Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ:
বিস্ফোরক আইনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহীদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে মৌলভীবাজার কারাগার থেকে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিছবাহউর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচ দিনের রিমান্ড চান। অপরদিকে মো. আব্দুস শহীদের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী আদালতে জামিনের আবেদন করেন। শুনানী শেষে আদালত তাকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদকে আদালতে হাজির করার সময় কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে শুনানী শেষে আদালত থেকে বের হবার সময় উপস্থিত জনতা ‘ভুয়া-ভুয়া, চোর-চোর’ ইত্যাদি গান দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এডিশনাল পিপি) অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন মোহাম্মদ মাসুক জানান, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে জেলার শ্রীমঙ্গল থানায় দায়েরকৃত ২০১৮ সালের বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাকে বুধবার (২৭ নভেম্বর) আদালতে হাজির করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচ দিনের রিমান্ড চান। প্রক্ষান্তরে আসামিপক্ষের আইনজী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী আদালতে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ধা আনুমানিক ৬টার সময় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়নের ভুজপুর বাজারে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মুজিবুর রহমানের (হাজী মুজিব) নির্বাচনী পথসভা চলাকালীন সময়ে মো. আব্দুস শহীদ ও ভানু লাল রায়ের নির্দেশে অন্যান্য আসামীগণসহ অজ্ঞাতনামা আসামীগণ দা, লাঠি, রড, ককটেল, ইত্যাদি নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পথসভা ঘেরাওপূর্বক এলোপাথারি মারপিটসহ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। একপর্যায়ে কয়েকজন আসামী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাজী মুজিবকে খুন করার উদ্দেশ্যে আঘাত করার জন্য এগিয়ে আসলে কয়েকজন সাক্ষী তাকে ঘেরাও করে প্রাণে রক্ষা করেন। এ সময় আসামীগণের এলোপাথারি আঘাতে সাক্ষীগণ আঘাতপ্রাপ্ত হন। তখন কয়েকজন আসামি হাজী মুজিবের ব্যবহৃত গাড়ী ভাংচুর করে আনুমানিক তিন লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করে। আসামিরা ঘটনাস্থলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম পূর্বক এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর দিবাগত রাতে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা দায়ের করেন ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়নের আলীসারকুল গ্রামের মো. মাক্কু মিয়ার ছেলে ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল ভুনবীর ইউনিয়ন শাখার সদস্যসচিব মো. আব্দুল আহাদ। মামলায় তিনি সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদকে প্রধান আসামী করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৫৫ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ১০০-১৫০ জনকে আসামি করেছেন। মামলার এজহারে বাদি উল্লেখ করেন ঘটনার পর ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছে তাদের জান-মালের নিরাপত্তা না থাকায় এবং পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তৎকালীন সময়ে মামলা দায়ের করতে পারেননি। বর্তমানে জনগণের সরকার ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহীদ ছাড়া তার তিন ভাই মোছাদ্দেক হোসেন মানিক, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল ও কমলগঞ্জের ১ নম্বর রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুলকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ভানু লাল রায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব বেভুল, সহসভাপতি ও ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী, সাধারণ সম্পাদক জগৎজ্যোতি ধর শুভ্র, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনাম হোসেন চৌধুরী মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ছালিক আহমদ ও বেলায়েত হোসেন, ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন জহর, ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) সংসদীয় আসন থেকে সাত বারের সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহীদকে গত ৩ অক্টোবর রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকা ছাড়াও মৌলভীবাজার জেলায় তার বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে চারটি পৃথক মামলা দায়ের হয়।