lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪
Last Updated 2024-10-01T17:27:38Z
ব্রেকিং নিউজ

এগিয়ে নারীরা, ঠাকুরগাঁওয়ে দিনে ৪ বিয়ে বিচ্ছেদ !

Advertisement


 

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:

কোনো দম্পতির বিয়ের বয়স ছয় মাস, কারও ২ বছর, আবার কারও ৫ বছর পেরিয়েছে। অনেকের বিয়ের বয়স ১ দশক পেরিয়ে হয়েছেন ২--১ সন্তানের অভিভাবক। স্বামী-স্ত্রীর এমন দীর্ঘদিনের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। কয়েক বছর আগেও বিয়ে বিচ্ছেদের এমন ঘটনা ঠাকুরগাঁও জেলায় কম শোনা গেলেও বর্তমানে বিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।প্রতিদিন গড়ে বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে ৪টি করে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সংসারে বনিবনা না হওয়া, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের কারণে দিন দিন বেড়ে চলছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। 


ঠাকুরগাঁও জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত ৮ মাসে ঠাকুরগাঁও জেলায় বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে ১১শ। এর মধ্যে নারীর মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়েছে ৬০০টি, ছেলের মাধ্যমে হয়েছে ৩০০টি আর পারিবারিকভাবে হয়েছে ২০০টি। স্থানীয় সমাজকর্মী আবু মহিউদ্দিন বলেন, বিয়ে বিচ্ছেদ সমাজে একটি ব্যাধির মতো হয়ে গেছে। বিয়ে বিচ্ছেদ প্রতিকারের জন্য সচেতনতা জরুরি। বর্তমান সমাজে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই বেশিরভাগ সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটি পরিবারের সুন্দর সম্পর্কের যে প্রয়োজনীয়তা এসব নিয়ে সমাজের সবাইকে সচেতন করা দরকার। বিয়ে বিচ্ছেদ কমানোর জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হবে।


ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বিয়ে বিচ্ছেদ অনেক বেড়ে গিয়েছে। বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের জন্য অনেকগুলো কারণ থাকে। আমি গত ১ মাসে যতগুলো তালাক করেছি বেশিরভাগই মেয়েপক্ষ থেকে হয়েছে। ছেলেপক্ষ থেকে বা উভয়পক্ষ থেকে তালাক খুবই কম। আর মেয়েপক্ষ থেকে বিচ্ছেদের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সংসারে বনিবনা না হওয়া ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন প্রধান কারণ। আমরা চেষ্টা করি একটি বিচ্ছেদের আগে যেন কোনোভাবে সেটাকে আটকানো যায়, কিন্তু তারপরও তা সম্ভব হয় না। আর একটি বিচ্ছেদের জন্য অনেকগুলো মানুষকে সেটার কুফল ভোগ করতে হয়।


ঠাকুরগাঁও শহরের হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিয়ে করেছি প্রায় ৪০ বছর। স্ত্রী আর আমি ২জন মিলে বিয়ের এতদিন পার করলাম। সংসারে অনেক ঝগড়া-বিবাদ হয়। আমরা সেগুলো নিজেদের মধ্যো আলোচনা করে ঠিক করে নেই। কিন্তু কোনো দিনও বিচ্ছেদ হবে এমনটা আমরা চিন্তাও করিনি। আমাদের সন্তানদেরও একই শিক্ষা দিয়েছি। ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পরিবারে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে সব সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু এখন দেখা যায়, সামান্য সমস্যা হলেই ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিবারের বাঁধনগুলো এখন খুবই দুর্বল। তাই আমাদের সবার প্রয়োজন পরিবারের যে গুরুত্ব এটা বোঝা এবং সবাইকে এ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া। ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন বলেন, আদালতে এখন যতগুলো বিচ্ছেদের জন্য আসে তার মধ্যে মেয়েপক্ষ থেকে বেশি আসে। সংসারে স্বামী-স্ত্রী মিল না হওয়ার কারণেই তালাক হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, সংসার জীবনে সমস্যাগুলো সমাধান করে একে অপরের ভুলত্রুটি মেনে নিয়ে চলাই জীবন।

ঠাকুরগাঁও জেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদেরকে বলেন, বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক সাধারণত তিন প্রকার। ছেলেপক্ষ থেকে তালাক, মেয়েপক্ষ থেকে তালাক ও উভয়পক্ষ থেকে তালাক। এ বছর মেয়েপক্ষ থেকে তালাক বেশি হয়েছে। পারিবারিকভাবে তালাকের সংখ্যা খুবই কম।