lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৫
Last Updated 2025-01-11T06:40:08Z
ব্রেকিং নিউজ

শ্রীমঙ্গলে তিন দিনব্যাপী ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’ উদ্বোধন

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

দেশের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড’র উদ্যোগে ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় চায়ের রাজধানী ও পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’ নামে বিশাল এক উৎসব। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সংলগ্ন কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (গ্রেড-১) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. রেজা-উন-নবী, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সুদর্শন কুমার রায়। 

এবারের হামোনি ফেস্টিভ্যাল উৎসবে স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণের প্রদর্শনীসহ এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু সব খাবারের ৫০টি স্টল বসেছে। 

দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এবারের উৎসবে নৃ-তাত্তি¡ক জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া, গারো, মণিপুরি, ত্রিপুরা, সবর, খাড়িয়া, রিকিয়াসন, বাড়াইক, কন্দ, রাজবল্বব, ভূঁইয়া, সাঁওতাল, ওঁরাও, গড়াইত, মুন্ডা, কুর্মী, ভুমিজ, বুনারজি, লোহার, গঞ্জু, কড়াসহ শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা অংশ নিচ্ছেন। উৎসবে সবর জনগোষ্ঠী ‘পত্র সওরা নৃত্য’ ও ‘চড়ইয়া নৃত্য’, খাড়িয়া জনগোষ্ঠী ‘খাড়ি নৃত্য’, রিকিয়াসন জনগোষ্ঠী ‘লাঠি নৃত্য’, বাড়াইক জনগোষ্ঠী ‘ঝুমুর নৃত্য’, কন্দ জনগোষ্ঠী ‘কুই নৃত্য’, রাজবল্বব জনগোষ্ঠী ‘উড়িয়া নৃত্য, ভূঁইয়া জনগোষ্ঠী ‘ভূঁইয়া গীত’, সাঁওতাল জনগোষ্ঠী ‘লাগড়ে নৃত্য, ওঁরাও জনগোষ্ঠী ‘ওঁরাও নৃত্য’, গড়াইত জনগোষ্ঠী ‘গড়াইত নৃত্য’, মুন্ডা জনগোষ্ঠী ‘মুন্ডারি নৃত্য’, কুর্মী জনগোষ্ঠী ‘কুরমালি নৃত্য’, ভূমিজ জনগোষ্ঠী ‘ভূমিজ নৃত্য’, বুনারজি জনগোষ্ঠী ‘উড়িয়া ভজন’, লোহার জনগোষ্ঠী ‘ভুজপুরি রামায়ন কীর্তন’, গঞ্জু জনগোষ্ঠী ‘গঞ্জু নৃত্য’, কড়া জনগোষ্ঠী ‘কড়া নৃত্য’, খাসিয়া জনগোষ্ঠী ‘ঐতিহ্যবাহী পোশাক ডিয়া কেরছা ও মালা পরিধাণের মাধ্যমে নাচ-গান’, ‘তীর-ধনুক প্রতিযোগিতা’, ‘সীয়াট বাটু’ (গুলতি দিয়ে খেলা), ‘কিউ থেনেং’ (তৈলাক্ত বাঁশে উঠার প্রতিযোগিতা), ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ‘কাথারক নৃত্য’, ‘বেসু নৃত্য’, ‘জুম নৃত্য’, ‘গ্যারি পুজা’, ‘ক্যার পুজা’, ‘নক থাপেং মা পুজা’, ‘কাদং’ (রনপা), গারো জনগোষ্ঠী ‘জুম নৃত্য’, ‘আমোয়দেব’ (পুজা), ‘গ্রীক্কা নাচ’ (মল্লযুদ্ধ), ‘চাওয়ারী সিক্কা’ (জামাই-বৌ নির্বাচন), ‘চাম্বিল নাচ’ (বানর নৃত্য), ‘মান্দি নাচ’, ‘রে রে গান’, ‘সেরেনজিং’ (প্রেম কাহিনীর গান), মণিপুরী জনগোষ্ঠী ‘রাসলীলা নৃত্য’, ‘পুং চলোম নৃত্য’ (ঢোল নৃত্য), ‘রাধাকৃষ্ণ নৃত্য’ এবং সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য প্রদর্শন করা হবে। এছাড়াও খাসিয়া জনগোষ্ঠীর পান নিয়ে লাইভ পরিবেশনা, ত্রিপুরাদের কোমর তাঁত, মণিপুরিদের লাইভ তাঁত, চা ও রাবার প্রসেসিং, হোমস্টে, কুমারদের লাইভ মাটির জিনিসপত্র প্রস্তুত করা থাকছে।

এবারের জমজমাট উৎসবটি বিকেলে উদ্বোধন হলেও সকাল থেকেই এখানে আসতে থাকেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত¡ার লোকজন। পায়ে আলতা, বাহারি রঙের শাড়ি, খোঁপায় ফুল পরিধান করে বিভিন্ন জাতিসত্ত¡ার নারীরা নাচ ও গানে মুখরিত করে তোলেন চারপাশ। সঙ্গে ঢোল-করতাল-মাদল বাজিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে অংশ নেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পুরুষরাও। প্রথম দিনে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরেন এই উৎসবে।

আয়োজকেরা জানান, শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য, যেখানে টি ট্যুরিজম, ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজম, ব্যক ওয়াটার ট্যুরিজম, এথনো ট্যুরিজমসহ বিভিন্ন  ধরণের পর্যটন বিকাশের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে আগত ইন বাউন্ড ট্যুরিস্টদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতি বছর শ্রীমঙ্গল এবং সংলগ্ন এলাকায় ভ্রমণ করে থাকেন। হারমোনি ফেস্টিভ্যাল এ অঞ্চলে বিদ্যমান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনাচারের টেকসই রুপদান, ট্যুরিস্টদের অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের নতুন ট্যুরিজম প্রডাক্ট উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।