Advertisement
স্টাফ রিপোটার্র : নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের মুতীর্মান আতঙ্কের নাম যুবলীগ নেতা কালাম সারোয়ার বুলবুল। তার হুঙ্কার ও ভীতি প্রদর্শণে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিটি কর্মকর্তা—কর্মচারী দিন যাপন করছে অজানা আতঙ্কে। সদ্য বিদায়ী সরকারের আমলে নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ—বদলী, টেন্ডার কার্যক্রমে কথিত যুবলীগ নেতার ছিলো একক আধিপত্য। যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে নরসিংদী ১শত শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল, জেলা সিভিল সার্জন এর কার্যালয়সহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতো কালাম সারোয়ার বুলবুল। শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এর ছত্রছায়ায় ও জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ, যুবলীগ নেতা পৌর কাউন্সিলর পারভেজ এর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় বুলবুল ও তার সহযোগী স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী বেলায়েত হুসেন প্রভাব বিস্তার করতো জেলার প্রতিটি হাসপাতালে। তাদের সাথে যোগাযোগ না করে হাসপাতালগুলোর বাৎসরিক ঔষধ ক্রয়, রোগীদের খাবার সরবরাহ, পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগসহ প্রতিটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতো বুলবুল। তার কথার বাইরে গিয়ে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ কোন টেন্ডার বা অর্থনৈতিক কার্যক্রম করতে গেলেই বাধ সাধতো সে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলী এমনকি চাকরী থেকে বরখাস্তের হুমকী দিতো। নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের কথিত মাফিয়া বুলবুল সিন্ডিকেটকে না জানিয়ে কতৃপক্ষ কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে বদলী করলে সাথে সাথে মন্ত্রীর ডিও লেটার এর মাধ্যমে তা পুন:বহাল করতো। সে কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর উপর ক্ষিপ্ত হলে নামে বেনামে তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানী করা হলো যেন তার রোটিন ওয়ার্ক। এক কথায় টেন্ডার, নিয়োগ বদলী বাণিজ্য করতো এ মাফিয়া চক্র। গত ৫ আগষ্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে তার অপকর্মের সহযোগীরা গা—ঢাকা দিলে স্বাস্থ্য বিভাগে বুলবুল তার আধিপত্য ধরে রাখতে পূর্বের ন্যায় প্রতিটি হাসপাতালে যাতায়াত, কর্মকর্তা কর্মচারীদের নামে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট মিথ্য অভিযোগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। সরকার পরিবর্তন হলেও বুলবুল আতঙ্কে ভূগছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার বর্তমান সিভিল সার্জনকে তার পকেটের লোক বলে প্রচার করছে। তার নাম ভাঙ্গিয়ে জেলা ব্যাাপী স্বাস্থ্য বিভাগে তার আধিপত্য ধরে রাখতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত ১৬ বছর যাবত যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে নরসিংদী জেলা হাসপাতালের কোটি কোটি টাকার ঔষধের টেন্ডার, হাসপাতালের খাবার সরবরাহে বজায় রেখেছে তার একক আধিপত্য। জেলার অন্যান্য হাসপাতালে একাধিক ঠিকাদার সিডিউল ক্রয় করতে পারলেও নরসিংদী ১শত শয্যার জেলা হাসপাতালে কোন ঠিকাদার সিডিউল ক্রয় করতে পারতো না। কোন ঠিকাদার কোনক্রমে সিডিউল করলে টেন্ডার দিতে এলে তাকে শারিরিকভাবে নিযার্তিত হতে হতো। এ ছাড়া নারী কেলেঙ্কারীসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বুলবুল এর বিরুদ্ধে।
নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের আতঙ্ক কে এই কালাম সারোয়ার বুলবুল নরসিংদী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে নিন্মমান সহকারী হিসেবে চাকুরী জীবন শুরু করেন তিনি। কয়েক বছর যেতে না যেতেই নিয়ম নিতি লঙ্গন করে অবৈধ তদ্বিরের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করেই উচ্চমান সহকারীর পদে প্রমোশন নেন। নিযুক্ত হন জেলা সিভিল সার্জনের পিএ হিসেবে। সেখান থেকে শুরু হয় স্বাস্থ্য বিভাগে তার দুণীর্তি ও নানা অপকর্মের সূত্রপাত। জেলাব্যাপী গড়ে উঠে তার অপকর্মের নেটওয়ার্ক। সরকারী কর্মকর্তা—কর্মচারীদের বার্ষিক শারিরিক ফিটনেস সার্টিফিকেট বাণিজ্য। জেলাব্যাপী শতাধিক ক্লিনিক ডায়াগনোস্টি সেন্টার এর লাইসেন্সের নামে এককালীন, এবং নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মাসিক ফি আদায়। আদালতের মামলার বিষয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম ও দুণীর্তিতে জড়িয়ে পড়ে বুলবুল। দুণীর্তির মাধ্যমে নরসিংদী শহরে চারতলা বিল্ডিংসহ একাধিক বাড়ী, বিভিন্ন মার্কেটে দোকানপাট ক্রয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গাড়ী, ও শহরতলী এলাকায় নামে বেনামে মূল্যবান জমির মালিক বনে যায়। তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের পরিমান শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।
