lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
Last Updated 2024-10-24T12:11:44Z
রাজনীতি

মৌলভীবাজারের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা অধরা, বিপাকে তৃণমূল

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজার জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারা গত ৫ আগস্ট সকাল পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়েছেন জেলার সর্বত্র। এরপরই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই গ্রেপ্তার ও জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে গা ঢাকা দিয়েছেন দলের প্রভাবশালী থেকে শুরু করে মাঠের সাধারণ কর্মীরাও। অনেকে পাড়ি জমিয়েছেন প্রবাসে। আবার কেউ কেউ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এমন খবরও চাওর হচ্ছে জেলাব্যাপী।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে মৌলভীবাজার জেলার সর্বত্রই ছিল দলটির শীর্ষ নেতাদের একচ্ছত্র দাপট। তারাই ছিলেন জেলার সবকিছুর নিয়ন্ত্রক, হর্তাকর্তা-বিধাতা। জেলার চারটি সংসদীয় আসনে গত ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা হলেন মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা) আসনে সাবেক বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন; মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া উপজেলা) আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল; মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর উপজেলা) আসনে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান এবং মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা) আসনে সদ্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ। তাদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু তারা রয়ে গেছেন অধরা। তারা কোথায় আছেন, কেমন আছেন কেউ জানে না। এছাড়া জেলায় সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ, প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিন এবং সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন। এদের মধ্যে সৈয়দা সায়রা মহসিন ও সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিনের নামে কোন মামলা নেই। মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নেছার আহমদের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতা ও সহিংসতার মামলা হলেও তিনি লাপাত্তা। তবে মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বিদেশ থেকে ফেরার পর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

জেলার চারটি আসনের সাবেক সংসদ সদস্যরা ছাড়াও সাত উপজেলা সর্বত্র যাদের দাপটে একসময় কাঁপতো তারা হলেন জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, মৌলভীবাজার পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র ফজলুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন, বড়লেখা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিনের ভাগ্নে সোয়েব আহমদ, পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবু ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, জুড়ী উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি, রাজনগর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান খান, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদের ভাই ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল, পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র জুয়েল আহমদ প্রমুখ। তারাও ৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা। শুধুমাত্র শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসে পরবর্তীতে মৌলভীবাজার আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।

৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ বাদি হয়ে জেলার বিভিন্ন থানা ও আদালতে মামলা করেছেন পচিশটির অধিক। এসব মামলায় সাবেক মন্ত্রী, সাবেক এমপি, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, পৌরসভার সাবেক মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাংবাদিকের নামল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের বা তৃণমূলের অনেক কর্মী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু দলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা ও জনপ্রতিনিধি এখনো রয়েছেন আত্মগোপনে।

একাধিক বিশ্বস্থ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, চার সাবেক সংসদ সদস্য কোথায় আছেন জানা না গেলেও কারো কারো অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরমধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার সুয়েব রয়েছেন লন্ডনে, জেলা যুবলীগের সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমন রয়েছেন আমেরিকায়, মৌলভীবাজার পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র মো. ফজলুর রহমান ভারতে অবস্থান করছেন। অন্য নেতাদের কেউ কেউ বিদেশে আবার কেউ কেউ দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। আর বিপাকে রয়েছেন এসব নেতাদের সমর্থন দেয়া, দলের পক্ষে কাজ করা তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা। এরইমধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন, অনেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক কর্মী বলেন, ‘গত ১৬ বছর যারা হালুয়া-রুটি খেয়েছে, ব্যাংক ব্যালেন্স বড় করেছে তারা আজ লাপাত্তা। বিপদে পড়েছেন তৃণমূলের কর্মীরা। অথচ এই তৃণমূলের কর্মীরাই নিঃস্বার্থভাবে দলের জন্য, দলের নেতাদের জন্য নিরবদি কাজ করে গেছেন।’

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও যুবলীগ নেতা মো. বদরুজ্জামান সেলিম সম্প্রতি তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, এমপি ও যে সকল নেতা মসজিদ, মন্দির, মাদরাসার প্রকল্পের টাকা মেরে খেয়েছেন আপনারা কোথায়? আপনাদের নিয়ে আমরা তৃণমূলের কর্মীরা চিন্তিত। আপনারা আমাদের খবর না নিলেও আমরা আপনাদের খবর জানতে চাই, যদিও তৃণমূলের কর্মীদের খবর কোনদিনই আপনারা নেননি।'