Advertisement
সালাম মুর্শেদী, (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নাকের ডগায় ছুটে বেড়াচ্ছে পল্লি পশু চিকিৎসকরা। বেড়েছে তাদের দৌরাত্ম। অনেকের বিরুদ্ধে আবার ভুল চিকিৎসায় পশু মেরে ফেলারও অভিযোগ উঠছে। অনেকে আবার সরকারি ভেটেরিনারি হাসপাতালে পশুকে চিকিৎসা নিতে নিরুৎসাহিত করছেন। এতে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। এমতাবস্থায় প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ও নজরদারি চাচ্ছেন এলাকাবাসী।
সম্প্রতি ভুল চিকিৎসায় এক খামারির গরু ও বাছুরকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে শ্রী স্বাধীন শর্মা নামে এক পল্লি পশু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই খামারির নাম আব্দুল হামিদ। তিনি উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের সোনাপাতিলা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে। ভুল চিকিৎসায় তার গরু ও বাছুরকে মেরে ফেলার অভিযোগে পল্লি পশু চিকিৎসক স্বাধীন শর্মার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ও আটোয়ারী থানা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই খামারি।
লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, গত (২২ অক্টোবর) আব্দুল হামিদের গরুর প্রসব বেদনা শুরু হয়। এমতাবস্থায় বাড়ি থেকে উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল দূরে হওয়ায় স্থানীয় পল্লি পশু চিকিৎসক স্বাধীন শর্মাকে ডেকে আনেন। ওই সময় হামিদ, স্বাধীন শর্মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে বলেন এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে বড় ডাক্তার আনতে চায়। কিন্তু স্বাধীন শর্মা তাকে আশ্বস্ত করেন যে, 'তিনিই গরুটির বাচ্চা বের করে দিতে পারবেন'। পরে হামিদ না করার পরেও গরুর বাচ্চা বের করতে শুরু করেন স্বাধীন শর্মা। দীর্ঘ সময় অতিক্রম করার পরে একটি মৃত বাচ্চা বের করেন ওই চিকিৎসক। সেময় জীবিত বাচ্চা বের করতে না পেরে এবং গুরুকে কয়েকটা ইনজেকশন দিয়ে নানা অযুহাতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায় ওই চিকিৎসক।
পরে তিন দিন অতিক্রম করলেও ওই চিকিৎসকের কোন খোঁজ পায়নি ভুক্তভোগী খামারি। তবে এর মধ্যে শুধু ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ হয়েছিল। ফোনে তিনি আসব আসব বলে আশ্বস্ত করলেও চিকিৎসার জন্য ওই গরুকে দেখতে যাননি ওই চিকিৎসক। পরে ভুল চিকিৎসার কারণে গরুটিও মারা যায় বলে অভিযোগের বরাতে জানা যায়।
এনিয়ে স্বাধীন শর্মা নামে ওই পল্লি পশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, 'তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা নয়৷ চিকিৎসাধীন অবস্থায় গরুটির মৃত্যু হয়েছে এবং মৃত অবস্থায় গরুর বাচ্চাটিও বের হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, "আমি সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি৷ বাছুরটি মৃত অবস্থায় বের হয় কারণ আগে থেকেই সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। এবং গরুটিকেও সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল কিন্তু মৃত বাচ্চা বের হলে সেখানে কারো হাত থাকেনা"।
সার্বিক বিষয়ে আটোয়ারী উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভুল চিকিৎসায় একটি গরু ও বাছুরের মৃত্যু হওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে একটি লিখিত এসেছে। আমরা বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের সাপেক্ষ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব৷ তিনি আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে আটোয়ারী থানাতেও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই খামারি। স্থানীয় ভাবে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
তাহলে শুধু জরিমানা ও সমঝোতাই কি ভুল চিকিৎসকদের শাস্তি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে আসা অভিযোগ পত্রটি ফরওয়ার্ড করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দিয়েছি। আমরা উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর, থানা ও উপজেলা প্রশাসন যৌথ ভাবে কাজ করব। এমন ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উপর্যুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে কেউ অভিযোগ করলে ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা, তিন বছরের জেল অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। কিন্তু আমরা এসব জেল জরিমানা করতে গেলে স্থানীয় বা দলীয় ভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।