lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫
Last Updated 2025-01-30T10:39:57Z
অনিয়ম - দুর্নীতি

মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, পুনঃতদন্তেও স্বচ্ছতার প্রশ্ন

Advertisement


 


পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:


পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর কাজল ইউনিয়নের ছোট কাজল হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাময়িক বরখাস্ত সুপার আবু জাফর মো. ছালেহের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ-বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের পুনঃতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিযোগকারী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।


এর আগে, প্রথম তদন্ত যথাযথভাবে না হওয়ায় পুনরায় তদন্তের আবেদন করা হয়। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরিত তিন সদস্যের পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরজু আক্তার এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন গলাচিপা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবুল হোসেন ও ছোট কাজল হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো. শাহিন হোসেন।


বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগকারী, স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্য গ্রহণ করেন এবং অভিযোগের বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেন। তবে, এ তদন্ত নিয়েও উঠেছে স্বচ্ছতার প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত সুপারের কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি, এমনকি তার কাছে স্বপক্ষে কোনো ডকুমেন্টও চাওয়া হয়নি। এতে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগীরা।


অভিযোগকারীদের দাবি, মাদ্রাসার সুপার আবু জাফর মো. ছালেহ দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, জাল-জালিয়াতি ও ভূয়া সনদ ব্যবহার করে মোসাঃ মনিরা বেগম নামে একজনকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ। নিয়োগ-বাণিজ্য ও অবৈধভাবে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ লেনদেন। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ। মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা না থাকা এবং অস্বাভাবিক যাতায়াত বিল তৈরি করে অর্থ লোপাট। ভুয়া শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো, নিজে ক্লাস ফাঁকি দেওয়া ও দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থেকে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন। মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ অর্থ উপ-কমিটি না থাকা। ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়ম, ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া, ইনডেক্স জালিয়াতি ও রেজুলেশনে ওভাররাইটিং সহ নানান অভিযোগ। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে পত্রিকায়। স্কুল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন করেছে ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা দিয়েছে। কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে। ফলে সাময়িক বহিষ্কার হন মাদ্রাসা সুপার আবু জাফর মো. ছালেহ। এ নিয়ে একবার তদন্ত হলেও প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি জানান অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগীরা। ফলে পুনঃ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 


এ বিষয়ে অভিভাবক মাইনুল ইসলাম, আবুল কালাম ও মোশাররফ হোসেন বলেন, "আমাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সুপারের কাছে কোনো জবাবদিহিতা চাওয়া হয়নি। তাহলে এটা কেমন তদন্ত?"


বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও অভিযোগকারী মো. সাব্বির বলেন, "আমরা অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ দিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অভিযুক্তের বক্তব্য নেওয়া হয়নি। এতে তদন্ত একতরফা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা চাই, প্রকৃত সত্য উঠে আসুক এবং দোষী ব্যক্তির কঠোর শাস্তি হোক। এর আগের তদন্ত নিয়ে আপত্তি উঠেছিলো এখন এই পুন:তদন্ত যেন শুধু লোক দেখানো না হয়। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত প্রতিবেদন কীভাবে প্রকাশিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেয়।


অভিযুক্ত সুপার আবু জাফর মো. ছালেহ এর বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি এবং অসুস্থতার কথা বলে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।


এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির দুইজন সদস্য বলেন, "আমরা সরেজমিনে তদন্ত করেছি, অভিযোগের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছি ও বক্তব্য নিয়েছি। 


কমিটির আহ্বায়ক কৃষিবিদ আরজু আক্তার বলেন, "আমরা তদন্তের স্বার্থে অভিযোগের বিস্তারিত শুনেছি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছি। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করা হবে। যাচাই-বাছাই শেষে তদন্ত কমিটি বসে প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিবো। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, একতরফা তদন্ত হয়নি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়েছে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে।"