lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৪
Last Updated 2024-10-25T14:33:15Z
মতবিনিময় সভা

শ্রীমঙ্গলের গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা হাজী মুজিবের মতবিনিময়

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব)। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে শহরের কলেজ রোডস্থ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) বলেন, ‘আমি মূলত ২০০০ সালে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশ নিতে আসি। প্রথমেই আমি কমলগঞ্জে আমার মায়ের নামে উম্মেরুন্নেছা দাতব্য চিকিৎসালয় করি। এখানে সপ্তাহে দুইদিন চিকিৎসা পরামর্শ ও ঔষধপত্র বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে আমি আমার বাবার নামে আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করি আমার নিজ উদ্যোগে। কলেজ প্রতিষ্ঠায় কারো কাছ থেকে কোন সহযোগিতা নেইনি। আমি একা জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণ করে কলেজ করি। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে চালিয়ে যাই। ব্যক্তিগতভাবে আমার অর্থায়নে কমলগঞ্জে বেশ কয়েকটি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেই। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় দুস্থ ও দরিদ্র পরিবারের মাঝে চারশত টিউবওয়েল প্রদান করি। এই দুই উপজেলায় সকল মসজিদ ও মন্দিরে আমার আর্থিক অনুদান আছে। ওই সময়ে আমি বন্যা কবলিত কমলগঞ্জ উপজেলায় কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে ধলাই নদীর বাধ নির্মাণ করে দেই। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হই। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়নে মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল এলাকা) আসনে নির্বাচন করি। নির্বাচন পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে প্রথমেই আমাকে তারা আমার প্রতিষ্ঠা করা আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ থেকে বিতারিত করে। সেখানে শহীদ বাহিনী ও তার ভাইকে দিয়ে তাার কলেজটি চালায়। আমাকে সেখানে যেতে দেয়নি। ২০০৯ সালে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হই। ওই কমিটি ঘোষণার পর আমি ও আমার ভাই (কমলগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান) শামীম আহমদ চৌধুরী এ এলাকায় আসলেই এবং শ্রীমঙ্গলে দলের নেতাকর্মীরা আমাদের স্বাগত জানাতে মিছিল দেওয়ার জন্য জড়ো হলেই হামলা চালিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয় এবং কমলগঞ্জে মিছিল শেষে সরকারের নির্দেশে আমি ও আমার ভাইসহ কয়েকজনতে গ্রেপ্তার করে আমাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং ৬১ জনকে আসামি করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ও হাজতে প্রেরণ করে। তখন থেকেই মামলার কার্যক্রম তারা শুরু করে। ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখের পূর্বে আমিসহ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের অসংখ্য নেতাকর্মীকে তারা বারবার মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করে এবং নির্যাতন করে। অনেকবার জেল, জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হই আমি। বিগত সময়ে আমার ইফতার পার্টিতে হামলা করা হয়েছে। ইফতার পার্টি আমরা করতে পারিনি। শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্ত¡রে মিছিল থেকে হামলা করে নেতাকর্মীদের আহত করে গ্রেপ্তার করাও হয়েছে। শহরে আমাদের গেইট আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে শ্রীমঙ্গলের ভোজপুরে আমাকে নির্বাচনী সভা করতে দেওয়া হয়নি। বিরাহিমপুরে নির্বাচনী সভায় হামলা করে ভাংচুর করে সভা পন্ড করে দেওয়া হয়েছে। খাসগাঁওয়ে বিএনপির সম্মেলন করার জন্য প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সস্মেলন করতে দেওয়া হয়নি। এইভাবে গত ১৫ বছরে এমন সব ঘটনা ঘটিয়েছে, হামলা করেছে তা বলে শেষ করার মতো নয়। গত ১৫ বছরে আমি ২-৪ দিনের বেশি এলাকায় আসতে পারিনি। এমনও হয়েছে আমি পূজার সময় কোন মন্দিরে উপস্থিত হলে ওই পূজামন্ডপের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে হয়রানী ও নির্যাতন করা হয়েছে। অনেক মসজিদ, মন্দির কমিটি আমার কাছ থেকে বয়ে সাহায্য-সহযোগিতা নেয়নি, আমাকে বসতে দেয়নি। আমি সামনে আসলে অনেকে ভয়ে সরে গেছেন আমার সামনে থেকে।’

