Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণে গিয়েছিলেন ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার্থী হরিহর আত্মার পাঁচ বন্ধু। সংরক্ষিত বনের ভেতরে আনন্দ-উচ্ছাসের মাধ্যমে তাদের কেটে যায় প্রায় দুই ঘন্টা। ফেরার সময় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত ঢাকা-সিলেট রেললাইনে আখাউড়া থেকে সিলেটগামী একটি ইঞ্জিনের ধাক্কায় প্রাণ হারান শ্রীমঙ্গল শহরের পাঁচ হরিহর আত্মার একজন শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার গণমাধ্যমকর্মী বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনের বাসার ভাড়াটিয়া প্রবাসী সুব্রত দে ও শ্রীমঙ্গল সাব রেজিস্টার অফিসের নকলনবীশ রিতা দে-এর একমাত্র ছেলে স্থানীয় ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের কৃতি শিক্ষার্থী সাম্য দে (১৬)। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেল গেইটের পাশে। নিহত সাম্য দে এর পৈত্রিক বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কালালপুর ইউনিয়নের বাসুদেবশ্রী গ্রামে। মায়ের চাকরির সুবাধে তারা সপরিবারে দীর্ঘদিন যাবত শ্রীমঙ্গল শহরে বসবাস করে আসছেন।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত সাম্য দে এর বন্ধু ফারহান আলম কান্না জড়িত কণ্ঠে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার্থী পাঁচ বন্ধু বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করি। বনে আমরা ঘুরাফেরার পর ছবি তোলার জন্য রেল ক্রসিংয়ের সামনে যাই। সেখানে ছবি তোলা শেষ করে ব্যাগ কাধে নিয়ে শহরের দিকে ফেরার প্রস্তুতি নেবার সময় হঠাৎ করে মোড়ে ট্রেনের ইঞ্জিন দেখতে পেয়ে আমরা চারজন দৌড় দিয়ে সাইডে চলে যাই। আমি লাফ দিয়ে পরে যাই রেল লাইনের বাইরে। ট্রেনের ইঞ্জিন আমাদের পাশ দিয়ে যাবার সময় একটি আওয়াজ শুনতে পাই। পরে আমি ওঠে সামনে গিয়ে দেখি অনেক লোকজন জড়ো হইছে। গিয়ে দেখি সাম্য রেল লাইনের পাশে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সাথে সাথেই তাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে চলে আসি। কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারলাম না।’
সাম্য দে-এর পরিবার যে বাসায় বসবাস করছেন সে বাসার মালিক গণমাধ্যমকর্মী বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বেড়াতে গিয়েছিল সাম্যসহ পাঁচ জন। রেললাইনের পাশে ছবি তোলার পর হঠাৎ ট্রেনের ইঞ্জিন আসলে সাম্য সে ইঞ্জিনের ধাক্কায় মারা যায়।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আজকে দুপুর দুপুর ঠিক ১টা ৫ মিনিটের দিকে একজনকে মুমুর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর আমাদের ডিউটিরত চিকিৎসক দেবাশীষ দত্ত তাকে পরীক্ষা করে দেখেন তার পালস্, পিপি কোন কিছু রেকর্ড ছিল না। মানে তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে খবর নিয়ে জানলাম সে লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে রেল এক্সিডেন্ট করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হয়তো সে ঘটনাস্থলেই অথবা হাসপাতালে আনার পথে মৃত্যুবরণ করেছে।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হলে আখাউড়া থেকে একটি নাইট ইঞ্জিন যার নম্বর ২৬১৫ সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। দুপুরে খবর আসে লাউয়াছড়া বনে একজন ওই ইঞ্জিনের ধাক্কায় আহত হয়। তাকে হাসপাতালে েিনয় আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থী সাম্য দে। দশম শ্রেণিতে তার রোল ছিল ৮। লেখাপড়ায় সে অত্যন্ত মনযোগি ছিল। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘আজ ১৯ ডিসেম্বর বেলা অনুমান ১২টা ২০ ঘটিকার সময় আখাউড়া থেকে সিলেটগামী একটি ইঞ্জিনের ধাক্কায় আমাদের রেলওয়ে থানার আওতাধীন লাউয়াছড়া এলাকায় শিক্ষার্থী সাম্য দে মারা যান। লাউয়াছড়ায় ৫ জন শিক্ষার্থী ঘুরতে আসছিলেন। পরে সাম্য দে কে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উক্ত বিষয়ে আমরা সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছি এবং একটি ইউডি মামলা দায়ের করেছি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্তা প্রক্রিয়াধীন।’