Advertisement
বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর গ্রেপ্তার খবরে তার নির্বাচনী এলাকা বরগুনা- আমতলী-তালতলীতে আনন্দের বন্যা বইছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার দলের নেতাকর্মীরা দ্রুত তার শাস্তি দাবী করেছেন।
জানাগেছে, বরগুনা-১ আসনের পাঁচ বারের সাবেক সাংসদ অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তার রাজনৈতিক জীবনে গড়ে তুলেছেন অপরাজনীতির সংস্কৃতি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে হাইব্রীড আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন। গড়ে তুলেছেন অপরাধের অভয়ারন্য। ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমতলী উপজেলায় এক সময়ের বিএনপি নেতা সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান খলিফা ও তার ভাই সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানকে দলে এনে গড়ে তুলেছেন অপরাজনীতির সংস্কৃতি। তাদের মাধ্যমে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের শোষন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন এমন অভিযোগ তৃণমুল নেতাকর্মীদের। ত্যাগী নেতাকর্মীরে দলের মধ্যে জায়গা দেয়নি শম্ভু। কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তালতলী উপজেলায় রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, জাকির হোসেন চুন্নু মাষ্টারসহ বেশ কয়েকজন নেতার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। শেখ হাসিনার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করেছেন শম্ভু। পাঁচবার সাংসদ থাকাকালিন অবস্থায় কয়েক’শ কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ঢাকাসহ ভারত, আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরে গড়ে তুলেছেন অট্টালিকা এমন দাবী দলীয় নেতাকর্মীদের। গত ১৫ বছরে তিনি বরগুনা-আমতলী-তালতলীর মানুষকে শোষন ও নির্যাতন করেছেন। দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করে নেতাকর্মীদের বিভক্ত করে রেখেছেন। তার পছন্দের নেতাকর্মী দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন। গত ১৫ বছরে শম্ভু ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দুঃশাসনে দলীয় নেতাকর্মী ও প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে এমন দাবী তৃণমুল কর্মী আফজাল হোসেনের। ওই সময়ে আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মজিবুর রহমান, চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খাঁনসহ গুটি কয়েক নেতা আমতলীতে অপরাধের সাম্রজ্য গড়ে তোলেন। তাদের ইশারা ছাড়া আমতলীর একটি পাতাও নড়তে পারেনি। জমি দখল, নিয়োগ বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য, মাদক বানিজ্য, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং লালন পালনসহ সকল অপরাধই ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। কিশোর গ্যাং লিডার ইসফাক আহম্মেদ তোহা ও সবুজ ম্যালাকারসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে দলের সিনিয়র নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষদের মারধর করাতো। উপজেলার নেতারা সকল বানিজ্যের টাকার সিংহভাগ পৌছে দিতেন সাংসদ শম্ভুর কাছে। তার এমন কৃতকর্মের খবর পৌছে যায় প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে। ফলে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়েও শম্ভু স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান। গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ শেষে ভারতে পালিয়ে গেলে শম্ভুর আত্মগোপনে চলে যান। গত তিন মাস নিরুদ্দেশ ছিলেন তিনি। গত সোমবার রাতে ঢাকার উত্তরা ডিবি পুলিশের হাতে শম্ভু গ্রেপ্তার হন। তার গ্রেপ্তারের খবর বরগুনা-আমতলী-তালতলীতে ছড়িয়ে পড়লে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গ্রেপ্তারের খবরে নেতাকর্মীরা উচ্ছাসিত। দ্রæত তার শাস্তি দাবী করেছেন তারা।
আমতলী উপজেলা যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মিরাজ হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন শম্ভু তার পছন্দের লোক দিয়ে দুইটি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানী করেছেন।
আমতলী উপজেলার সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান তামান্না আফরোজ মনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, গত ১৫ বছরে শম্ভুর কাছে যেতে পারিনি। একদিন দেখা করার জন্য বেশ চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেনি।