lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪
Last Updated 2024-11-06T13:39:41Z
ব্রেকিং নিউজ

শ্রীমঙ্গলে মরা বিলাস নদী দখল করে চাষাবাদ!

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সুপ্রসিদ্ধ বিলাস নদীতে এক সময় বড়-বড় জাহাজ চলাচল করতো। কালের বিবর্তনে খরস্রোতা নদীটি এখন ছোট খাল। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য হতে বাংলাদেশের প্রবেশ করে শ্রীমঙ্গলের ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিলাস নদীটি বিস্তৃত হাইল হাওরে গিয়ে গোপলা নদীতে মিলিত হয়েছে। ঢাকা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের মতিগঞ্জ এলাকাস্থ ব্রিজ সন্নিকটে এসে নদীটি অনেকটা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মূল নদীর পশ্চিমাংশে নদীর ¯ প্রবাহিত হলেও পূর্বাংশ মরা নদী নামে পরিচিত। বিলাস নদীর মরা অংশে শুস্ক মৌসুমে পানি থাকেনা বললেই চলে। এ অংশের মতিগঞ্জ এলাকার অলিপুর নামক স্থানে মরা নদী জবরদখল করে করে চাষাবাদ করছেন স্থানীয় আব্দুল হান্নান নামের জনৈক ব্যক্তি। শুধু চাষাবাদ নয় মরা নদীর পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি, সড়কের পাশের গাছ কর্তন, স্থানীয় ফিসারীগুলো থেকে মাছ চুরিসহ নানা অভিযোগ ওঠেছে আব্দুল হান্নান ও তার পুত্র মাসুম মিয়ার বিরুদ্ধে।

সরজমিনে উপজেলার ৩ নম্বর শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের অলিপুর (মতিগঞ্জ) এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রিটিশ-বাংলা এগ্রো লিমিটেডের সামনে মরা বিলাস নদীর অংশে ধানের বীজ রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দুই শ্রমিক। ওই স্থানে সরকারি গ্রাম্য সড়কের পাশে রয়েছে একটি কাটা গাছ। স্থানীয়রা জানান, আব্দুল হান্নান জোরপূর্বক মরা বিলাস নদীর সরকারি জমি দখল করে চাষাবাদ করছেন। আর গাছটি কেটেছেন তার পুত্র মাসুম মিয়া।

মরা বিলাস নদীর সরকারি ভূমিতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘আমাদেরকে হান্নান মিয়া লেবার (শ্রমিক) হিসেবে এনেছে কাজ করার জন্য। জায়গাটি সরকারি গাংগের (নদীর) জায়গা। আমরা শ্রমিক মানুষ। হান্নানের কথায় এখানে কাজ করতে এসেছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘এখানে সরকারি জায়গায় হালি বিচরা (চাষাবাদ) করছে হান্নান মিয়া। ফলে পানি যাওয়ার জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। উজানে হান্নান মিয়ার একুট জায়গা আছে। তিনি মরা গাংগের পুরো অংশ সরকারি জায়গা দখল করে খাচ্ছেন।’

অলিপুর এলাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ-বাংলা এগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. হারুনুর রশীদ হারুন বলেন, ‘১৩ বছর যাবত আমি ব্রিটিশ-বাংলায় চাকরী করছি। আমার দেখা মতে হান্নান মিয়া ও তার ছেলে মাসুম মিয়া পুরো মরা নদীর অলিপুর অংশ ভোগদখল করে খাচ্ছেন। আমাদের ফিসারীর সামনে অংশে যখন তারা দখল করেছে তখন আমি বাধা দিতে আসলে তারা (হান্নান মিয়া ও তার ছেলে মাসুম) আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে ও মারধর করে। আমাদের একটি পানির মোটর চুরি হয়, তার ছেলে আমাদের ফিসারীর মাছ চুরি করে। আমাদের গার্ড মাসুম একদিন হান্নানের ছেলে মাসুমকে ৯ নম্বর পুকুরে মাছ চুরির সময় দেখে ধরার চেষ্টা করে। সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। সেটার কোন প্রতিবাদ হলো না। আমাকে মারারও কোন প্রতিবাদ হলো না। এ ধরণের অত্যাচার-নির্যাতন সব সময় করে তারা।’

স্থানীয় বাসিন্দা মখলিছ মিয়া বলেন, ‘জায়গা হলো ব্রিটিশ বাংলার মালিক নাঈমের দখলে। পশ্চিমপাশে যে নদী গেছে তা নাঈমের জায়গার উপর দিয়ে গেছে। বর্তমানে সরকারি মরা গাংগের জায়গা হান্নান মিয়া জোরে ভোগ করছেন। ধান রোপন করা, মাছ ধরা, জমির পাশের গাছ কাটা সব কিছু করছেন হান্নান মিয়া ও তার ছেলে।’ 

অভিযোগের ব্যাপারে মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘পতিত জায়গায় আমি বোরো ফসলের জন্য হালির জালা ফালাবো। এক থেকে দেড় মাস পরে বোরো ধানের চারা কিছুটা বড় হলে আমি এখান থেকে তুলে অন্যত্র আমার জমিতে নিয়ে রোপন করবো। এরপর এ জায়গা এমনিতেই পড়ে থাকবে। পানির রাস্তা দিয়ে পানি যায়। এখনতো বর্ষাকাল নয়, তাই এ মরা গাংগে পানি নাই। ফলে আমি জালা ফালাইছি। বোরো ধানের জালা ফালানোর জন্য আমি শ্রমিক দিয়ে এই জায়গাটি ঠিকঠাকও করেছি।’ তার ছেলে মাসুম মিয়া কর্তৃক সরকারি ভূমির গাছ কাটার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে আব্দুল হান্নান বলেন, ‘গাছ যে কাটছে তা আমি জানতাম না। আমার চাচাতো ভাই আমাকে বলেছে তোমার ছেলে রাজা মিয়া সাহেবের ফিসারীর সামনের গাছ কেটেছে। আমার ছেলে গাছ কেটে ভুল করেছে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘ঘটনা শুনে আমি আমাদের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে। তিনি সেখানে যাবেন। যদি কেউ বেআইনী কাজ করে থাকে এবং আমাদের তদন্তে আসে তবে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবো।'