Advertisement
সোহেল মিয়া,দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ):
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গনঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় আওয়ামীলীগের পদবীধারী বেশ কিছু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, সদস্যরা পরিষদে আসছেন না। ফলে পরিষদে গিয়ে কাঙ্খিত নাগরিক সেবা পেতে বিলম্ব হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সেবা নিতে আসা বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষজন।
দোয়ারাবাজার উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ৮টি ইউনিয়নে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে ৫ টি ইউনিয়ন দোয়ারাবাজার, বোগলাবাজার, পান্ডারগাঁও, নরসিংপুর ও সুরমা এই চারটি ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। বাকি ৩টি দোহালিয়া, বাংলাবাজার ও লক্ষিপুর ইউনিয়নে ও নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী তিন নেতা। মান্নারগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের ছত্রছায়ায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক এক বিএনপি নেতা।
অধিকাংশ সদস্যও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এদের অধিকাংশ ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ-পদবিধারী। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে পড়ে এসব জনপ্রতিনিধিরা। আতষ্কের মধ্য দিয়ে চলে যান আত্মগোপনে।
এরই মধ্যে ৪ আগস্ট ও আন্দোলনচলাকালীন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় একাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রথম কয়েকদিন পরিষদে জনপ্রতিনিধি ও সেবাগ্রহীতার উপস্থিতি কম থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরব হয়ে পড়ে পরিষদগুলো। এতে চেয়ারম্যানরা গা-ঢাকা দিলেও সশরীরে কিংবা বিভিন্ন কৌশলে ইউনিয়ন পরিষদের কাজ চালিয়ে আসছিলেন।
এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ৬ অক্টোবর (রবিবার) বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আবুল হোসাইন, ২০ অক্টোবর ( রবিবার) নরসিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নুর উদ্দিন আহমদসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের বেশকয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর থেকে অনেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের এসব নেতারা গ্রেফতার আতষ্কে পালাতক রয়েছে।
তবে ইউপি সচিবরা নিয়মিত অফিস করছেন। আবার এলাকায় থেকেও গ্রেফতারর ভয়ে পরিষদে ঢুকতে না পেরে কোনো কোনো চেয়ারম্যান আত্মগোপনে থেকে সচিবের সাথে যোগসাজশে করছেন দাপ্তরিক কাজ। ফলে পরিষদে গিয়ে কাঙ্খিত নাগরিক সেবা পেতে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেকটা বিলম্ব হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সেবা নিতে আসা মানুষ। এ বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্ববতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। কোন কোন ভুক্তভোগীদের দাবি আন্দোলনে হামলাকারী পলাতক ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে নতুন দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সচল করা।
এদিকে সুনামগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ৯৯ জনকে আসামী করে দায়ের করা মামলায় ৫৫নং আসামী উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মিলন খাঁন ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক থাকায় বন্ধ হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী।
বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেল হাজতে থাকায় প্যানেল চেয়ারম্যান দিয়ে চলছে এই দুই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। তবে বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আবু হানিফকে নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও বাঁধা প্রদানের অভিযোগে তাকেও অপসারণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলার ছাত্র সমাজ।
অন্যদিকে,দোহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীমুল ইসলাম শামীম কয়েকদিন যাবত পরিষদে আসছেন না।
নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত দোয়ারাবাজার সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হামিদ গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
লক্ষিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল হক ও গা-ঢাকা দিয়েছেন,তবে মাঝে মধ্যে হঠাৎ এক থেকে দেড়ঘন্টার জন্য পরিষদে আসা-যাওয়া করেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তিনিও দীর্ঘসময় ব্যায় করেনি পরিষদে।
অন্যদিকে, নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল ওয়াহিদ স্থানীয় রাজনীতির সখ্যতায় নিয়মিতই অফিস করছেন।
মান্নারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ইজ্জত আলী বিগত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ৪ বারের সাবেক প্রভাবশালী এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের ছত্রছায়ায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও চেয়ারম্যান নির্বাচন করার আগে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় বর্তমানে রাজনীতির পালাবদলেও স্থানীয় রাজনীতির সখ্যতায় নিরাপদে নিয়মিত পরিষদে বসছেন।
এছাড়া সুরমা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম বীর প্রতীক মারা যাওয়ায় উপনির্বাচনে সুরমা ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদ। এতে এই পরিষদে বর্তমানে নাগরিক সেবা অব্যাহত রয়েছে।
নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত পান্ডারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল ওয়াহিদ জানান,তিনি নিয়মিত অফিস করছেন। আওয়ামীলীগ করলেই তো দোষী না গ্রেফতারের ভয়ে কেনো পালিয়ে থাকবেন।
দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামিমুল ইসলাম শামীম ও কয়েকদিন যাবত পরিষদে আসছেন না এমন সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে এবিষয়ে চেয়ারম্যান শামিমুল ইসলাম শামীম জানান,তিনি নিয়মিত পরিষদ করছেন। তবে গত দু'দিন উনার পারিবারিক কাজে এলাকার বাহিরে ছিলেন বলে জানান।
বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামী ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মিলন খান গত সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ থেকে পরিষদে না আসার সত্যতা পাওয়া গেছে। গত ২৪ অক্টোবর ইউনিয়ন পরিষদে এসে এক থেকে দেড় ঘটনা সময় ব্যায় করে তিনি পরিষদ ত্যাগ করে চলে যান. এর পর থেকে আর পরিষদে আসছেন না।
দোয়ারাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়. গত ১৬ অক্টোবরের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন না নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হামিদ। এতে নাগরিক সেবায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ইউনিয়নবাসী।
এবিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু জানান,দোয়ারাবাজারের ইউপি চেয়ারম্যানরা অফিসে আসছেন না এমন তথ্য কেউ জানায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।