Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদক :
৯০ দশকের আলোচিত সাংবাদিক, বাংলা লন্ডন চ্যানেলের সম্পাদক আব্দুর রব ভুট্টো বলেছেন, "গেল সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে শৃংখলিত করে রাখা হয়েছিল। সাংবাদিকতার অপমৃত্যু হয়েছিল৷ ভারতের মদদপুষ্ট স্বৈরাচার আওয়ামী দুঃশাসনে দেশের সাংবাদিকেরা স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে পারেননি। সরকারের অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যারাই কলম ধরেছে তাদেরকে ভয়াবহ নিপিড়ন নির্যাতন, জেল জুলুম ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কেবল সাংবাদিক নয় তার পরিবারের সদস্যদেরও হয়রানি, তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেক সংবাদকর্মীকে খুন, গুমের শিকার হতে হয়েছে।" তিনি আওয়ামীলীগের দুঃশাসনকালে দেশ ছেড়ে যাওয়া দুই মজলুম সাংবাদিক আব্দুর রহমান ভুট্টো ও শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলির স্বদেশ আগমন উপলক্ষে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে শ্রীমঙ্গলস্থ গ্রান্ড তাজ হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
ভুট্টো বলেন, "খুনি হাসিনার রোষানলে পড়ে গেল ১৫ বছর লন্ডনে পালিয়ে জীবন বাঁচাতে হয়েছে। এই পনের বছরে দেশে মা, শশুর- শাশুড়ী মারা গেলে তাদের শেষ দেখটাও দেখতে পারিনি। লন্ডনে প্রবাস জীবনে শেখ হাসিনা কুটনৈতিক চ্যানেলে বৃটিশ পুলিশকে দিয়ে তিন দফায় হয়রানি করার ঘটনা ঘটেছে। হতাশ হয়ে একসময় আমার স্ত্রীর দাবী ছিল সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দিতে। কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আমার কলম কখনো বন্ধ করিনি।"
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হাই ডন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় দৈনিক খোলা কাগজের নির্বাহী সম্পাদক মো. মনির হোসেন, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত রবিন, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর সালাউদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক পলাশ চৌধুরী, ইসমাইল মাহমুদ, আহমেদ ফারুক মিল্লাদ, কাওছার ইকবাল, কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান, আক্তার হোসেন শামীম, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, আনোয়ার হোসেন জসিম, শিমুল তরফদার, এম এ রকিব, সাইফুল ইসলাম, সৈয়দ ছায়েদ আহমদ, আতাউর রহমান কাজল, আবুজার বাবলা, শফিকুল ইসলাম রুম্মন,শাহাব উদ্দিন আহমেদ, আব্দুস শুকুর, আমজাদ হোসেন বাচ্চু প্রমূখ। এছাড়াও মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গলের কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সকল গণমাধ্যমকর্মীরা যোগ দেন।
৯০ দশকে মৌলভীবাজার জেলার তুখোর সাংবাদিক আবদুর রব ভুট্টো সাড়ে ১৫ বছর পর সম্প্রতি দেশে ফেরেন। এছাড়া ২০২১ সালে করোনা মহামারী চলাকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর পক্ষে স্থানীয় প্রেসক্লাবে করোনা সামগ্রী ও পিপিই বিতরনের অজুহাতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে হামলা ও নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলীকে আজীবন বহিষ্কার করে থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও শহরে মানহানিকর পোস্টারিং করে সামাজিকভাবে তাকে ও তার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। সে কারণে তার স্ত্রী সরকারী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা ব্রেইন স্ট্রোক করেন। শুধু তাই নয় ইদ্রিসকে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা শ্রীমঙ্গলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ক্ষান্ত হয়নি সেদিন তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেনি। তার মেয়েরা সেদিন হাসপাতালে নিয়ে যান। ১৮ দিন তিনি আইসিওতে থাকেন। এরপর ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের রোষানল থেকে মামলা, হামলা ও প্রাণ বাঁচাতে আমেরিকা পাড়ি দেন। ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি সম্প্রতি দেশে ফেরেন। এর আগে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক এম ইদ্রিস আলীর বহিষ্কারাদের প্রত্যাহার করে তার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়।
সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টো শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলীর প্রতি ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের নেয়া নিপীড়নমূলক পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে শ্রীমঙ্গলের সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন 'এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনারা সেদিন কোনো ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন, আপনারা তার জন্য কিছুই করেননি। কিন্তু উপরে আল্লাহ একজন আছেন। তিনি ন্যায় বিচারক। আজ দেশ থেকে হাসিনা একপ্রকার নগ্ন হয়ে বিতাড়িত হয়েছেন।' তিনি বলেন, '৭১ এর বিজয় আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল, যে কারনে এদেশের মানুষ স্বাধীনতার ফল ভোগ করতে পারেনি। ছাত্র জনতার অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ২৪ এ অর্জিত এ স্বাধীনতা যেন আমাদের হাত ছাড়া না হয় তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে'।
অনুষ্ঠানে নিপিড়ীত সাংবাদিক এম ইদ্রিস আলী তার বক্তব্য আবু সাইদ, মুগ্ধদের মতো কোমলমতি হাজারো শহিদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, "যদি জুলাই-আগস্টের বিপ্লব না হতো আজ দেশে ফিরে আসতে পারতাম না। মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতাম না। সেদিন আমিসহ আমার পরিবারের ওপর ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের ও আওয়ামী দোসরদের নিপীড়নের ঝড় গিয়েছে তা এখনও আমাকে তাড়া দেয়। তাদের স্টিমরোলারে আমার স্ত্রী ব্রেইন স্ট্রোক করে। অথচ আমি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে মানহানিকর পোষ্টারিং শহরে অফিস পাড়ায় রেলস্টেশনে লাগিয়ে আমার পরিবারের সদস্যদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। শুধু তাই নয় আমার সন্তানেরা স্কুল কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে পড়েছিল। বিচার দেয়ার জায়গা পাইনি।"
তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে -সকল ভেদাভেদ ভুলে নিজেদের অধিকার ও পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাই আগস্টের বিপ্লবের চেতনায় সকলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এসময় স্থানীয় সকল সাংবাদিকদের এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।