lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪
Last Updated 2024-10-31T08:09:53Z
আইন ও অপরাধ

সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদের গ্রেপ্তারে নিজ দলের অনেক নেতাকর্মীও উল্লাসিত

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মো. আব্দুস শহীদ ৩৩ বছর ধরে মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য। ১৯৯১ সালে তিনি এ আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর সাতবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এ আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ, ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন সরকারি প্রতিশ্রæতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ছিলেন অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনে নির্বাচিত হবার পর দায়িত্ব পান কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় সাত মাস তিনি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ ৩৩ বছর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে মো. আব্দুস শহীদ তার নিজ দল আওয়ামী লীগে বিভাজন সৃষ্টি করে নিজের ও পরিবারের কল্যাণ ছাড়া আর কোন দৃশ্যত কাজ করেননি এমন অভিযোগ খোদ তার নিজ দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীর। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলগঞ্জের এক আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, ‘তিনি (আব্দুস শহীদ) ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দলের জন্য নয়, নিজের পরিবারের কল্যাণে কাজ করেছেন। তার এক ভাইকে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পলাতক। আরেক ভাই কয়েক বছর ধরে রয়েছেন রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে তিনি আছেন কারাগারে। আরেক ভাইকে বিআরডিবির সভাপতি, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি, কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (সাবেক কমিটির) বানিয়ে পরিবারের কাছ থেকে যেন দেনামুক্ত হয়েছেন! এছাড়া তার ভাইদের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কমিটি-সংগঠন, বিভিন্ন কলেজ-স্কুল কমিটির সভাপতি বানিয়ে দুই উপজেলায় পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। তার কাছে দলের তৃণমূলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ণ ছিল না বললেই চলে। ফলে এই দুই উপজেলায় দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আব্দুস শহীদের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তথাপিও তার ক্ষমতার দাপটের কাছে অসহায় থাকায় দলের কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারেননি।’

শ্রীমঙ্গলের বিষামণি গ্রামের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরীজীবি মো. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনের আমাদের এমপি ছিলেন উপাধ্যক্ষ আব্দুুস শহীদ। ওনি একচেটিয়াভাবে ক্ষমতায় ছিলেন সেই ১৯৯১ সাল থেকে। শিক্ষিত মানুষ। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের কেউ মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে নাই। গরিব, চা-শ্রমিক, উপজাতি, সেটেলার, মহাজির, মৎস্যজীবী, অপেক্ষাকৃত অল্প শিক্ষিত ও পরিশ্রমী জনগোষ্ঠী এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ। নৌকা মার্কা হচ্ছে এ এলাকার আবেগের মার্কা। এ সুযোগ আমাদের এমপি সাব নিয়েছেন। লাস্ট কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। এক ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান, আরেক ভাইকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন। মেয়েকে চেয়েছিলেন নেক্সট স্থলাভিষিক্ত করতে। এ এলাকায় খুব বড় কিছু পরিবর্তন চোখে পড়বে না। যা হয়েছে প্রাইভেই ইনভেস্টমেন্টই হয়েছে অধিকাংশ। গদি লম্বাকাল দখলে ছিলো। কাজের জন্য নয় শুধু, পরিবারপ্রীতি ও প্রভাব, বিকল্প নেতৃৃত্বের অভাব ও মাথা উচু করে দাঁড়াতে না পারা বিকল্পের কারণে মূলত। শ্রীমঙ্গলের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেক ডেডিকেটেড নেতাকর্মী অনেকে এখন অনেক গোপন কথা ও আর্থিক লেনদেনের কথা প্রকাশ করছেন একে অন্যের কাছে। আমি অবাক হইনি! এদেশে শিক্ষিত ক্ষমতাধর লোকগুলোই দেশপ্রেমিক-পরিশ্রমী লোকগুলোকে নিজেদের গোলাম বানায়, সিস্টেমে শোষণ করে। ওরা বুঝে না বা বুঝেও বিকল্পের অভাবে সহ্য করে যায়। কিছু চামচা-চেলা এসব আরও সহজ করে দেয়।  অধিকাংশ জনগণ আমাদের এলাকার হচ্ছেন নিজের খাওয়া লোক। পরিবর্তনের এই আমলে আরো ভালো নেতৃত্ব খুঁজে পাক আমার প্রিয় জন্মভূমি। কতো স্বপ্ন ছিলো কিন্তু সামর্থ্যের অভাব ও পলিটিক্যাল সিস্টেম খারাপ। এজন্য ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও অনেকে এখানে কাজ করতে আসেন না। আমাদের পলিটিক্যাল সিস্টেমের সংস্কার খুব প্রয়োজন। নি:সন্দেহে এটা সময়ের দাবি।’

