Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ৮ নম্বর দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের পাথারিয়া পাহাড়ে শেষপ্রান্তে ভারতীয় সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশি নাগরিক গোপাল বাক্তিকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে প্রতিবাদ মিছিল পৌরশহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশে মিলিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু। সমাবেশে অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. নছিব আলী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস শহীদ খান ও সাইফুল আলম খোকন, সাবেক প্রচার সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস স্বপন, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক আহ্বায়ক মুহাচ্ছিনুর রহমান বাদল, উপজেলা বিএনপি নেতা মীর মো. মখলিছুর রহমান, আব্দুল মালিক, আব্দুল জব্বার, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কাদির পলাশ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রায়হান মো. মুজিব, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহরিয়ার ফাহিম, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. ইমন আহমদ, বড়লেখা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. জাফর আহমদ প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু বলেন, ‘ভারতীয় সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিএসএফ একের পর এক সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করছে। গত আগস্টে তারা স্কুলছাত্রী স্বর্ণা দাসকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে লাশ ফেলে যায়। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) কোন এক সময় বড়লেখা সীমান্তের জিরো লাইনে বিএসএফ চা শ্রমিক গোপাল বাক্তিকে গুলি করে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিককে গুলি করে হত্যার ইন্ধন দিচ্ছে। বিজয়ের মাসে আমাদের আরো একটি ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফ আর একটি গুলি চালালে তার জবাব কিভাবে দিতে তা বাংলাদেশের মানুষ ভাল করে জানে। এই হত্যার বিচার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’
এদিকে বড়লেখায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গোপাল বাক্তি হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ মৌলভীবাজার জেলা শাখা। রবিবার রাতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তারা চা শ্রমিক গোপাল বাক্তি হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে জামায়াতের জেলা আমীর প্রকৌশলী মো. শাহেদ আলী ও জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী সীমান্তে গোপাল হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ সীমান্তে এভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা কাঙ্খিত নয়। অবিলম্বে এ ধরণের হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং গোপাল হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দ্রæত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ৮ নম্বর দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের দুর্গম পাথারিয়া পাহাড়ের শেষপ্রান্তে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি বাঁশ কাটতে যান উপজেলার নিউ সমনবাগ চা বাগানের মোকাম সেকশনের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য অকিল বাক্তির ছেলে গোপাল বাক্তি। সেখান থেকে রাত পর্যন্ত গোপাল বাড়ি ফিরে না আসায় স্বজনরা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে গোপালের স্বজনরা খবর পান বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের বিওসি টিলা বিওপির আওতাধীন সীমান্তের ১৩৯১ ও ১৩৯২ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী জিরো লাইনের গভীর জঙ্গলে একটি মরদেহ পড়ে রয়েছে। পরে স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গোপাল বাক্তির মরদেহ সনাক্ত করেন। দুপুরের দিকে বিজিবি ও থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। সন্ধ্যায় নিহত গোপালের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, অসাবধানতাবশত সীমান্তের জিরো লাইনের কাছে গেলে গোপাল বাক্তিকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এসময় তার সাথে সমনভাগ চা বাগনের আরও কয়েকজন শ্রমিক ছিল। তারা পালিয়ে প্রাণে রক্ষা করে।
বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ইমরান আহমদ বলেন, ‘শনিবার সকালে গোপাল বাক্তিসহ ওই বাগানের আরও কয়েকজন দিনমজুর দুর্গম পাহাড়ে বাঁশ কাটতে যান। বিকেলের দিকে সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিএসএফ গুলি করলে গোপাল বাক্তি নিহত হন। তার সঙ্গে থাকা অন্যরা সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। তবে শনিবার ভয়ে তারা গোপালের পরিবারের কাছে তার মৃত্যুর খবর দেয়নি।’
নিহত গোপাল বাক্তির বাবা দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর (সদস্য) অকিল বাক্তি বলেন, ‘আমার ছেলে ও অন্যরা শনিবার পাহাড়ে বাঁশ আনতে গিয়েছিল। সেখানে বিএসএফ গুলি করে আমার ছেলে হত্যা করেছে। রবিবার আমরা তার লাশের খবর পাবার পর তার সাথে থাকা অন্যরা বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যার ঘটনায় ন্যায় বিচার চাই।’