lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫
Last Updated 2025-01-13T13:56:47Z
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

শেষ হলো তিন দিনব্যাপী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উৎসব ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’

Advertisement


 

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী লোকজ গান, নাচ ও আকর্ষনীয় মেলার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হলো দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এ সম্প্রীতির মেলবন্ধনের সফল সমাপ্তি হয় রবিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে। উৎসবের শেষ দিনের শেষ লগ্নে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক সালেহা বিনতে সিরাজ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক সালেহা বিনতে সিরাজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে আরও গোছালো এবং বড় পরিসরে এ অঞ্চলের নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির এ উৎসব আয়োজন করা হবে।’ 

গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দেশে প্রথমবারের মতো শ্রীমঙ্গলে জমকালো ও বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে হারমোনি ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া। দেশের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড’র উদ্যোগে ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন হয় তিনদিন ব্যাপী উৎসবটি। দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এবারের উৎসবে শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র নৃ জনগোষ্ঠীর ২৬টি সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নিয়ে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরেন। উৎসবের প্রতিটি দিনে হাজার-হাজার মানুষের উপস্থিত হয়ে ক্ষুদ্র নৃ জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী লোকজ গান ও নাচ উপভোগ করেন। এবারের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার প্রতিযোগিতা, তীর-ধনুক খেলা, গুলতি খেলা (সীয়াট বাটু), কুমারদের লাইভ মাটির জিনিস তৈরি, ত্রিপুরাদের কোমর তাঁত প্রদর্শনী, মণিপুরীদের লাইভ তাঁত, চা ও রাবার প্রসেসিং এবং খাসিয়া জনগোষ্ঠীর পান নিয়ে লাইভ পরিবেশনা।

তিনদিন ব্যাপী এবারের উৎসবে স্থানীয় বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণের প্রদর্শনীসহ সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু সব খাবারের ৫০টি স্টল বসেছিল। উৎসবে নৃ জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া, গারো, মণিপুরি, ত্রিপুরা, সবর, খাড়িয়া, রিকিয়াসন, বাড়াইক, কন্দ, রাজবল্বব, ভূঁইয়া, সাঁওতাল, ওঁরাও, গড়াইত, মুন্ডা, কুর্মী, ভুমিজ, বুনারজি, লোহার, গঞ্জু, কড়াসহ শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার ২৬টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নিয়েছেন। তিনদিন ব্যাপী উৎসবে সবর জনগোষ্ঠী ‘পত্র সওরা নৃত্য’ ও ‘চড়ইয়া নৃত্য’, খাড়িয়া জনগোষ্ঠী ‘খাড়ি নৃত্য’, রিকিয়াসন জনগোষ্ঠী ‘লাঠি নৃত্য’, বাড়াইক জনগোষ্ঠী ‘ঝুমুর নৃত্য’, কন্দ জনগোষ্ঠী ‘কুই নৃত্য’, রাজবল্বব জনগোষ্ঠী ‘উড়িয়া নৃত্য, ভূঁইয়া জনগোষ্ঠী ‘ভূঁইয়া গীত’, সাঁওতাল জনগোষ্ঠী ‘লাগড়ে নৃত্য, ওঁরাও জনগোষ্ঠী ‘ওঁরাও নৃত্য’, গড়াইত জনগোষ্ঠী ‘গড়াইত নৃত্য’, মুন্ডা জনগোষ্ঠী ‘মুন্ডারি নৃত্য’, কুর্মী জনগোষ্ঠী ‘কুরমালি নৃত্য’, ভূমিজ জনগোষ্ঠী ‘ভূমিজ নৃত্য’, বুনারজি জনগোষ্ঠী ‘উড়িয়া ভজন’, লোহার জনগোষ্ঠী ‘ভুজপুরি রামায়ন কীর্তন’, গঞ্জু জনগোষ্ঠী ‘গঞ্জু নৃত্য’, কড়া জনগোষ্ঠী ‘কড়া নৃত্য’, খাসিয়া জনগোষ্ঠী ‘ঐতিহ্যবাহী পোশাক ডিয়া কেরছা ও মালা পরিধাণের মাধ্যমে নাচ-গান’, ‘তীর-ধনুক প্রতিযোগিতা’, ‘সীয়াট বাটু’ (গুলতি দিয়ে খেলা), ‘কিউ থেনেং’ (তৈলাক্ত বাঁশে উঠার প্রতিযোগিতা), ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ‘কাথারক নৃত্য’, ‘বেসু নৃত্য’, ‘জুম নৃত্য’, ‘গ্যারি পুজা’, ‘ক্যার পুজা’, ‘নক থাপেং মা পুজা’, ‘কাদং’ (রনপা), গারো জনগোষ্ঠী ‘জুম নৃত্য’, ‘আমোয়দেব’ (পুজা), ‘গ্রীক্কা নাচ’ (মল্লযুদ্ধ), ‘চাওয়ারী সিক্কা’ (জামাই-বৌ নির্বাচন), ‘চাম্বিল নাচ’ (বানর নৃত্য), ‘মান্দি নাচ’, ‘রে রে গান’, ‘সেরেনজিং’ (প্রেম কাহিনীর গান), মণিপুরী জনগোষ্ঠী ‘রাসলীলা নৃত্য’, ‘পুং চলোম নৃত্য’ (ঢোল নৃত্য), ‘রাধাকৃষ্ণ নৃত্য’ এবং সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য প্রদর্শন করা হয়। যা দর্শকদের তনোমন হরণ করে।