এদিকে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে সদ্যসাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ গ্রেপ্তার হবার খবরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইনষ্ট্রাগ্রামে স্ট্যাটাস দিয়ে গত ৩৩ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার বিচার দাবি করছেন তার নিজ দল আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে শ্রীমঙ্গল পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. বদরুজ্জামান সেলিম লিখেছেন, ‘দুর্ধর্ষ প্রভাব খাটিয়ে যিনি শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ এর মানুষকে ৩৩ বছর শোষন করেছিলেন অবশেষে আজ জীবনের ১ম গ্রেফতার হলেন ঢাকা থেকে।’ 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের (সম্প্রতি সরকার কতৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন) সাবেক ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওসার আলী আহমেদ লিখেছেন, ‘দলমত নির্বিশেষে সবাই খুশি, সবচেয়ে বেশী খুশি শ্রীমঙ্গলের আওয়ামী কর্মী ও সমর্থকরা।’

উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি ও ৩ নম্বর শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আফজল হক লিখেছেন, ‘যেমন কর্ম তেমন ফল।’ একই স্ট্যাটাসের কমেন্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০০৩ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার বিপক্ষে আমার পরিষদের মেম্বার শ্রী ফনী ভূষন চক্রবর্তীকে দলীয় প্রার্থী দিয়ে, ১২২ ভোটের ব্যবধানে আমার বিজয়কে ছিনিয়ে তৃতীয় পক্ষকে বিজয়ী করেছিলেন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন, উপজেলা নির্বাচনে আমার সাথে ভোটচুরি খেলা অনেক করেছেন। আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট পেতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাধা সৃষ্টি করেছেন। ডলুছড়া আমার আনারস বাগানের সামনের জায়গায় আশ্রয়ন প্রকল্প করে আমার লেবু ও বিভিন্ন ফলের গাছ কেটে অনেক আর্থিক ক্ষতি করেছেন। আমার রাজনৈতিক জীবন থেকে ২১ বছর কেড়ে নিয়েছেন। আজ পর্যন্ত আমি মন থেকে হাসতে পারিনি মনে অনেক কষ্ট নিয়ে বেচে আছি। আমার আল্লাহ বিচার করবেন, আমি দেখবো ইনশাআল্লাহ।’ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এএফএমএম শিমুল লিখেছেন, ‘পাপে বাপরেও ছাড়ে না ১০০%। বড় হুজুর কট।’ উপজেলা শ্রীমঙ্গল পৌর যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান দুলন লিখেছেন, ‘আপনার কর্মফল আপনাকেই ভোগ করতে হবে।’

উপজেলার স্বেচ্ছসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহŸায়ক এএফএমএম হিমেল লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, দুনিয়ার বিচার দুনিয়াতেই হয়।’

যুবলীগ কর্মী তানভীর আহমদ লিখেছেন, ‘দুনিয়ার ফল দুনিয়াতে ভোগ করতে হয়। তাই মানুষের মনে আঘাত দিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দাম্ভিকতা দেখিয়ে বেশিদুর যাওয়া যায় না। একদিন ধরা খেতে হয় তার প্রমাণ আজকের বাস্তবতা।’