ছোট পদে চাকুরী করে বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক হওয়ায় তার উপর চোখ পড়ে দুণীর্তি দমন কমিশনের। অভিযোগের ভিতিত্তে দুদক কার্যালয়ে তদন্ত শুরু হয়। প্রতিমাসে একবার তাকে দুদক কার্যালয় ঢাকা গিয়ে হাজির হতে হয়।
তার অপকর্মের বিষয়টি স্বাস্থ্যবিভাগের নজরে আসলে তাকে অন্য জেলায় বদলী করা হয়। সেখান থেকে তদ্বির ও কোর্টে মামলা করে পুনরায় ফিরে আসে নরসিংদী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পূর্বের চেয়ারে। বিগত সরকার আমলে যুবলীগের নেতাদের সাথ্যে গড়ে তোলে সখ্যতা। সে ফেসবুক পেজে ছবির উপর যুবলীগ লিখা কভার ফটো দিয়ে যুবলীগ নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করতে থাকে। নিজেকে যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে তার দুণীর্তির জাল বিস্তার করতে থাকে। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম নেয়াজ ও শিল্প মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে স্বাস্থ্য বিভাগের টেন্ডার, নিয়োগ বদলী বাণিজ্য।
বুলবুলের নারী কেলেঙ্কারী : চাকুরীকালীন সময়ে জড়িয়ে পড়ে নারী কেলেঙ্কারীতে। একাধিক নারীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। নরসিংদী শহরের ভেলানগর মহল্লায় একজন স্কুল শিক্ষিকার সাথে পরকীয় লিপ্ত হলে শিক্ষিকা তাকে বিয়ে করতে বলে। সেখানে স্থানীয় লোকজন ্্এর মধ্যস্থতায় ৫০ লক্ষ টাকা শিক্ষিকাকে নিজেকে বিয়ে থেকে রক্ষা করে। সুন্দরী নারী কলিগরাও তার লুলুপ দৃষ্টি থেকে রেহায় পাইনি। ডিপার্টমেন্টে তাকে চরিত্র খারাপ বলেও অনেকে আখ্যা দেয়। ৬/৭ বছর পূর্বে নরসিংদী সদর হাসপাতালে বদলী হয়ে আসা সুন্দরী নার্সের উপর তার চোখ পড়ে। নার্সকে অন্যত্র বদলী ও চাকুরীর ক্ষতি করার ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার কু প্রস্তাব দিলে উক্ত নার্স জেলা সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বুলবুল এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর শুরু হয় নার্স ও তার স্বামী স্বপন মিয়াকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, দিতে থাকে প্রাণ নাশের হুমকি। প্রাণ নাশের হুমকির প্রেক্ষিতে নার্স দম্পতি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতে থাকে। এক পর্যায়ে বুলবুলের হুমকী থেকে বাঁচতে তারা নরসিংদী সদর থানায় একাধিক সাধারণ ডাইরী করে। এদিকে বিভাগীয় তদন্ত সম্পন্ন হয় তার বিরুদ্ধে। একাধিক তদন্ত চলাকালে নার্সের স্বামীকে তার বাড়ীর এলাকা শহরের দত্তপাড়ায় সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার ঘটনায় বুলবুলকে আসামী করে নরসিংদী সদর থানায় মামলা হয়। এদিকে প্রাণভয়ে নার্স অন্য জেলায় স্বেচ্ছায় বদলী হয়ে চলে যায়। সিভিল সার্জন অফিসে পরবর্তীতে ১শত শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে কর্মরত একজন স্বামী পরিত্যক্তা অফিস সহকারীর সাথে চলতে থাকে তার পরকীয়া। অফিস কক্ষেই স্টাফদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে তাদের গোপন অভিসার। কয়েক বছর যাবত এসব চলতে থাকলে মহিলা অফিস সহকারীর উপর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কতৃপক্ষ। তাকে জেলার বাহিরে অন্য জেলায় বদলী করা হয়।
কালাম সারোয়ার বুলবুল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রায় ২ বছর পূর্বে নরসিংদী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করে। তার অবসরে এ বিভাগের কর্মকতার্ কর্মচারীরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। এ সুখ তাদের বেশীদিন সহ্য হয়নি অবসর গ্রহণের পর থেকে আরো বে—পরোয়া হয়ে উঠে বুলবুল। এবার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উপর একছত্র নিয়ন্ত্রণ নিতে কাজ করতে থাকে। টেন্ডার, খাদ্য সরবরাহ, আউট সোর্সিং, প্রতিটি বিষয়ে সে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। কোন কর্মকর্তা কর্মচারী তার কথা না শুনলেই তার উপর নেমে আসে মানুষিক নিযার্তন। নামে বেনামে তাদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দিতে থাকে। মিথ্যা অভিযোগ থেকে বাঁচতে কর্মকর্তা—কর্মচারীরা বাধ্য হয়ে তার সাথে গোপনে লিয়াজো করে চলে। এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ সত্য প্রমাণিত না হলেও তদন্তের নামে হয়রাণীর শিকার হয় তারা। স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরী করার সুবাদে কীভাবে অভিযোগ করলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নাজেহাল করা যায় তা তার জানা আছে। তাই যখনি কোন কর্মচারী বুলবুলের কথা না শুনে এমনি মিথ্যা অভিযোগ করা হয় তার বিরুদ্ধে।
ইতোপূর্বে কালাম সারোয়ার বুলবুলের নানা অনিয়ম—দুণীর্তি, টেন্ডারবাজি, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, তদ্বির ও নারী কেলেঙ্কারীর বিষয়ে স্থানীয় —জাতীয় ও অন লাইন মিডিয়ায় একাধিক সংবাদ প্রচার হয়। তার পরেও র্নিলজ্জ বুলবুল দলীয় ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে করে যাচ্ছে নানা অপকর্ম। হয়ে উঠে নরসিংদী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুর্তিমান আতংক।