lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
Last Updated 2024-12-08T11:10:13Z
জাতীয়

আমতলীতে একজন শিক্ষার্থীর জন্য চারজন শিক্ষক!

Advertisement


 


এইচ এম রাসেল, বরগুনা প্রতিনিধি:

একজন শিক্ষার্থীর জন্য চারজন শিক্ষক—কর্মচারী কর্মরত আছেন। তারা মাসে বেতন তোলেন প্রায় লাখ টাকা। ইতিমধ্যে আরো পাঁচজন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাতেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ বছরের পর বছর এমন অবস্থায় চললেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অলি আহাদ ও একাডেমিক সুপার ভাইজার মাহমুদ সেলিম এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। গত বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও ওই বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। রবিবার ষষ্ঠ শ্রেনীর একজন শিক্ষার্থী গনিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ওই শিক্ষার্থী কিছুই লিখতে পারেনা তাকে বহিরাগত একজনে লিখে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের দেখে বহিরাগত লোক সটকে পরেন। এমন বিদ্যালয় বিলুপ্তির দাবী এলাকাবাসীর। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া হরিদ্রাবাড়ীয়া একতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। 

শিক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল আজিজ নেছারী বলেন, এ বিষয়ে আমি আমার কপাল বলবো। যেখানে শিক্ষার্থী নেই সেখানে আমার কি কথা থাকতে পারে? একমাত্র শিক্ষার্থী আবুল খায়ের বলেন, “মুই ষষ্ঠম শ্রেনীতে পড়ি। মুইখাতায় তেমন কিছু লিখতে পারি না। মোরে স্যারেরা ধইর্যা আনছে। মোর সঙ্গে আর কোন ছাত্র—ছাত্রী নাই। একজনে মোর খাতায় লেইখ্যা দেয়। মুই শুধু বইয়্যা থাহি।  

জানাগেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়ীয়া এলাকায় ১৯৮৫ সালে কলাগাছিয়া হরিদ্রাবাড়ীয়া একতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই বছরই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়ে তেমন শিক্ষার্থী ছিল না। গত দুই বছর ধরে ওই বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে আব্দুল আজিজ নেছারী, দেলোয়ার হোসাইন, হাবিবুর রহমান শিক্ষক এবং জব্বার মিয়া কারনিক হিসেবে কর্মরত আছেন। ইতিমধ্যে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আরো পাচজন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা বিদ্যালয়ে আসেন না। ওই বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক—কর্মচারীর বিপরীতে মাত্র একজন শিক্ষার্থী রয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী আবুল খায়ের বলেন, “মুই ষষ্ঠম শ্রেনীতে পড়ি। মুইখাতায় তেমন কিছু লিখতে পারি না। মোরে স্যারেরা ধইর্যা আনছে। মোর সঙ্গে আর কোন ছাত্র—ছাত্রী নাই। একজনে মোর খাতায় লেইখ্যা দেয়। মুই শুধু বইয়্যা থাহি। শিক্ষক—কর্মচারীরা মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। কাগজে— কলমে খাতায় শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তাবে কোন শিক্ষার্থী নেই। গত বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও ওই বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক—কর্মচারী চারজন প্রতিমাসে সরকারী অনুদানের প্রায় লাখ টাকা বেতন তোলেন। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা আলতাফ আকন আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ায় প্রভাবখাটিয়ে বিগত দিনে বিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। কেউ কিছু বলতে সাহস পায়নি। এমন বিদ্যালয় বিলুপ্তির দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকলেও বছরের পর বছর শিক্ষকরা বেতন—ভাতা তুলে নেন। স্থানীয়দের আরো অভিযোগ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অলি আহাদ ও একাডেমিক সুপার ভাইজার মাহমুদ সেলিম ওই বিদ্যালয় থেকে মোটা অংকের ঘুস নিয়ে বিদ্যালয়ের এমন দশা জেনেও কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বিদ্যালয় শিক্ষক কর্মচারীরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর এভাবে চলে আসছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, কবে যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী এসেছে তা মনে পড়ে না? গত বরিবার একাডেমিক সুপার ভাইজার মাহমুদ সেলিম এসেছিল। তিনি বিদ্যালয়ে আসার আগেই শিক্ষকদের শিক্ষার্থী জোগার করে রাখতে বলেছেন। শিক্ষকরা অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী ধার করে এনেছেন। একাডেমিক সুপার ভাইজার এসে ওই শিক্ষার্থীদের ছবি তুলে নিয়ে গেছেন। ওইদিন বিদ্যালয়ে যে ছাত্রছাত্রী এসেছিল তারা কেউ এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে না। ধার করা শিক্ষার্থীদের ছবি তুলে একাডেমিক সুপার ভাইজার নিয়েছেন।

বরিবার সরেজমিতে ঘুরে দেখাগেছে, আবুল খায়ের নামের এক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে বহিরাগত এক লোক খাতায় লিখে দিচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ নেছারী ও সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে বসে আছেন। ময়লা আবর্জনায় স্তুপ আকারে পড়ে আছে, বিদ্যালয়ের চেয়ার, টেবিল ফাঁকা। 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। 

বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যালয় আশে পাশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় ছাত্র—ছাত্রী পাওয়া বড় মুশকিল। তাই বিদ্যালয়ে এ বছর কোন শিক্ষার্থী নেই।

গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, নামে মাত্র বিদ্যালয় আছে। বাস্তবে শিক্ষার্থী বলতে কিছুই নেই। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থী না থাকলেও ওই বিদ্যালয়ে অনিয়মের মাধ্যমে পাঁচজন কর্মচারী মোটা অংকের টাকায় নিয়োগ দিয়েছেন। 

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপার ভাইজার মোঃ মাহমুদ সেলিম বলেন, কিছুদিন আগে বিদ্যালয়ে গিয়ে কিছু শিক্ষার্থী পেয়েছিলাম কিন্তু পরীক্ষায় কেন একজন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি? 

আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ অলি আহাদ ম্যানেজ করে বিদ্যালয় চালানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, একাডেমিক সুপার ভাইজারকে ওই বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তিনি তো বিদ্যালয়ের এমন অবস্থার কথা বলেননি। তিনি আরো বলেন খোজ খবর নিয়ে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমি জেনেছি। তারপরও সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আমতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।