘাতক, তিনি শিশুদের রক্ত পান করতে দ্বিধা করতে না, তিনি কিশোর/কিশোরীর মাথার মধ্যে গুলি করে মাথার ঘিলু বের করে দিয়েছেন, শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য, বাংলাদেশের সিংহাসন জোর করে দখলে রাখার জন্য। তার ক্ষমতায় থাকার নিরাপত্তা ও গ্যারান্টি ছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। যে কারনে তারা নিজেরা গণতান্ত্রিক হবার পরও শেখ হাসিনার মতো একটি কুখ্যাত জনরায় বিরোধী, সার্বভৌমত্ব বিরোধী একটি সরকারকে তারা সমর্থন করে গেছে। শেখ হাসিনার পতনের পর তারা (ভারত) আরো আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তারা মনে করছে তাদের বানানো একজন গোলাম আর নেই। এই বেদনায় তারা সীমান্ত রক্তাক্ত করছে, সীমান্ত আরো বেশি বিপদজনক হয়েছে, আরো বেশি সহিংস হয়েছে। সীমান্তে লাশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জনগণের যে বিপ্লব হয়েছে আগস্টের ৫ তারিখে সে বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনুস সাহেবের যে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার এদেশের জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা রয়েছে। এই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের উপর যে আস্থা সেই আস্থা আমাদের হারায়নি। কিন্তু তারা কেমন যেন একটু গা-ছাড়া ভাব নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। এই যে সীমান্তে হত্যাকান্ড এই ব্যাপারে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার নির্লিপ্ত কেন? উদাসীন কেন? জনগণতো আপনাদের সমর্থন করেছে আপনাদের কণ্ঠে জোরালো আওয়াজ বেরুবে সে প্রত্যাশায়। কিশোরী স্বর্ণা দাসকে হত্যার বিষয়ে কোনো কথা নেই কেন? এ প্রশ্ন আজ দেশের মানুষের মুখে মুখে।’ 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আমাদের উপর আক্রমন করে, সেখানে সংঘাত হয়। তাদের দ্বারা কদিন আগেই, শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পরেই গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি অনেকদিন পর বাড়িতে ফিরছিলেন। তাদের সাথে বেশ কয়েকটা গাড়ি আছে। ওই মুহুর্তে তাদের গাড়ি বহরে আক্রমন করে তারা (আওয়ামী লীগ) মেরে ফেলেছে দিদার নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় একজন নেতাকে। এই সংঘাতগুলো তারা তৈরি করছে। বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত হতে পারে। ওদের যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কিংবা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ সভাপতি কেউ হিন্দু সম্প্রদায়ের হতে পারে। আমাদের দলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ বিএনপি করে, যুবদল করে, ছাত্রদল করে দু’পক্ষের যদি সংঘর্ষ হয়। ওদের হাতে যেমন আমাদের নেতাকর্মীরা খুন হয়, অনেকে আহত হয়, পঙ্গুত্ব বরণ করে আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিহত করতে গিয়ে সেখানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আঘাতপ্রাপ্তদের মধ্যে মুসলমান বা হিন্দুও থাকতে পারে। অনেক হিন্দুতো আওয়ামী লীগ করেন। কিন্তু যখনই দু’পক্ষের সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা আঘাতপ্রাপ্ত হন সাথে সাথেই শেখ হাসিনা, তার আওয়ামী লীগ এবং তাদেরকে যারা আশ্রয় দেয় পার্শ্ববর্তী একটি দেশ তারা সাথে সাথেই একটা রিঅ্যাকশন দেয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক নিরাপত্তাহীন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের উপর আক্রমন হচ্ছে। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে এ বাংলাদেশের কে হিন্দু সম্প্রদায়, কে মুসলমান সম্প্রদায়, কে বৌদ্ধ সম্প্রদায়, কে খ্রিস্টান সম্প্রদায় সে হিসেবে কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ বিবেচনা করে না, ভারত বিবেচনা করে না। ওদের বিবেচনার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশিকে সীমান্তে যদি দেখা যায় তাদের গুলি করো। ওটা স্বর্ণা দাস হতে পারে, ওটা সঞ্জয় কুমার হতে পারে, ওটা অপূর্ব ভট্টাচার্য হতে পারে, ওটা যে কেই হতে পারে। তার পরিনাশ আজকে এই এলাকার একটি শিশু, শিশুটি কেবল কিশোরী হয়ে ওঠছে সেই স্বর্ণা দাস, ভারতের বিএসনএফ কিন্তু দেখেনি এটা হিন্দু না মুসলমান। ওদের টার্গেট হচ্ছে বাংলাদেশি, ওদের টার্গেট হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। ওরা যেমন ফেলানীকে কাটাতারের বেড়ার উপর মেরে ঝুলিয়ে রেখেছিল, তেমনি স্বর্ণা রানী দাসকেও হত্যা করেছে। একজন মুসলিম আর একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, কিন্তু তারা দুইজনই বাংলাদেশি। তারা বাংলাদেশকেই টার্গেট করেছে, তারা বাংলাদেশকেই তাদের একমাত্র লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। স্বর্ণা দাসের হত্যার আগেরদিন ঠাকুরগাঁওয়ে আরেকজন হিন্দু সম্্রপদায়ের মানুষকে বিএসএফ হত্যা করেছে। অনেক প্রতিবাদ করা হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে শান্তিপূর্ন সীমান্ত ঘোষণার লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশে যারাই এসেছেন ক্ষমতায় তারা শান্তিপূর্ণ সীমান্ত তৈরি করার জন্য আহবান জানিয়েছে, কিন্তু ারত এটি শুনেনি। তারা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তকে পৃথিবীর সবচাইতে রক্তাক্ত সীমান্ত, সবচাইতে সহিংস সীমান্ত, সবচাইতে মৃত্যু আর লাশে পরিণত করার সীমান্তে পরিনত করেছে। আর শেখ হাসিনা তার জোর জবরদস্তি ফ্যাসিবাদের ১৬-১৭ বছরে এতো সীমান্ত হত্যা হয়েছে কিন্তু তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একটি হত্যাকান্ডেও কোন বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বার বার দেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পারেনি। মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর জেলে রাখা হয়েছে। কিন্তু শত অত্যাচার-নির্যাতনের পরও তিনি মাথা নত করেননি।’

কাতার বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. শরিফুল হক সাজুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আলমগীর কবির এবং আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন। বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন মিঠু। সুধী সমাবেশ শেষে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত কিশোরী স্বর্ণা দাসের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সান্তনা দেন।’

প্রসঙ্গত, গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত দিয়ে মায়ের সঙ্গে ভারতে মামার বাড়িতে যাবার পথে বিএসএফের গুলিতে মারা যায় কিশোরী স্বর্ণা দাস। স্বর্ণা দাস জেলার জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় নিরোধ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।