Advertisement
পরিতোষ কুমার বৈদ্য, নিজস্ব প্রতিনিধি:
বায়ু ও শব্দ দূষণমুক্ত বাসযোগ্য শহর গড়তে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, আমাদের তরুণ-তরুনীরা ১৫ বছরের ফ্যাসিজম মুক্ত করে নতুন দেশ উপহার দিয়েছে। তারা অবশ্যই পারবে আমাদের নগরীকেও বাসযোগ্য করে তুলতে। এই কাজে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই তাদের পাশে থাকবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর এ. এস. মাহমুদ সেমিনার হলে বিশ্ব শহর দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত যুব সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন তিনি। বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ আয়োজিত সংলাপে তিনি আরো বলেন, আমরা এমন শহরে বাস করি যেগুলো প্রায়ই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অবসবাসযোগ্য নগরের তালিকায় শীর্ষে স্থান পায়। আমাদের প্রিয় ঢাকা নগরসহ অন্যান্য নগরীতে বায়ু দূষণের মাত্রা মারাত্মক এবং ঢাকা প্রায় সময়েই দূষণের শীর্ষে থাকে। এই বায়ু দূষণের কারণে দেশে প্রচুর পরিমাণ মৃত্যু ঘটছে এবং গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। ঢাকা শহর হচ্ছে বায়ু ও শব্দদূষণে শীর্ষে থাকা নগরী। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আমরা বর্জ্যব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারিনি। ঢাকায় বা শহরগুলোতে শিশুদের খেলার কোন জায়গা নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর মঞ্জু মারিয়া পালমা বলেন, মানব উন্নয়ন সূচকে অন্যান্য শহরগুলোর তুলনায় ঢাকা পিছিয়ে আছে। বর্তমানে ২ কোটিরও বেশি মানুষ এই শহরে বাস করে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ধরণের সমস্যায় আমাদের এই শহর পর্যদুস্ত হলেও আশার বিষয় যে আমাদের যুবরা এই বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের যুবরা বৃক্ষরোপণ, বর্জ্যমুক্ত রাস্তা, ওয়ার্ড ঘোষণা করছে। তাই আশা করি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে ক্ষতি হচ্ছে তা থেকে যেন বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারে।
ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি)’র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, আমাদের সিচুয়েশন আসলেই ক্রিটিক্যাল, তাই যুবদের এগিয়ে আসতে হবে। যুবদের লিডারশীপে থাকতে হবে। তরুণদের আইডিয়াগুলো নিতে হবে এবং যুবদের স্টেকহোল্ডারদের কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। প্ল্যানিং ও পলিসির জায়গায় তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। এই তরুণরা বাস্তবায়নে যদি এগিয়ে আসে তবেই পরিবর্তন আসবে। বিকেন্দ্রিকরন করতে হবে বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন। প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিকভাবে করতে হবে এবং তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বর্তমানে আমরা পরিবেশ সংস্কারের যে জায়গায় আছি, আমাদের উচিত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার পরিকল্পনা করা। তরুণদের নেতৃত্বে দূষণমুক্ত শহরের তালিকায় ঢাকার নাম যেন আসে, সেই প্রত্যাশা করি। তিনি বায়ু দূষণ, শব্দ, দূষণ এবং প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় সরকারকে সহায়তা করার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার বলেন, শহর অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণীয় প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাব থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার দরকার। তার জন্য সর্বপ্রথম আমাদেরকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে, ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করতে হবে পাশাপাশি পানি ও বিদ্যুতের অপচয় কমাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র ডিরেক্টর চন্দন জেড. গোমেজ বলেন, বসবাসযোগ্য শহর এবং দূষণমুক্ত শহর বিনির্মাণে সবাই যার যার জায়গা থেকে কন্ট্রিবিউশন করলেই সমস্যার উত্তরণ সম্ভব। এই মুহূর্তে আমাদের ৫০০ স্কুলে জলবায়ু বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের কর্ম এলাকায় আমরা শিশু ও যুবদের নিয়ে ক্লিনিং কর্মসূচী করবো। এখন থেকে প্রতিমাসে একদিন আমরা ক্লিনিং ডে হিসেবে ঘোষণা করবো। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ক্লাইমেট জাস্টিস নিয়ে কাজ করতে চাই।