কান্না জড়িত কণ্ঠে হাজী মুজিব বলেন, ‘একবার ঈদের আগের দিন আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়িতে এসেছিলাম এলাকাবাসীর সাথে ঈদ করবো সে আশায়। সন্ধ্যার সময় আমি বাড়িতে এসে হাতে মেহদি লাগাই। এ সময় থানার ওসি আমাকে বলেন ১০ মিনিটের মধ্যে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাকা থেকে চলে না গেলে আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে। যেহেতু পরেরদিন ঈদ তাই আমি যেতে চাইনি। পরে দেখি পুলিশ গাড়ি, ভ্যান নিয়ে আমার বাড়ির পাশ পর্যন্ত চলে এসেছে। বাধ্য হয়ে আমি হাওরের মাঝ দিয়ে অন্য সড়ক ধরে শ্রীমঙ্গল হয়ে শায়েস্তাগঞ্জে যাই। সেখান থেকে ট্রেনে ঢাকা পৌছি। ঢাকায় গিয়ে দেখি সমস্ত দোকানপাঠ বন্ধ। আমি একটা প্যাকেট সেমাই, একটু চিনি পর্যন্ত কিনতে পারিনি। পরের দিন লেডিস ক্লাবে মেডাম (বেগম খালেদা জিয়া) আসেন। সেখানে মেডামের সাথে সাক্ষাত করে বাসায় যাবার পর আমার মামী শ্বাশুড়ি আমাকে কিছু সেমাই ও কিছু পোলাও দিয়েছিলেন। এভাবে আমার দিন কেটেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেবের বার্তা পৌছে দেওয়ার জন্য আপনাদের সাথে মতবিনিময় করছি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমি শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করেছি জনাব তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশ পালন করার জন্য। আমার সমস্ত নেতাকর্মীকে আমি জনাব তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশনা মতো বলে দিয়েছি কেউ চাঁদাবাজি, দখলবাজি এইসবের মধ্যে জড়িত হতে পারবেন না। এছাড়া মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি। গত ১৫ বছরে সাবেক এমপি আব্দুস শহীদ ও ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকরের হুমকি-ধামকি, হামলা-মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন কারনে প্রিয় সাংবাদিক ভাই-বন্ধু ও আমরা একসাথে কাজ করতে পারিনি। আমি জানি ওই ফ্যাসিবাদের শাসনামলে কেউ সত্য ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করলেও তাকে জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছে।’ 

গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে হাজী মুজিব বলেন, ‘আমি জানি গত ১৫ বছরে অনেকেই ইচ্ছেয় হোক বা অনিচ্ছায় হোক তাদের মত প্রকাশ করতে পারেননি। বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছে অনেককে। ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ বলতো তুমি আমাদের বাইরে কোন কিছু লেখতে পারবে না, তুমি হাজী মুজিবের ব্যাপারে কোন কিছু লেখতে পারবে না। আমার নেতা তারেক রহমান সাহেব বলেছেন এখন যার যেভাবে মনে চায় সে লেখতে বাধা নেই। আমার পক্ষে বা বিপক্ষে যেভাবে ইচ্ছে লেখতে পারে। তবে আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো আমাদের কোন কথাকে বিকৃত করে কিছু লিখবেন না। অনেক সময় আমরা দেখেছি কারো কথা বা বক্তব্য বিকৃত করে লেখা হয়েছে। আমি নতুন শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ বির্ণিমানে আপনাদের অর্থাৎ সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা চাই। আমি আপনাদের সাথে নিয়ে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। বিশেষ করে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বন্ধে ভূমিকা রাখতে চাই। আমার পজিটিভ কাজগুলো প্রচারে সহায়তা করবেন।’

মতবিনিময় সভায় আলহাজ্ব মুজিবুর রহমানের সাথে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক মো. তাজউদ্দিন তাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন, কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. দুরুদ আহমদ, শ্রীমঙ্গল পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মো. মোসাব্বির আলী মুন্না, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মহিউদ্দিন জারুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

মতবিনিময় সভায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরীকে (হাজী মুজিব) শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।