Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক নেতা নন। তাকে ভারত ফ্লাট করেছিল তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য। তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতের নির্দেশনায় যা-যা দরকার ছিল সব দিয়েছেন। দিয়ে দিয়ে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন আমি যা ভারতকে দিয়েছি ভারত কখনোই ভুলতে পারবে না। এটা কোন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের বক্তব্য হতে পারে না। আবার তিনি গর্ব করে বলতেন তার পিয়নে ৪০০ কোটি টাকা বানিয়ে হেলিকপ্টার চড়ে। এতে করে প্রমাণিত হয় শেখ হাসিনা আমাদের দেশের রাজনীতি যে কোথায় নিয়ে নামিয়েছে। শেখ হাসিনা ভারতের পুতুল। তাকে ভারত যেভাবে নাচায় সে সেভাবেই নাচে। ভারতের দালাল কে দেশবাসী এখন তা ঠিকই বুঝে গেছে। সে ভারতে পালিয়ে গিয়ে বলে ৫ আগস্ট নাকি দেশে আরও হানাহানি হতো। সেজন্য তিনি নাকি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কতবড় মিথ্যাচার, মিথ্যাবাদী। সে ক্ষমতা আকঁড়ে রাখার জন্যে শেষ সময় পর্যন্ত নির্বিচারে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালানোর নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু সেদিন তার নির্দেশনা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী পালন করেনি।’ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে মৌলভীবাজার পৌরসভা প্রাঙ্গনে আয়োজিত সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও প্রবাসী বিএনপি নেতা ফয়সল আহমেদ চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, মোশাররফ হোসেন বাদশা, এম এ মুকিত, আশিক মোশাররফ, মোহাম্মদ হেলু মিয়া, ফখরুল ইসলাম, বকসী মিছবাউর রহমান, মতিন বকস, আব্দুর রহিম রিপন, মনোয়ার আহমেদ রহমান, স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী, আবুল কালাম বেলাল, আনিসুজ্জামান বায়েস, যুক্তরাজ্যস্থ জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি শাহ সাইফুল আখতার লিখন, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ, পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব সরওয়ার মজুমদার ইমন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম নাসের রহমান বলেন, ‘এই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এজেন্ডা নিয়ে আসছিল। ভারত তাকে বলে দিয়েছিল তোমার প্রথম কাজ হলো বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বাহির করা। সে এটা করেছে। এর সাথে সাথে দেশের তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করার কথাও বলে। সেটাও করেছে। কারণ তার ভয় ছিল তত্ত¡াবধায়ক থাকলেতো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ভারত তাকে এও বলে দিয়েছে তুমি যদি ক্ষমতায় থাকতে চাও তাহলে আগে তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। অথচ এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থা আনার জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ১৬৪ দিন হরতাল আর অবরোধ করেছে। ওই সময় এ হরতাল অবরোধ করে দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি সাধন করেছে। শুধু তার ক্ষমতায় যাবার জন্য। যে মহিলা ১৬৪ দিন হরতাল অবরোধ করে এই মহিলাই আবার তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এটা কি কোন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের আচরণ হতে পারে? এদেরকেই দেশের মানুষ কুলাঙ্গার বলে ডাকে। এরা দেশের ভালো করার জন্য রাজনীতিতে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা কি একবারই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে? না একবার নয়, সে বহুবার পালিয়েছে। ১৯৮১ সালে ৩০ মে যেদিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সেদিন শেখ হাসিনা আখাউড়া বর্ডার দিয়ে দেশ ছেড়ে বোরকা পরে ভারতে পালিয়েছিলেন। এর পর ওয়ান ইলেভেনেও দেশে ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছিলেন। তিনি আবার দম্ভ করে বলতেন শেখ হাসিনা কখনো পালায় নাই, শেখ হাসিনা কখনো পালায় না। তাহলে ৫ আগস্ট কে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে? সেদিন খুনি হাসিনা ছাত্র জনতার অভ্যূত্থানের ভয়ে সাড়ে ১৫ বছর রামরাজত্ব করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। এ দেশটাকে ধ্বংস করার জন্য হিটলারের প্রেতাত্মা আওয়ামী লীগারদের মাঝে জন্মেছে। আর আওয়ামী লীগকে তার বাবাই কবর রচনা করে দিয়ে গিয়েছিল ১৯৭৫ সালে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয়বার পূণজন্ম দিয়েছিলেন। আজ তারা বলে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান নয়। তাহলে কে দিয়েছিল? তার বাবা দিয়েছিল? কেমন করে দিয়েছিল, বিডিআর এর তার বার্তা দিয়ে? ওয়্যারলেস দিয়ে। তো ওয়্যারলেস টু ওয়্যারলেস দুইটা ওয়্যারলেস দিয়ে যদি কথা হয় তাহলে সারাদেশের মানুষ স্বাধীনতার ঘোষণা জানালেন কিভাবে? ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বার বার স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোন নেতা মারা গিয়েছেন নাম বলেনতো? এরা বলতো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল। এদের দলে কি একজন বীর উত্তম, বীর বিক্রম,বীর প্রতীক আছে? একজনও নেই। তাহলে কিভাবে বলে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল। আর আমাদের দলে ৬ জন বীর প্রতীক, বীর উত্তম, বীর বিক্রম আছেন। আর আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা তিনি নিজেই বীর উত্তম ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন।’
নাসের রহমান আরও বলেন, ‘আগামী ২০২৫ সাল বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন অধ্যায় সৃস্টি হবে। যেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে দলটিকে গণহত্যকারী হিসেবে দেশবাসী চিহ্নিত করেছে এদের কিছু থাকবে না। এ গণহত্যাকারী দলটি দীর্ঘদিন দেশের মানুষের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল। আওয়ামী লীগ কখনোই জনগণের দল ছিল না। আওয়ামী লীগ ছিল পুলিশের দল, প্রশাসনের দল আর আদালতের দল। এ তিনটা পেলে তার জনগণের দরকার নেই। এ তিন দিয়েই সাড়ে ১৫টা বছর দেশে রাম রাজত্ব করে গেছে। শুধু রাম রাজত্ব নয়, দেশকে লুটেপুটে খেয়ে গেছে।’